রবিবার ● ৭ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » ইউপিডিএফ সংগঠক অপু ত্রিপুরাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ : মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ
ইউপিডিএফ সংগঠক অপু ত্রিপুরাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ : মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: ইউপিডিএফের রামগড় উপজেলা ইউনিটের সংগঠক অপু ত্রিপুরাকে অন্যায়ভাবে আটক, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ও তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, রামগড় ও গুইমারায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার ৭ জুন ইউপিডিএফ, পিসিপি ও ডিওয়াইএফ’র যৌথ উদ্যোগে পৃথক পৃথকভাবে উক্ত তিন উপজেলায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
“অন্যায় গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা, জুলুমসহ দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে না” এই শ্লোগানে অনুষ্ঠিত এসব বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে অপু ত্রিপুরাসহ এ যাবত আটক ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
মানিকছড়ি :: আজ সকালে মানিকছড়িতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে ইউপিডিএফের মানিকছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক এডিশন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের মানিকছড়ি উপজেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক চিনু মারমা ও পিসিপি’র মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশে এবং বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা ভাইরাস মহামারির আতঙ্কজনক পরিস্থিতির মধ্যেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর অন্যায়-অত্যাচার থেমে নেই। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও মানুষ তাদের অন্যায় নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন জারি রেখে জনগণের বাকস্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ভুলুণ্ঠিত করছে।
তারা ইউপিডিএফ সংগঠক অপু ত্রিপুরাকে আটকের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দল ইউপিডিএফের ওপর পরিকল্পিতভাবে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। আর এর অংশ হিসেবে একের পর এক নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে আটক করে বিচার বহির্ভুত হত্যা, নির্যাতনসহ ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। আর আদালত থেকে জামিন পেলেও মুক্তি না দিয়ে কারাগারের ভেতর নেতা-কর্মীদের তিলে তিলে হত্যা করা হচ্ছে।
বক্তারা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা তুলে নিয়ে আটক অপু ত্রিপুরাসহ সকল নেতা-কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি, অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধ করা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
রামগড় : ইউপিডিএফ, ডিওয়াইএফ ও পিসিপি’র যৌথ উদ্যোগে আজ দুপুরে রামগড়ে অনুষ্ঠিত মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ইউপিডিএফের রামগড় অঞ্চলের সদস্য সাবাক চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোামের রামগড় উপজেলা সভাপতি সুরেশ চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)রামগড় উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাদুর ত্রিপুরা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফ সংগঠক দবন চাকমা।
সমাবেশে বাহাদুর ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনী প্রমোশন বাণিজ্য ও কায়েমী স্বার্থ হাসিলের জন্য ইউপিডিএফের উপর অন্যায় দমন পীড়ন ও একের পর এক ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীকে আটক, বিনা বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ নির্দেশনা জারি রেখে পাহাড়ি জনগোষ্ঠির উপর অন্যায়-অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সুরেশ চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, সরকার সেনাবাহিনীকে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজকতা জিইয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। একের পর এক নিরস্ত্র ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হলেও পরিকল্পিতভাবে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এসব আশ্রিত সন্ত্রাসীরা খুন, গুম অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। অপরদিকে মদ, জুয়া, ইয়াবা ছড়িয়ে দিয়ে যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ সদস্য দবন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দমন-নিপীড়ন, ধরপাকড় চালিয়ে ইউপিডিএফের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবেনা বরং আরও শক্তিশালী হবে। সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্টি ও জনগণের ওপর যে অন্যায়-অত্যাচার চালাচ্ছে তা জনগণ সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ করবে।
তিনি অন্যায়ভাবে ইউপিডিএফ সংগঠক অপু ত্রিপুরাকে আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা দমন-পীড়ন বন্ধসহ অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দেশনা বাতিলের জোর দাবি জানান।
গুইমারা : বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর গুইমারা ও মাটিরাঙ্গা শাখার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে পিসিপি’র মাটিরাঙ্গা শাখার সহ সভাপতি অনিমেষ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র মাটিরাঙ্গা উপজেলা সভাপতি শান্ত চাকমা ও গুইমারা উপজেলা সভাপতি হেমন্ত চাকমা।
“অন্যায় গ্রেফতার, নির্যাতন ও জেলগেটে অন্যায় আটক বন্ধ কর” এই শ্লোগানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা গত বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী কর্তৃক অপু ত্রিপুরাকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণকে অধিকার বঞ্চিত রাখতে অধিকারর প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অগ্রগামী সংগঠন ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর ওপর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। একের পর এক নেতা-কর্মীদের অন্যায় ধরপাকড়, বিচার বহির্ভুত হত্যা, মিথ্যা মামলা, জেল-জুলুমসহ নানাভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পর্যন্ত পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না।
বক্তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, যতই দমন-পীড়ন চালানো হোক না কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের লড়াইকে থামানো যাবে না। নিপীড়িত-নির্যাাতিত জনগণের অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায় না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র সমাজ লড়াই চালিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর।
বক্তব্যে বক্তারা অবিলম্বে অপু ত্রিপুরাসহ আটক ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সকল নেতা-কর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।