বৃহস্পতিবার ● ১১ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » জাতীয় » প্রস্তাবিত ২০২০-২০২১ বাজেট সম্পর্কে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিক্রিয়া
প্রস্তাবিত ২০২০-২০২১ বাজেট সম্পর্কে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিক্রিয়া
ঢাকা :: বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আজ জাতীয় সংসদ আগামী অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে পার্টির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য-চিকিৎসা এবং কৃষি ও গ্রামীণখাত যে গভীর মনযোগ ও বরাদ্দ পাবার কথা ছিল তা পায়নি। মহামারীকালের বাজেট ও প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রীক গতানুগতিকতার দেয়াল অতিক্রম করত পারেনি। তিনি তার মাথা থেকে এখনও প্রবৃদ্ধির ভুত নামাতে পারেননি। অর্থমন্ত্রীর কথিত অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা শীর্ষক বাজেটে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সরকারি উদ্যোগে গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে আসা আট কোটি মানুষের জন্য টেকসই ‘গণবন্টন ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার বিশ্বাসসযোগ্য কোন পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের প্রস্তাবনা নেই। তিনি বলেন করোনা মহামারী ও মহামারীজনীত অর্থনৈতিক দুর্যোগ থেকে যদি মানুষকেই রক্ষা করা না যায় তাহলে কোন ‘পথ পরিক্রমা’ বা প্রবৃদ্ধি কাজে আসবে না। তিনি বলেন, ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৯০ কোটি টাকার বাজেটে ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রেখে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা নেহাত কৃত্রিম আশাবাদ, যার সাথে এখনকার বাস্তবতার সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, আয় যেখানে সংকুচিত, ব্যয় ও ঋণের মাত্রা যেখানে বেশী সেখানে মাত্রাতিরিক্ত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কেবল হতাশার জন্ম দেবে।
বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরো বলেন, মহামারী দুর্যোগ যে কৃষি ও গ্রামীণ খাত সামষ্টিক অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং রপ্তানী বাণিজ্যে নিন্মগতি ও প্রবাসী আয় সংকুচিত হবার আশংকার মধ্যে এই খাত যে মাত্রায় অগ্রাধিকার পাবার কথা ছিল বাজেট প্রস্তাবনায় তা দেখা যায়নি। কৃষি ও কৃষিভিত্তিক এবং গ্রামীণ উৎপাদন প্রকল্পে যে পরিমান প্রত্যক্ষ প্রণোদনা দেয়া দরকার তা হয়নি। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা ৪ কোটি মানুষের সাথে করোনা দুর্যোগে আরো যে ৪ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে নেমে এসেছে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নগদ টাকা প্রদানের কার্যকরি প্রস্তাবনা বাজেটে নেই। তাছাড়া দুর্যোগ উত্তরণে বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য যে মাত্রায় নগদ প্রণোদনা দেয়া দরকার ছিল তাও খুবই অপ্রতুল। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলেও চুরি, দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে তার সুফল থেকেও অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত থেকে যায়।
তিনি উল্লেখ করেন বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা সংস্থা করতেও শেষ পর্যন্ত দায়ভার এসে পড়বে সাধারণ মানুষের উপর। তিনি ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেন, এতদ্রুত জাতীয় দুর্যোগের মধ্যে এনবিআরসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিশাল অংকের কালো টাকা, অপ্রদর্শিত অর্থ সম্পদ, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বিশেষ কোন তৎপরতা নেই। ব্যাংক, শেয়ার মার্কেটসহ আর্থিক খাতে যারা হরিলুট করেছে তাদের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারেও কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেই।
বিবৃতিতে তিনি অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং রাজস্ব ব্যয়সহ অত্যাবশ্যক নয় এরকম ব্যয় আরো কমিয়ে আনার আহ্বান জানান। আগামী দুই বছরের জন্য বিলাসদ্রব্যের আমদানী বন্ধ ও অনুৎপাদনশী খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে খাদ্য, শিক্ষা, শিল্প ও আবাসন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানান। তিনি দুর্যোগকালীন সময়ে বাজেটের অজুহাতে বাসা ভাড়া, পরিবহন ভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বিবৃতিতে তিনি করোনা মহামারী মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইন ক্লাস্টার্স ডাক্তার, নার্স, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, গণমাধ্যম কর্মী, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য বাড়তি প্রণোদনা বরাদ্দ রাখারও আহ্বান জানান।