রবিবার ● ৭ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান ভূয়া সনদপত্রে চাকরি
এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান ভূয়া সনদপত্রে চাকরি
শামসুল আলম স্বপন, কুষ্টিয়া :: কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভাধীন সুলতানপুরের বাসিন্দা মৃত আবেদ আলী মন্ডলের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান। বর্তমান মিরপুর বাসষ্ট্যান্ডের পাশে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে আলিশ্বান বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। সেখানেই থাকেন দুই ছেলে ও স্ত্রীসহ স্বপরিবারে। এই মানুষটি হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা এলজিইডির ভারপ্রাপ্ত নকসাকার উপসহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান। যিনি ভূয়া সনদপত্রে চাকরি নিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর চাকরি করছেন এলজিইডিতে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে একাধারে ১০ বছরই আছেন নিজ এলাকা মিরপুরে।
শুধুমাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ সিদ্দিকুর রহমান নিজেকে প্রকোশলী হিসেবে দাবি করলেও এলজিইডি অফিস সুত্রে জানা যায় তিনি ড্রাফসম্যান । এখন সার্ভেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বর্তমান তিনি মিরপুর উপজেলা এলজিইডির ভারপ্রাপ্ত নকসাকার উপসহকারী প্রকৌশলীর হিসেবে কর্মরত । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তার সর্বসাকুল্যে বেতন/ভাতা ২৬ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তিনি দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন । যে টাকা তিনি বেতন/ ভাতাপান সে টাকা দিয়ে তার সংসার ১৫ দিনও চলার কথা নয় । কিন্তু তিনি চলেন রাজার হালে । সম্প্রতি ২ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে পালচার মটর সাইকেল কিনে দিয়েছেন তিনি। মিরপুর বাসষ্ট্যান্ডের পাশে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে আলিশ্বান বাড়ি বানিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান । এলাকাবাসীর প্রশ্ন তার এত টাকার উৎস্য কোথায় ?
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অবৈধভাবে টাকা কামানোর ভয়ংকর তথ্য। নকসাকার হলেও বিশেষ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মিরপুর এলজিইডির অধিকাংশ ঠিকেদারী কাজে গোপনে পার্টনার হিসেবেও কাজ করে থাকেন তিনি । বিশেষ করে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাক পল্টুর কাজ গুলো সিদ্দিকই দেখভাল করেন। কাগজ কলমে পল্টুর নাম থাকলেও নেপথ্যে কাজ করেন সিদ্দিকুর রহমান । এ অর্থবছরে ৮৩ লক্ষ টাকায় মিরপুর কলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ, ১ কোটি ১১ লাখ টাকায় পোড়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮৬ লাখ টাকায় খাদিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ল নির্মাণ কাজ, ১৪ লাখ টাকায় বারুইপাড়া ইউপি ভবন মেরামতের কাজ । ১৮/১৯ অর্থবছরে ৩৬ লক্ষ টাকায় কচুয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন কাজ যেন তেন ভাবে কাজ করে ঠিকাদারের সাথে লাভের টাকা ভাগাভাগি করে নেন এই কর্মচারি।
ওই সব কাজে ইট,বালি, সিমেন্ট,রডসহ সকল প্রকার নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করে থাকেন সিদ্দিকুর রহমান । নি¤œ মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে উন্নয়ন কাজ করা হলেও কেউ দেখার নেই,কিছু বলারও নেই । কারণ সিদ্দিকের রয়েছে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে চরম সখ্যতা। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই । আর এ সুযোগেই তিনি অবৈধ ভাবে কামিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা । অন্য ঠিকাদারের কাজ থেকেও তিনি হাতিয়ে নেন ঘুষ এমন কথা বলছে সংশ্লিষ্টরা ।
বারুইপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদার রহমান জানান, শুনেছি বারুই পাড়া ইউপি ভবন মেরামতের কাজ পেয়েছেন সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে নাজমুল হুসাইন আকাশ । মূল ঠিকাদারকে সাইডে কখনো দেখিনি। সিদ্দিকুর রহমানই কাজ দেখা শুনা করেছেন । কিন্তু কাজ সিডিউল মোতাবেক হয়নি। তা ছাড়া বেশ কিছু কাজ বাকি রেখে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । তিনি বলেন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবো আমি।
এ সব অভিযোগ নিয়ে সিদ্দিকুর রহমানের মুখোমুখি হই আমরা । প্রথমে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাইলে সিদ্দিক বলেন, ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে তিনি ১৯৯১ সালে তিনি এলজিইডিতে চাকরি নেন । প্রথম পোষ্টিং হয় কক্সবাজারে। ১৯৯৭ সালে তিনি খুলনা টিটিসি থেকে ৬ মাসের কোর্সে সার্ভেয়ার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন । ঠাকুর গাঁর রানী শংকাইল পলিকেটনিক থেকে তিনি ২ বছরের জন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করেন। তার এই সব সনদপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সকল সনদপত্র ঢাকার অফিসে জমা আছে । এখন আমি দেখাতে পারবো না । কি ভাবে তিনি নিজ এলাকায় ১০ বছর ধরে চাকরি করছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেন । তারা আমাকে বদলী না করলে আমি কি করবো ? এলজিইডিতে অনেক কর্মচারি আছে যারা নিজ এলাকায় যুগ যুগ ধরে চাকরি করছে ।
কোন উৎস্য থেকে তিনি এত টাকার মালিক হলেন জানতে চাইলে সিদ্দিক বলেন, তার বড় ছেলে ঠিকাদারী ব্যবসা করেন এবং ঢাকাতে তার অন্য ব্যবসা আছে । কত বছর ধরে ছেলে ঠিকাদারী ব্যবসা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বছরই প্রথম ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি কাজ পেয়েছে । এরপর তিনি বলেন, নিউজ করে কি লাভ ? ওসব বাদ দেন ভাই। সাংবাদিকরা আসলে আমরা খুশি করে দিই । তারা চলে যায় ।
এ ব্যাপারে মিরপুর এলজিইডি’র উপজেলা প্রকোশলী মিজানুর রহমান বলেন, সিদ্দিকুর রহমান দীর্ঘদিন একই ষ্টেশনে চাকরি করছেন কিন্তু তাকে বদলী করার ক্ষমতা আমার নেই ।ওটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাজ । তা ছাড়া সিদ্দিক স্থানীয়, আমি অন্য জেলার মানুষ ।
কুষ্টিয়া এলজিইডির একজন নির্বাহী প্রকৌশলী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, মুলত: এলজিইডির চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। যে যার মত ব্যস্ত । অনিয়ম -দুর্নীতি এখন এলজিইডিতে নিয়ম নীতিতে পরিনত হয়েছে । সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে কিন্তু কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এখন সে বে-পরোয়া ।
এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ খান বলেন, এলজিইডির কোন কর্মকর্তা -কর্মচারির বিরুদ্ধে অনিয়ম -দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষনিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে । তদন্তে অনিয়ম -দুর্নীতি ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা ।