শুক্রবার ● ১২ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে কাউখালীতে আলোচনা সভা
কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে কাউখালীতে আলোচনা সভা
কাউখালী :: কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৪তম বার্ষিকীতে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও তার দোসরদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে রাঙামাটির কাউখালীতে আলোচনা সভা করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) রাঙামাটি জেলা শাখা।
আজ ১২ জুন শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি রূপসী চাকমার সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক বাবলু চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নীতিশোভা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক রিতা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কাউখালী থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক পাইথুইমা মারমা, পিসিপি কাউখালী থানার সাবেক সহ-সভাপতি নয়নজ্যোতি চাকমা ও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নারী সমাজকর্মী স্বপ্না চাকমা।
সভা শুরুতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের অংশ হিসেবেই পরিকল্পিতভাবে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছে। যার কারণে আজ দুই যুগ পূর্ণ হলেও এ ঘটনার কোন বিচার হয়নি, গ্রেফতার হয়নি চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও তার দোসররা। যদি তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো তাহলে নিশ্চয় কল্পনা চাকমার সন্ধান জানা সম্ভব হতো।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন কল্পনা চাকমা অপহরণের পর দেশের বিভিন্ন নারী ও মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল, দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে সরব থেকেছেন। সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় নিবন্ধ ও রিপোর্ট প্রকাশিত হয় এবং নিরপেক্ষ সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের একাধিক প্রতিনিধির দল ঘটনার সরেজমিন তদন্ত করতে বাঘাইছড়ি যায় এবং ফিরে এসে রিপোর্ট প্রকাশ করে। ফলে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়ে সরকার লোক দেখানো নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়। কিন্ত দীর্ঘ দুই যুগেও সরকার কল্পনা চাকমার কোন হদিস দিতে পারেনি। বরং সরকার অপহরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেয়া সম্ভব হলেও তাঁর চেতনা আদর্শকে বিলিন করা যায়নি। যার কারণে ২০১৮ সালে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমাকেও কল্পনা চাকমার মত সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযেীগায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে অপহরণ করা হয়। কিন্তু তাদের হীন উদ্দেশ্য আন্দোলনের মুখে পড়ে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। শাসকগোষ্ঠীর এত দমন-পীড়ন সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্বকারী নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে দমিয়ে রাখা যায়নি এবং ভবিষ্যতেও দমিয়ে রাখা যাবে না।
সভা থেকে বক্তারা সকল টালবাহানা বন্ধ করে কল্পনা চাকমার সন্ধান ও চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার গংদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সাথে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে বাঘাইছড়ির নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে তৎকালীন কজইছড়ি ক্যাম্প কমাণ্ডার লেঃ ফেরদৌস ও তার দোসররা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি।