রবিবার ● ৭ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » মৃত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রে একাধিক চালের কার্ড
মৃত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রে একাধিক চালের কার্ড
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: লাইলী বেগম মারা গেছেন ১০/১২ বছর আগে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটী ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের স্ত্রী তিনি। অথচ এই মৃত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (৪৪১১৯৫২০৯০৪৯৫) ব্যবহার করে মধুহাটী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি ১০ টাকা কেজি দরের চাল উত্তোলন করছেন। মুসলিম জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে হিন্দু ও হিন্দু ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে মুসলমানদের তালিকা করা হয়েছে। এক গ্রামের জাতীয় পরিচয়পত্র অন্য গ্রামে ব্যবহার করা হয়েছে। নারীর আইডি দিয়ে পুরুষ আর পুরষের আইডি ব্যবহার করে নারীর চালের কার্ড বানানো হয়েছে। এ ভাবে ওই ইউনিয়নে ১০/১২ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অর্ধশত ব্যক্তির চালের কার্ড করা হয়েছে। চেয়ারম্যান, কতিপয় মেম্বর ও দুই ডিলার বছরের পর বছর ধরে জাল জোচ্চুরির মাধ্যমে গরীব মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত এই চাল নামে বেনামে তুলে নিচ্ছেন। ইউনিয়নের দুই ডিলার নয়ন ও ইন্তা ওজনেও কম দিচ্ছেন বলে উপকারভোগীরা অভিযোগ করেন। সুনিদ্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত করে এই দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে। এদিকে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর মধুহাটী ইউনিয়নের কুবিরখালী গ্রামের রফিকুল ইসলাম নুরুল ইসলাম ও দুর্গাপুর গ্রামের বদর উদ্দীন লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর চালের কার্ড হারানার গন জিডি করা হয়েছে ঝিনাইদহ সদর থানায়। দুর্নীতি, অপকর্ম ও একজনের চাল অন্যজন তুলে নেওয়ার তথ্য আড়াল করার জন্য এই জিডি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত অভিযোগ তদন্তে রোববার মধুহাটী ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি অভিযোগকারীদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। অনেকেই তার কাছে চাল পাচ্ছেন না বলে অবিযোগ করেন। তবে মধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ জুয়েল বলেছেন, ১২৪১টি তালিকা করতে গিয়ে কম্পিউটারে টাইপিং মিসিং হতে পারে। এ গুলো সংশোধন করে বাদ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন তদন্ত করে জানা গেছে, ১০/১২ আগে মারা যাওয়া মৃত লাইলী বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে গোপালপুরের আব্দুলের ছেলে আমিরুল, একই গ্রামের রুহুল আমিনের স্ত্রী রেশমা খাতুন, আইয়ুব হোসেনের ছেলে মিন্টু মিয়া, মির্জাপুর গ্রামের ইসমাইলের ছেলে আক্তার হোসেন, নওদাপাড়া গ্রামের বিশারতের ছেলে মোশারেফ, বদর উদ্দীনের ছেলে নুর ইসলাম, কুবির খালী গ্রামের বুদোই মন্ডলের ছেলে কলিম উদ্দীন, একই গ্রামের জাবেদ আলীর স্ত্রী শাহেদা বেগম, ওয়াড়িয়া গ্রামের হালদারের ছেলে সম্ভু হালদার ও একই গ্রামের বদরের ছেলে বাবলুসহ একাধিক ব্যাক্তির নামে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির ১০ টাকা কেজি দরের চালের কার্ড হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সার্ভয়ারে লাইলী বেগমকে মৃত দেখানো আছে। তার জন্ম সাল ১৯৪০। এদিকে মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যাবহার করে চাল পাচ্ছেন লাইলী বেগমের ছেলে আবুল হোসেন আবুও। আবুলের নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। লাইলী বেগমের পরিবার একজন মৃত মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে একাধিক ব্যাক্তির নামে চাল তোলার খবরটি শুনে বিস্মিত হন। মৃত লাইলী বেগমের পুত্রবধু আকলিমা খাতুন ও পোতা ছেলে আল আমিনের ভাষ্য এই অন্যায় কাজ যারা করেছে তাদের শাস্তি হোক। গোপালপুর গ্রামের শুধু মৃত লাইলী বেগমই নন ওই গ্রামের দত্তপাড়ার শচিন্দ্র নাথ দত্তের ছেলে অশোক কুমার দত্ত তিন বছর ধরে ঢাকার গাজীপুর চান্দুরা এলাকায় থাকেন। তার নামে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির চালের কার্ডও রয়েছে। তিনি এই কার্ডে চাল উত্তোলন না করলেও প্রতি মাসে তার নামের চাল কে বা কারা তুলে নিচ্ছে। অথচ অভাবের তাড়নায় দুই ছেলে অসিম ও নয়নকে নিয়ে অশোক দত্ত ঢাকায় চলে গেছেন। লেখাপড়া ছেড়ে তার দুই ছেলে এখন গার্মেন্টস কর্মী। মুঠোফোন কথা বলতে গিয়ে আশোক ও তার স্ত্রী শিখা রানী দত্ত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা বলেন, চরম অভাবের তাড়নায় দুমুঠো ভাতের জন্য আমরা গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসেছি। অথচ আমাদের নামে কে বা কারা চাল তুলে খাচ্ছে আমরা নিজেরাও জানি না। অশোক দত্ত জানান, ২/৩ বছর আগে প্রতিবেশি চিত্ত দত্তের ছেলে বিপুল তার চালের কার্ড করে দিবেন বলে ছবি নেন। তার নামে কার্ড হলেও তিনি প্রতি মাসের ৩০ কেজি খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির চাল পাচ্ছেন না বলে জানান অশোক। গ্রামে গিয়ে দেখা যায় অশোকের ফ্লাট বাড়িটি অযতেœ পড়ে আছে। নিজের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব কিছু বিক্রি করলেও অবশিষ্ট ওই বাড়িটুকু আছে বলে স্ত্রী শিখা রানী দত্ত জানান। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, অশোকের জাতীয় পরিচয়পত্র (৪৪১১৯৫২১৯২৯৩৪) ব্যাবহার করে তার ছোট ভাই তপন দত্ত ও বোন জোছনা রানীসহ চোরকোল গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রমজান আলী, একই গ্রামের এজের আলীর ছেলে দশর আলী এবং মামুনশিয়া গ্রামের ইউসুফের ছেলে তক্কেল ও একই গ্রামের ইসরাফিলের স্ত্রী আকলিমা ১০ টাকা কেজি দরের চালের কার্ড হয়েছে। এছাড়া গোপালপুর গ্রামের মোজাম্মেল হকের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্র (৪৪১১৯৫২১৯১৯২২) ব্যবহার করে ওয়াড়িয়া গ্রামের এজের আলীর ছেলে তাইজেল, চোরকোল গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে বিপুল, আকবর আলীর ছেলে বরকত আলী, পানি মুন্সির ছেলে আরজান, নওদাপাড়া গ্রামের আহম্মেদ মন্ডলের স্ত্রী জাহেদা খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র (৪৪১১৯৫২১৯২৭৮১) ব্যবহার করে চোরকোল গ্রামের জামায়াত আলীর ছেলে রইচ, একই গ্রামের গোলক কুমারের ছেলে শ্রী বিমল কুমার, গোপালপুরের আব্বাসের ছেলে আইয়ূব, মাহাতাবের ছেলে ডালিম, গোপালপুরের আইয়ুব আলীর ছেলে মনিরুলের জাতীয় পরিচয়পত্র (৪৪১১৯৫২১৯২২৮৯) ব্যবহার করে সুধীর কুমারের ছেলে তপন কর্মকার, গোপালপুরের আনারুদ্দীনের ছেলে গাজিরুদ্দীন, নওদাপাড়ার সেকেল আলীর ছেলে শফি মুন্সি, একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে লিখন ও কুবির খালী গ্রামের মসলেমের ছেলে মোশাররফ। গোপালপুর গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে সজিবরের জাতীয় পরিচয়পত্র (৪৪১১৯৫২১৯২৯৯৯) ব্যবহার করে ৪ জন, মনিরুদ্দীন মোল্লার ছেলে সাহেব আলীর জাতীয় পরিচয়পত্র (৪৪১১৯৫২১৯১৯৯৯) ব্যবহার করে ৪ জন, আব্বাস মন্ডলের ছেলে আইয়ুব হোসেনের ভোটার আইডি (৪৪১১৯৫২১৯১৫৮০) ব্যবহার করে ২ জন, বেড়াশুলা গ্রামের আব্দুল কাদের মন্ডলের ছেলে রবিউল ইসলামের ভোটার আইডি (৪৪১১৯৫২১৯৫৯২৭) ব্যবহার করে ২ জনের চাল তোলা হচ্ছে। এদিকে ৪৪১১৯৫২১৯১১৮৩ নাম্বারের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে গোপালপুরের আক্কাস আলীর ছেলে আশরাফুল, আব্বাস আলীর ছেলে মনোয়ার, মইনের ছেলে আলতাফ, চোরকোলের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী মেহের বিবি, শফিকুল ইসলামের ছেলে ফেরদৌসি খাতুন, নওদাপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে ইয়াছিন ও আটলিয়া গ্রামের আসাদুল ইসলামের ছেলে শিমুলসহ একাধিক ব্যক্তির নামে কার্ড করে চাল তুলে নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত করে দেখা গেছে মহামায়া গ্রামের মঙ্গল সরদারের মেয়ে সুন্দরী খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র কুবিরখালী গ্রামের মানিকের ছেলে স্বপন কুমারের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্য বান্ধবের তালিকায় যার নাম ছিল ৩৯৪ ক্রমিকে। কুবিরখালী গ্রামের রমজান আলীর স্ত্রী শেফালী খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র নং দেখানো হয়েছে ৪৪১১৯৫২০০০০১৬। ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিসে এই নাম্বারের কোন তথ্য মেলেনি। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রটি ভুয়া। মহামায়া গ্রামের ছামছদ্দিন মন্ডলের ছেলে মিঠুন মন্ডলের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়েছে শান্তিপদর ছেলে বাদলের নামে। বেড়াশুলা গ্রামের কালু মোল্লার ছেলে ওয়াদুদ মোল্লা নিজে এই চাল নিয়মিত পাচ্ছেন। তারপরও ওয়াদুদ মোল্লার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চাল তুলছেন নওদাপাড়া গ্রামের আখের আলীর ছেলে আব্দুল মালেক। কামতা গ্রামের ছামছুদ্দিন মোল্লার ছেলে ফারুকের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চাল তুলছেন নাটু মন্ডলের ছেলে ফজলুর রহমান। বেড়াশুলা গ্রামের নাজমুল হুদার স্ত্রী জেলেনা খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নওদাপাড়া গ্রামের আবু সাইদরে ছেলে ছানারুদ্দীন। বেজিমারা গ্রামের সামেদ আলীর ছেলে আবুল হোসেনের তালিকায় নাম রয়েছে ৬৩৯ নাম্বারে। প্রতি মাসে তার নামে চাল উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই কথা জানালেন বেজিমারা গ্রামের রেশমা ও মহামায়া গ্রামের ইন্তাজ আলী। আলফাজ উদ্দীনের ছেলে শরিফুলের নামে গোপালপুর ও নওদাপাড়ায় চাল উত্তোলন হচ্ছে। তালিকায় তাদের নাম্বার যথাক্রমে ৫০৫ ও ১১৮১। কিন্তু তারা চাল পাচ্ছেন না। মধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ জুয়েল (০১৭৩৩-৪৬৯৯৪৪) বিষয়টি নিয়ে জানান, তড়িঘড়ি করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছিল আমি নির্বাচিত হওয়ার ১৫ দিন পর। তাই তালিকা করতে গিয়ে কিছুটা ভুলত্রুটি হয়েছে। এখন বাদ দিয়ে সঠিক তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন এগুলো দেখার দায়িত্ব চেয়ারম্যানের তো একার না। খাদ্য কর্মকর্তা, ট্যাগ অফিসার ও ডিলাররা তো বিষয়গুলো যচাই বাছাই করে দিতে পারেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অভিযোগ নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা শুভ জানান, তার নজরেই এই অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তিনি বলেন এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছেন। রোববার তদন্ত করতে একজন ম্যাজিষ্ট্রেট ঘটনাস্থলে গেছেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মধুহাটী ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফুল আলম জানান, অভিযোগকারীরা বিষয়টি আমাকে জানালে আমি নিজে তদন্ত করে দেখেছি চালের কার্ড করার পক্রিয়াটি খবুই অসচ্ছ ছিল ও দুর্নীতি করা হয়েছে। তিনি বলেন, রোববার তদন্ত কমিটির সামনেই ভুক্তভোগীরা বক্তব্য দিয়েছেন। তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় সেটাই ইউনিয়নবাসি তাকিয়ে আছে।
দত্তনগর বীজ ফার্মে আড়াইশো একর জমির ১০ লক্ষাধীক টাকার ধানের খড় গোপনে বিক্রি
ঝিনাইদহ :: এশিয়ার বৃহত্তম হিসাবে খ্যাত দত্তনগর বীজ ফার্মে এবার আড়াইশো একর জমির ১০লক্ষাধীক টাকার ধানের বিচালী ও খড় গোপনে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে এক উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে। কোন প্রকার কোটেশন,নিলাম, টেন্ডার ছাড়াই বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে এসব বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে প্রায় ৩ কোটি টাকার ধানবীজ গোপনে পাচার করার দায়ে ফার্মটির ৪উপ-পরিচালক সাময়িক বরখাস্ত হয়। এদিকে ধানের বিচালী ও খড় বিক্রি করার ব্যাপারে মথুরা বীজ উৎপাদন খামারের অভিযুক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মজিবর রহমান খান জানিয়েছেন নিজস্ব মেশিনে পানিতে পড়া ধান কাটতে না পারায় ভাড়া মেশিনে ধান কাটার মূল্য পরিশোধ করতে খড়-বিচালী নামাত্র মূল্যে কিছু বিক্রি করা হয়েছে, যা জুনে সমন্বয় করা হবে। ঝিনাইদহের মহেশপুরের দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামার এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম হিসাবে খ্যাত । প্রায় ৩হাজার একর জমির উপর এ খামারটিতে ৫টি ফার্ম রয়েছে। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে এখানে ধান, আলু সহ বিভিন্ন শস্যবীজ উৎপাদন করা হয়। অফিস, বাসভবন সহ বিশাল অবকাঠামো রয়েছে এখানে। একজন যুগ্ম পরিচালক, ৫জন উপ-পরিচালক, ম্যানেজার সহ কর্মচারী রয়েছে এ খামারে। তবে ইতিহাসখ্যাত এ খামারে দুর্ণীতি যেন ক্রমেই আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এখানকার ৪ উপ-পরিচালক প্রায় ৩ কোটি টাকার ধানবীজ গোপনে পাচার করার দায়ে বরখাস্ত হয়। আর এবার ৫টি খামারের একটি মথুরা বীজ খামার থেকে চলতি মৌসুমের আড়াইশো এক জমির ধানের বিচালী ও খড় ৪ হাজার টাকা একর দরে বিক্রি করা হয়েছে স্থানীয়দের কাছে। স্থানীয়রা বলছে কোনরকম কোটেশন, নোটিশ, টেন্ডার ছাড়াই ইচ্ছামাফিক এসব করা হয়েছে। দত্তনগর ফার্ম এলাকার বসতী মারুফ হোসেন জানান, ৪০ হাজার টাকা দিয়ে এবার মথুরা ফার্মের উপ-পরিচালক মজিবর রহমান খানের কাছ থেকে বিচালী কিনেছেন তবে ৫হাজার টাকা বাকী থাকায় তাকে হয়রানী করার চেষ্টা করে চলেছে। স্থানীয় আরো কয়েকজন জানিয়েছেন, নানা অনিয়ম চলে আসছে ফার্মে। এতবছর শুনেননি যে খড়-বিচালীও বিক্রি করা হয় তবে এবার সে কান্ডই ঘটেছে। তারা এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ এসব খড়-বিচালী ফার্ম এলাকার মানুষের মধ্যে ফ্রী দেবার কথা। ফার্ম স্থাপনের সময় যাদের জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে তখনই শর্ত ছিল জনস্বার্থে স্থাপিত এ ফার্মে স্থানীয়রা অগ্রাধিকার পাবে, অথচ এর কিছুই মানেন না কর্মকর্তারা এলাকাবাসী বলছে খড়-বিচালী গরুর খাবার, পানের বরজ, তামাক পোড়ানো সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ ব্যবহার করে। স্থানীয়ভাবে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। এশিয়ার বৃহত্তম খ্যাত দত্তনগর বীজফার্মের মথুরা খামারের উপ-পরিচালক মজিবর রহমান খােেনর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ উঠেছে তিনি নিজে বাসাতে গরু পালন করেন, যা খুবই মোটা তাজা অথচ ফার্মের গরুগুলো রুগ্ন ও মরনাপন্ন অবস্থায় বেঁচে আছে। তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাখে খারাপ আচরনের অভিযোগও উঠেছে। এমনকি সংবাদকর্মীদের সাথেও তিনি কথা বলতে চান না বলে সংবাদকর্মীদের অভিযোগ। এদিকে খড়-বিচালী বিক্রি সহ নানা অভিযোগ ওঠা মথুরা বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: মজিবর রহমান খান দাবি করছেন জরুরী ভিত্তিতে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটতে নিজস্ব মেশিনে সমস্যা হওয়ায় ভাড়া মেশিনে ধান কাটার মূল্য পরিশোধ করতে খড়-বিচালী নামাত্র মূল্যে কিছু বিক্রি করা হয়েছে, আরো বিচালী পড়ে আছে। যা সাধারণ মানুষ ফ্রী নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নানা অনিয়মে জর্জরিত মথুরা খামারের পাশ্ববর্তী খামারটির সহকারী পরিচালক মাইনুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের খামার সবচেয়ে নীচু হওয়া স্বত্তেও এবার খামারের ধান নিজস্ব মেশিনেই কেটেছেন এবং কোন খড়-বিচালী বিক্রি করেন নি। এসব বিক্রি করা হয় না ।
চেতনানাশক স্প্রে করে নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীকোল গ্রামের বারেক আলীর ছেলে জান্নাত আলী (৩০) এর নামে, চেতনানাশক স্প্রে মুখে দিয়ে তারই বাসার ভাড়াটিয়ার নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাই ওই নাবালিকার মা আনোয়ারা বেগম (৩৬) বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। শনিবার (৬জুন) এ ঘটনায় লিখিত এজাহারে বাদী আনোয়ারা বেগম পুলিশকে জানিয়েছেন, বিবাদী জান্নাত আলী আমার বাসার মালিক। অনুমান দেড় মাস যাবত বিবাদীর বাসাতে ভাড়াটিয়া হিসেবে তিনি ৩ কন্যাসহ ভাড়া রহিয়াছে। পরের বাড়িতে কাজ করে আমি জীবিকা নির্বাহ করি। সেই সুবাদে কাজের কারণে আমিও আমার বড় কন্যা মোছা: সুরাইয়া খাতুনকে নিয়ে প্রতিদিন সকাল অনুমান ৮ ঘটিকায় বাড়ি হইতে বাহির হইয়া যায়। সেই সুযোগে বিবাদী আমার নাবালিকা কন্যা মোছাম্মদ সুমাইয়া খাতুন কে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে ও কুপ্রস্তাব দেয়। আমার কন্যা বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিবাদী তার অনৈতিক লালসা চরিতার্থ করার জন্য সে আমার কন্যার মুখে চেতনানাশক ওষুধ স্প্রে করে অজ্ঞান করে। গত ইংরেজি ২৪-৫-২০২০ তারিখ সকাল অনুমান ১০ ঘটিকার সময় তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। কন্যার জ্ঞান ফিরলে বিবাদী কন্যাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বলে, এই কথা যদি কাউকে বলিস তবে তোকে খুন করে ফেলবো। আমার নাবালিকা কন্যা ভয়ে বিষয়টি কাউকে কিছু না বলিলে বিবাদী জোরপূর্বক আমার কন্যাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় একাধিকবার ধর্ষণ করিতে থাকে। ইংরেজি ৩০-৫-২০২০ তারিখে বাড়িতে কেহ না থাকার সুযোগে বিবাদী আমার কন্যাকে অনৈতিক কাজের কথা বলিলে আমার কন্যা বিবাদীর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিবাদী ধারালো ছুরি গলায় ধরে হত্যার হুমকি প্রদর্শন করে কন্যাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ইহাতে আমার কন্যা একাধিক বার বমি করে ও মাথা ঘোরার কথা বললে আমি ঘটনার বিষয়ে কন্যার নিকট জানতে পারি বিপদের কারণে বর্তমান আমার কন্যা অন্তঃসত্ত্বা। ঘটনার বিষয়ে অনেকেই অবগত আছে। বর্তমানে বিবাদী আমার ও আমার কন্যাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে বলিতেছে এই নিয়ে যদি কোন বাড়াবাড়ি করিস তবে তোদের কে জানে মেরে ফেলবো। বিবাদী অত্যন্ত খারাপ ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। উক্ত বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিবাদী আমার ও আমার কন্যাকে খুন-জখম সহ যেকোনো ধরনের ক্ষতি করতে পারে। এমতাবস্থায় আমাদের আইনি সহায়তা একান্ত প্রয়োজন। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি (তদন্ত) এমদাদুল হক বলেন, এ বিষয়ে ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এটা দ্রুত তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরকারি গাছ কেটে জ্বালানী বানাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন
ঝিনাইদহ :: বড় অর্জুন গাছের গুড়ি কুড়াল ও করাত দিয়ে কাটছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, সামনেই দাঁড়িয়ে তা দেখছেন উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তারেক হাসান ভুঞা, স্টেশন অফিসার দিলীপ কুমার সরকার ও সাব-স্টেশন অফিসার রউফ মোল্লা। চিত্রটি ঝিনাইদহ সদর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের। এভাবে করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টির পর গেল প্রায় ২ মাসের বেশী সময় ধরে গোপনে স্টেশনের প্রায় ২০ টির বেশী আম, মেহগনি, অর্জুন, আমলকি, নারিকেল সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে বড় বড় ৪ টি সহ ৭ টি গাছ সম্পূর্ণ কাটা হয়েছে। বাকিগুলোর বড় ও ছোট ডাল কাটা হয়েছে যা স্টেশনের মেছের জ্বালানীর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। একেবারে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে স্টেশন চত্বরের ফুল বাগান। স্টেশনের সাবেক ডিএডি (বর্তমানে এডি কুষ্টিয়া) রফিকুল ইসলামের লাগানো আমলকি গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। স্টেশন চত্বরের ফুল বাগান সংলগ্ন গাছে ঘুঘু সহ বিভিন্ন পাখি ডিম পাড়তো বাচ্চাও ফুটতো। কিন্তু এখন চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন। পাল্টে গেছে পরিবেশ। গাছ কাটতে দেখা এক প্রত্যক্ষদর্শী মাসুদ জানান, বেশ কিছুদিন আগে দেখলাম সড়ক ভবনের পাশে ফায়ার সার্ভিসের ভিতরে একটি মেহগনি গাছ ৪/৫ জন এসে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে নিয়ে গেল। একটা বড় অর্জুন গাছও সম্পূর্ণ কেটে খড়ি বানিয়ে নিল। বিভিন্ন সময়ে লোকজনের চোখ ফাকি দিয়ে গোপনে কাটা এসব গাছ ও গাছের ডাল নিজেদের কর্মীদের দিয়ে এবং স্থানীয় ছ-মিল থেকে খড়ি করে সেগুলো ব্যবহার করছে জ্বালানীর কাজে। অনেক খড়ি এখনও রেখে দেওয়া হয়েছে ডিএডি অফিসের ছাদে। স্থানীয় ছ-মিলের শ্রমিকরা জানান, ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে করে কয়েকজন এসে ৩০ সিএফটি কাঠ খড়ি করে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বড় একটি অর্জুন গাছ ছিল। ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি সাইয়েদুল আলম জানান, ফায়ার সার্ভিসের মত সেবামুলক প্রতিষ্ঠানে যদি বিনা অনুমতিতে এভাবে সরকারি গাছ কাটা হয় তাহলে স্বচ্ছতার আর জায়গা থাকে না। আমাদের দাবি, ঝিনাইদহবাসীর দাবি বিষয়টি তদন্ত করে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করবে অধিদপ্তর। তবে কাটা গাছ ও গাছের অংশ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এর বেশী কিছু বলতে পারবোনা বলে জানান স্টেশনের সাব-অফিসার রউফ মোল্লা। আর কিছুই জানেন না বলেন স্টেশন অফিসার দিলীপ কুমার সরকার। ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সরকারি গাছ কেটে জ্বালানী বানাচ্ছে কর্মকর্তারা খড়ি রেখে দেওয়া হয়েছে ডিএডি অফিসের ছাদে নিজের নেতৃত্বে কেন সরকারি গাছ কাটা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে উত্তেজিত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের জেলা উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তারেক হাসান ভুঞা জানান, এ বিষয়ে আমাকে কেন আপনি জিজ্ঞাসা করছেন। আপনার তো জানতে চাওয়ার কথা না। অন্য কোন গাছ কাটা হয়নি। শুধু ঘূর্ণিঝড় আম্পানে হেলে পড়া একটি অর্জন গাছ কেটে এডি স্যার, ডিসি স্যারের অনুমতিতে খড়ি করা হয়েছে। ঝিনাইদহের দায়িত্বে থাকা যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক (এডি) মতিয়ার রহমান জানান, ফায়ার স্টেশনের গাছ কাটা হচ্ছে, জ্বালানী বানানো হচ্ছে এ বিষয়ে তো আমি কিছুই জানি না। আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি। এর আগে স্টেশনে গিয়েছি তবুও তো কেউ কিছু বল্লো না। স্টেশনের গাছ কেটে তারা কোন ভাবেই জ্বালানী বানাতে পারে না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম, গিয়ে বিষয়টি দেখবো। জেলা বন কর্মকর্তা ও সরকারি গাছ কাটা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন জানান, সরকারি গাছ নিজস্ব ভাবে কাটা, খড়ি করা কিংবা অন্য কোন কাজে ব্যবহারের কোন বিধান নেই। কেউ ইচ্ছা করলেই তা করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় যেটা করেনি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এটা অত্যন্ত দু:খজনক বিষয়। জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, ফায়ার স্টেশনের গাছ কাটার বিষয়ে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। সামনের সমন্বয় সভায় বিষয়টি আলোচনা করে, ঘটনা পরিদর্শন শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো হবে। এছাড়াও নানা স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে চলছে স্টেশনটি। স্টেশন অফিসার ও উপ-সহকারী পরিচালক(ডিএডি) এর থাকার জন্য দ্বিতল-একটি আবাসিক ভবন রয়েছে। কিন্তু জেলায় জয়েন্ট করার পর থেকেই আবাসিক ভবনে না উঠে পরিদর্শন বাংলোতে থাকেন ডিএডি তারেক হাসান ভুঞা ও ডিএডি অফিস সংলগ্ন একটি কক্ষে ২০১৬ সাল থেকেই থাকছেন স্টেশন অফিসার দিলীপ কুমার সরকার। সরকারি নিয়ম রয়েছে আবাসিক ভবন ব্যতীত অন্য পরিদর্শন বাংলো কিংবা অন্য স্থানে থাকতে হলে সরকার নির্ধারিত ভাড়া সরকারি খাতে জমা দিতে হয়। এই ভাড়ার টাকাও সরকারি খাতে জমা দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঝিনাইদহে সামাজিক দূরত্ব মানছে না
ঝিনাইদহ :: করোনা সংক্রমণ রোধে ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গত ৩১ মে থেকে খুলে দেয়া হয়েছে অফিস, আদালত। চলছে গণপরিবহনও। পাশাপাশি বিপণী বিতান, হাট, বাজারে সাধারণ মানুষকে যাতায়াত ও কর্মকান্ড পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার কিন্তু ঝিনাইদহে রাস্তায় লেগুনা, ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রায় চলাচলরত যাত্রীদের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মোটেও মানা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে ঝিনাইদহ জেলাকে গ্রীণ জোন হিসাবে চিহিত করায় ও লোকডাউন না দেওয়ায় জনসাধারন সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ইজিবাইকে চালকসহ ৬ জন, মাহিন্দ্রায় চালকসহ ৫-৬ জন পর্যন্ত মুখে মাকস ব্যবহার না করে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। অপরদিকে গত সোমবার থেকে সারাদেশের ন্যায় ঝিনাইদহে বাস চলাচল শুর হয়েছে। পূর্বের ভাড়ার সাথে সরকার ঘোষিত ৬০ ভাগ বৃদ্ধি করে প্রতিটি রুটে বাস ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে। সেখানে বাস কর্তৃপক্ষ আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিচ্ছেন এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে বাসের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছেন। সরেজমিন ঝিনাইদহের শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, হামদহ সড়ক, আরাপপুর, চাকলাপাড়া,মডার্ণমোড়,বাইপাস সড়ক সহ বিভিন্ন সড়ক মহাসড়ক প্রদক্ষিন করে দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই লেগুনা, ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রায় যাত্রীরা চলাচল করছেন। এক্ষেত্রে যাত্রী বা চালক কারও কোন প্রকার বাধা নেই। এ বিষয়ে লেগুনা ইজিবাইক-মাহিন্দ্র চালক ও যাত্রীদের কাছে জানতে চাইলে চালকরা বলেন, ২/৩ জন যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছালে সারাদিন যে টাকা আয় হবে, তা মহাজনদের দিতে গেলেও কম হবে। তাহলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে খাব কি? এ বিষয়ে যাত্রী নাজমুল হোসেন বলেন, ২/৩ জন যেতে হলে দিগুণ ভাড়া গুণতে হবে, তাই বিপদ জেনেও এভাবে চলাচল করছেন তারা। অপরদিকে ঝিনাইদহ শহর ও শহরের বাইরে গিয়ে দেখা গেছে, সেখান থেকে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া বাসে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিচ্ছেন। সরকার ঘোষিত ৬০ ভাগের অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। এ বিষয়ে যাত্রীদের সাথে কথা বললে অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সহ- সাধারন সম্পাদক সদর উদ্দীন মিয়া বলেন, সরকার যে টাকা নির্ধারণ করেছেন, আমরা সে মোতাবেক যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছি। তাছাড়া আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়েই বাস ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার নির্দেশিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সব কিছু করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব বদরুদ্দোজা শুভ সাংবাদিকদের জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গণপরিবহনে চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠে মোবাইল টিম কাজ করছেন।
কালীগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযানে ফেন্সিডিলসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩১ বোতল ফেন্সিডিলসহ আল মামুন (২৫) ও শাওন ইসলাম (১৯) নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে। রোববার ভোর রাতে উপজেলা বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। কালীগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, মাদক পাচারের গোপন সংবাদ পেয়ে থানার এসআই জাকারিয়া মাসুদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে অভিযান চালায়। সে সময় পশ্চিম বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাখাওয়াত শেখের ছেলে আল মামুন ও দাদপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে শাওন ইসলামকে ফেন্সিডিল পাচারের সময় ৩১ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটক করা হয়। কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, মাদক পাচারের গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিশ বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে অভিযান চালায়। সে সময় ৩১ বোতল ফেন্সিডিলসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে। রোববার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
কালীগঞ্জে ১ জন সহ জেলায় মোট ৫৫ জন করোনায় আক্রান্ত
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে ১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলায় মোট ৫৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টন আছেন ১০৬ জন। রোববার সকালে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা: সেলিনা বেগম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, সকালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিপোর্ট এসেছে ১ টি পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ জনের রিপোর্টে করোনা পজেটিভ এসেছে। আক্রান্তদের বাড়ীতে হোমসলেশনে রাখা হয়েছে।
ছয়মাসের বাচ্চা গরু প্রতিদিন দুধ দিচ্ছে ৩০০ গ্রাম
ঝিনাইদহ :: মায়ের দুধ খাচ্ছে, আবার নিজেও দুধ দিচ্ছে। এমনই একটি ছয় মাস বয়সী বাচ্চা গরুর সন্ধান মিলেছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামে। বাচ্চাটির নাম দেওয়া হয়েছে সরস্বতী। গরুর মালিক প্রতিদিন মা গরুটি থেকে ৩ কেজি আর বাচ্চাটি থেকে ৩০০ গ্রাম করে দুধ পাচ্ছেন। গত এক মাস এই দুধ পাওয়া যাচ্ছে। গরুর মালিক কনজ বিশ্বাসের দাবি, বাচ্চাটির শরীর থেকে ঠিকমতো দুধ বের করলে আরও বেশি দুধ পাওয়া যেত। কিন্তু শরীরের কথা চিন্তা করে কম করে দুধ বের করা হয়। আবার এটুকু না বের করলে মাটিতে ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ে। তিনি বলেন, বাচ্চাটির দুধ তাঁরা খেয়েছেন, এখন পার্শ্ববর্তী একটি মন্দিরে পূজার জন্য দিচ্ছেন। অনেকে এই দুধ নিতে তাঁর বাড়িতে ভিড় করছেন। রবিবার সকালে কনজ বিশ্বাসের স্ত্রী মৈত্রী বিশ্বাসকে বাচ্চা গরুটি থেকে দুধ বের করতে দেখা গেছে। এ সময় বাচ্চাটি তার মায়ের বুক থেকে দুধ পান করছিল। ৩০০ গ্রামের মতো দুধ বের হওয়ার পর দুধ বের করা বন্ধ করে দেন মৈত্রী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এখনো বাচ্চাটির শরীরে দুধ রয়েছে। কিন্তু তার শরীরের কথা চিন্তা করে আর দুধ নিচ্ছি না।’ কনজ বিশ্বাস জানান, তাঁরা নিজেদের দুধ খাওয়ার জন্য একটি গাভি লালন-পালন করেন। তিন বছর হয়েছে গাভিটির একটি বাচ্চা হয়, যার নাম রাখেন গঙ্গা। এরপর গত বছরের ৯ ডিসেম্বর গাভিটি আরেকটি বাচ্চা দেয়। এটির নাম রাখেন সরস্বতী। তিনি বলেন, গত এক মাস হলো হঠাৎ বাচ্চাটি থেকে দুধ বের হতে শুরু করে। মাঝেমধ্যে দুধ মাটিতে পড়ে যায়। এ অবস্থায় একদিন বাচ্চাটি দুধ বের করার চেষ্টা করে দেখা যায়, ৩০০ গ্রামের বেশি দুধ এসেছে। বিষয়টি প্রতিবেশীদের জানালে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। এরপর তিনি একজন পশু চিকিৎসকের কাছে যান। তিনি এটাকে ওষুধের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। কিন্তু গ্রামের লোকজন এর বিপক্ষে গিয়ে বাচ্চার শরীর থেকে বের হওয়া দুধ মন্দিরে দেওয়ার পরামর্শ দেন। প্রথম কয়েক দিন বাচ্চার দুধ তাঁরা খেয়েছেন। এখন মন্দিরে দিচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ এস এম আতিকুজ্জামান বলেন, এ–জাতীয় ঘটনা খুবই কম শোনা যায়। তবে হরমোনজনিত সমস্যার কারণে অনেক সময় এটা হতে পারে। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। অল্প দিনেই এটা বন্ধ হয়ে যাবে।
লকডাউন মুক্ত হিসাবে দেশের ১মাত্র জেলা হিসাবে ঝিনাইদহ জেলাকে ঘোষনা
ঝিনাইদহ :: দেশের একমাত্র ঝিনাইদহ জেলায় লকডাউন নেই লকডাউন মুক্ত হিসাবে দেশের একমাত্র জেলা হিসাবে ঝিনাইদহ জেলাকে ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়রে ওয়েব সাইেট এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে কেবলমাত্র ঝিনাইদহ জেলায় লকডাউন নেই। ইতিপূর্বে কখনোই জেলা বা জেলার কোন উপজেলা লকডাউন ছিল না। ঝিনাইদহ জেলায় ৬টি উপজেলা রয়েছে। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। জেলায় রবিবার নতুন করে একজন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৫৫ জন। ঝিনাইদহ জেলায় এ পর্যন্ত করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৫জন তবে তাদের সবার রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ এসেছে। ঝিনাইদহ জেলায় এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১২শ ৫০ জনের মতো। ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন কার্যাললয়ে করোনা সেলের মুখপাত্র ডা: প্রসেঞ্জিৎ বিশ্বাস জানান, যেহেতু ইতিপূর্বে ঝিনাইদহ লকডাউন ছিল না এবং সুস্থ্যতার হার বেশী, এসব বিবেচনায় নতুন করে একমাত্র জেলা হিসাবে ঝিনাইদহ কে লকডাউন মুক্ত রাখা হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার ঠেকাতে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আক্রান্তের আধিক্য বিবেচনায় রেড জোন, এয়ালো জোন ও গ্রিন জোনে চিহ্নিত করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস্তবায়ন হবে স্বাস্থ্যবিধি ও আইনি পদক্ষেপ। দেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকেই ততপর ছিলেন ঝিনাইদহের প্রমাসন।সামাজিক দুরত্ব রোধে কঠোর ভাবে মাঠে ছিল জেলা প্রমাসনের ১০টি ভ্রাম্যমান আদালত,সামাজিক দুরত্ব রোধে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় করা হয়েছে জরিমানা। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার ও ঝিনাইদহে বসান চেকপোস্ট। যদিও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঈদের আগে অনেক লোক ঝিনাইদহে চলে এসেছে। তাদের চিহ্নিত করে হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা,অসহায়দের বাড়িতে ত্রাণ পৌছিয়ে দেওয়া ও করোনা আক্রান্ত রোগীদের সার্বিক খোজ রেখে মানসিক ভাবে তাজা রাখতে সর্বদা মাঠে ছিলেন ঝিনাইদহে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানিয়েছেন, আমরা আপ্রান চেষ্টা চালিয়েছি মানুষকে ঘরে রাখতে। এই জন্য জেলায় ১০টি ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়েছে। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি সব সময়। কিন্তু তার পরেও জেলাতে ৫৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ জন সুস্থ হয়েছে এখন পর্যন্ত আমরা এখনও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করে যাচ্ছে জেলা পুলিশ সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
কৃষক সেজে হত্যা মামলার আসামী ধরলেন পুলিশ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কৃষক সেজে আব্দুল আলিম (৫০) নামে হত্যা মামলার এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার (৭ জুন) সকালে উপজেলার পুরাতন বাখরবা মাঠ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী শেখপাড়া গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। শৈলকুপা থানার ইন্সেপেক্টর (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহসীন হোসেন জানান, রবিবার সকালে তমালতলা ক্যাম্প ইনচার্জ তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলার কৃষক সেজে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। উপজেলার পুরাতন বাখরবা গ্রামের মাঠ থেকে হত্যা মামলার অন্যতম আসামী আলিমকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরো জানান, কুষ্টিয়া রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন (২১) কে গত ২৮ এপ্রিল পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যা মামলার অন্যান্য আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য ইতিপুর্বে জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার হাকিমপুর গ্রাম থেকে পান ব্যাবসায়ি সেজে আসামি গ্রেফতার করেন ইন্সেপেক্টর মহসীন হোসেন।