শুক্রবার ● ১২ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » বাম জোটের বাজেট প্রতিক্রিয়া : স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা, কর্মসংস্থান, শিক্ষাসহ জনস্বার্থের সকল খাত চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে
বাম জোটের বাজেট প্রতিক্রিয়া : স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা, কর্মসংস্থান, শিক্ষাসহ জনস্বার্থের সকল খাত চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে
ঢাকা :: প্রবৃদ্ধির নেশায় অন্ধ সরকার করোনা থেকে কোন শিক্ষাই নেয়নি। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে জনস্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও গবেষণাসহ জনস্বার্থের সব কটি খাত চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে উল্লেখ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট প্রস্তাবিত বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করে আজ সংবাদপত্রে এক বিবৃতি দিয়েছে। একই সাথে স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা ও গবেষণাসহ উৎপাদনশীল জনস্বার্থ সংশিষ্ট খাতে জাতীয় বাজেটের অন্তত ৫৫ ভাগ বরাদ্দ করার দাবি জানান। আজ ১২ জুন ২০২০ সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় তাদের এই অভিমত ব্যক্ত করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এবং কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাদিুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী কমরেড জুনায়েদ সাকী, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পদক কমরেড মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক কমরেড হামিদুল হক।
নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা কালে এই সংকটে সরকারি ও বিরোধী দলসমূহ, সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ এতদিন যে আলোচনা করে আসছিল, দেশের মানুষ আশা করেছিল সরকার আগামী বাজেট প্রণয়নে ও বরাদ্দে অতীতের গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে উৎপাদনশীল ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে মনযোগ দিবেন। কিন্ত প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোন প্রতিফলনই দেখা গেল না। বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে ২২ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা কমেছে। অর্থ্যাৎ সরকারের আয় কমেছে। করোনা সংকটে আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে অর্থনীতিদিব ও বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকেও যার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রাহ্য না করায় ঘোষিত বাজেটে আরো বেশি করে দেশী ও বিদেশী ঋণ নির্ভরতা বাড়বে। এই সংকটে বাজেট প্রণয়নে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত ছিল আয়ের সক্ষমতা ও বাস্তবতা বুঝে ব্যয়ে অনেক পরিকল্পিত হওয়া। কিন্ত বিনা ভোটে ও জবরদস্তিমূলক ভাবে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকার অতীতের ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ণ আমলাতন্ত্রিক পদ্ধতিতে বাজেট প্রণয়ন করেছে। যেখানে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার না দিয়ে লুটেরা ধনিক, কালো টাকার মালিক, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। খাতওয়ারি বাজেট বিশ্লেষণ করলে তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়। এ ছাড়া সরকারকে যেন তথাকথিত প্রবৃদ্ধির অন্ধ মোহে পেয়ে বসেছে।
নেতৃবৃন্দ আরোও বলেন, করোনা সংকটে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ, বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্যবিদ, কৃষি অর্থনীতিবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা ছিল এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও গবেষণাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কিন্ত এবারের বাজেটের ৪২.২৬% বা ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছে ৪টি (আমলা প্রশাসন, সুদ পরিশোধ, সামরিক, স্বরাষ্ট্র) অনুৎপাদনশীল খাতে। আর অন্যদিকে উৎপাদনশীল ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ও মাদ্রাসা বাদে), সামজিক নিরাপত্তা, শ্রম ও প্রবাসী খাতে রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ২৬.২১% বা ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা।
নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে করোনা সংকটের কারণে বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে, হাসপাতালে সিট নেই, ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীর চরম সংকট, পর্যাপ্ত করোনা পরীক্ষা নেই, লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরছে, বিভিন্ন গবেষণা জরিপে দেখা যাচ্ছে ৩৫ ভাগ পরিবারের কমপক্ষে ১ জন চাকুরি হারিয়েছে। সবজি, মাছ, দুধ, মুরগি, ফলসহ কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, খামারীরা রাস্তায় দুধ-ডিম-মুরগী ফেলে দিচ্ছে। শিক্ষক, স্বাস্থ্য কর্মী, শ্রমিকেরা বেতন ও মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছে। বাজেট প্রস্তাবনায় এই মানুষদের দিকেই তো বেশী নজর দেয়া দরকার ছিল। বাজেটের বা জিডিপির সিংহভাগ টাকাই তো এই সাধারণ মানুষেরা যোগান দেয়। কিন্ত যাদের জন্য বাজেট তাদের জন্য পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও দেশের আমলা খাতে বাজেটের প্রায় ২০ ভাগ বা ১ লাখ ১৩ হাজার ১৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ রাষ্ট্রের ৫ টাকার মধ্যে ১ টাকাই চলে যাবে এই দুর্নীতিবাজ আমলাতন্ত্রের পিছনে। অথচ এরা হচ্ছে দেশের মোট জনগোষ্টির মাত্র ১.২৩ শতাংশ। আর শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জিডিপিতে ১৪% অবদান রাখা, দেশের ৪০ ভাগের কর্মসংস্থান, ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়াসহ সিংহভাগ মানুষ যে খাতের উপর নির্ভরশীল সেই কৃষি খাতে বরাদ্দ টাকার অংক বাড়লেও আনুপাতিক হারে গতবারের তুলনায় কমেছে। গতবার বরাদ্দ ছিল জাতীয় বাজেটের ৫.৬% এবার ৫.২৭% অর্থ্যাৎ ২৯ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। করোনা সংকটে দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এবারও জিডিপি’র ১% এর নীচে। টাকার অংকে মাত্র ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা যা জাতীয় বাজেটের ৫.১৪% এবং জিডিপির ০.৯২%। ফলে প্রস্তাবিত বাজেট দিয়ে বর্তমান সরকার দেশের মানুষের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনকল্যান নিশ্চিত না করে লুটেরা ধনিক শ্রেণি, কালো টাকার মালিক, ব্যাংক লুটকারি ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে চাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ প্রস্তাবিত বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতি, ২০১২ সালের স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্র ও করোনার বিশেষ বাস্তবতা অনুযায়ি এ বছর জাতীয় বাজেটের ১২% অর্থ্যাৎ ৬০ হাজার কোটি টাকা, করোনা সংকটে পরে কর্মহীন ও দারিদ্র সীমায় পড়ে যাওয়া ১২ কোটি মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা স্কীমের আওতায় আনার জন্য বিশেষ বরাদ্দ, দেশের সিংহভাগ মানুষ যার উপর নির্ভরশীল এবং যারা দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয় সেই কৃষি খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ ভাগ, দেশে ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকের কর্মসৃজনসহ বেকারদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা গবেষণা খাতসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে জাতীয় বাজেটের অন্তত ৫৫ ভাগ টাকা বরাদ্দ করার দাবি জানান।