শুক্রবার ● ১৯ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » কুটুম সেজে চুরি করতে এসে শ্রীঘরে গেল আলামিন
কুটুম সেজে চুরি করতে এসে শ্রীঘরে গেল আলামিন
মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী বাজারে এক ব্যাবসায়ীর বাসায় ঢুকে নগদ অর্থ ও গহনা নিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়েছে আলামিন নামে এক চোর। আটককৃত চোর চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের ইলিয়াস আলীর ছেলে। আজ বৃহষ্পতিবার দুপুরে হলিধানী বাজারের পাশে আখসেন্টার সংলগ্ন এলাকায় ফল ব্যবসায়ী আজিজুল মিয়ার বাসায় এ চুরির ঘটনা ঘটে। ফল ব্যবসায়ী আজিজুল জানান, দুপুরে চোর আল আমিন বাসার বাইরে মটরসাইকেল রেখে ভিতরে ঢুকে পুরুষ মানুষ বাড়ি আছে কিনা তা ডাকাডাকি করে নিশ্চত হয়। পুরুষ লোক বাসায় না থাকায় সে আজিজুলের স্ত্রীকে বলে আমি চাচাকে দাওয়াত দিতে এসেছি। কুটুম ভেবে গৃহকর্তী রুমের মধ্যে বসিয়ে নাস্তা দেই। নাস্তা খেতে খেতে বলে চাচি আমার মটরসাইকেলে চাবি ভুলে গাড়িতেই রেখে আসছি একটু নিয়ে আসেন। গৃহকর্তী চাবি আনতে গেলে চোর ড্রয়ার ও আলমারির তালা খুলে নগদ কুড়ি হাজার টাকা ও গহনা নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় ওই মহিলার চিৎকারে বাজারের লোকজন ছুটে এসে চোর আলামিনকে ধরে উত্তম মাধ্যম দেয়। খবর পেয়ে কাতলামারি ক্যাম্পের পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে কাতলামারি পুলিশ ক্যাম্পের এ এস আই মোল্লা এনামুল জানান,আটককৃত চোর দাওয়াত দেওয়ার নামে বাসায় ঢুকে চুরি করে পালানোর সময় লোকজন তাকে আটক করেছে। আমরা তাকে জেল হাজতে প্রেরনের জন্য সদর থানায় হস্তান্তর করেছি।
পুর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি জনযুদ্ধ’র নেতা দাদা তপনের একচ্ছত্র রাজত্ব হারানোর একযুগ পূর্তি
ঝিনাইদহ :: দাদা তপনের একচ্ছত্র রাজত্ব হারানোর আজ (বৃহস্পতিবার) একযুগ পূর্তি হলো। চরমপন্থি নেতা ঝিনাইদহে অনেকেই ছিলেন, কিন্তু যার নাম শুনলে গা ছম ছম করতো, শরীরের রক্ত হিমশিতল হয়ে যেতো, স্বয়ং চোখে দেখলে মুহুর্তেই থেমে যেতো হৃদস্পন্দন। নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন জনযুদ্ধের প্রতিষ্ঠাতা সেই আব্দুর রশিদ ওরফে দাদা তপন ২০০৮ সালের এই দিনে (১৮ জুন) র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। নৃসংশ খুনের জন্য দেশ বিদেশে সাড়া জাগানো দাদা তপনের নিথর দেহ পড়ে ছিল কুষ্টিয়া সদরের বাড়াদি স্কুলপাড়া গ্রামে। ওই বাড়িটি তার নিজের ছিল। এ সময় রিক্তা নামে এক নারীও নিহত হন দাদা তপনের সাথে। এক সময়ের মাদ্রাসার ছাত্র ও মসজিদের খন্ডকালীন ইমাম দাদা তপন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের পশ্চিম বিষয়খালী গ্রামের ইবাদত হোসেন মালিথার ছেলে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট ও তথ্য নিয়ে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দলে দাদা তপনের উত্থান ছিল চমকে ভরা। মানুষ খুনের পাশাপাশি চাঁদাবাজীর জন্য ঝিনাইদহসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে নির্বিচারে বোমাবাজীর অনুঘটক ছিলেন তিনি। তার নিশানা থেকে বাঁচার কোন পথ ছিল না। পুলিশের কাছ থেকেও তিনি কয়েকবার পালিয়েছেন। জেলাব্যাপী নৃশংস ভাবে গলাকেটে একের পর এক যখন খুন আর রক্তের হলিখেলায় মত্ত তপন, তখন অনেকটাই খেয় হারিয়ে ফেলে পুলিশ বাহিনী। গোয়েন্দা তথ্য ভুল প্রমানিত করে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ ও বোমাবাজী চালায় খোদ ঝিনাইদহ শহরেই। শুধু ঝিনাইদহ নয়, দ্রুত তার নিষিদ্ধ সংগঠন খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে চালায় খুনের বিভিষিকা। গ্রামের অধিকার বঞ্চিত, অভাবী ও বিচার বঞ্চিত নি¤œ পরিবারের যুবকরা প্রতিশোধ নিতে নাম লেখায় জনযুদ্ধে। মাঠে ময়দানে পড়ে থাকে ছিন্নভিন্ন মানুষের লাশ। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই লোমহর্ষক খুনের চিত্র চোখে পড়ে। খুনের পর ফোনে এবং ফ্যাক্স করে হত্যার দায় স্বীকার করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিত তপন বাহিনী। এভাবে টালমাটাল পরিস্থিতি চলার পর সদর উপজেলার ১৮ মাইল নামক স্থান থেকে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়ার সুমন নামে এক যুবক র্যাবের জালে ধরা পড়ে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ১৭টি মোবাইল সিম। খোঁজ মেলে দাদা তপনের ডেরার খবর। নিখুত ছক আর নিশানায় র্যাব-১২ ও র্যাব-৬ কুষ্টিয়া সদরের বাড়াদি স্কুলপাড়া গ্রামে অভিযান চালায়। দিনের আলো কেবল ফুটতে শুরু করেছে। প্রাচীর টপকে র্যাবের চৌকশ দল প্রবেশ করে বাড়ির ভিতরে। সঙ্গে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ইউনিটের ইনচার্জ মেজর আমজাদ হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। সফল ভাবে শেষ হয় অপারেশন। শেষ হয় দাদা তপন অধ্যায়। নিহত তপনের পাশে তখনও পড়ে ছিল তার প্রিয় একে-৪৭ রাইফেলটি। দাদা তপন নিহত হওয়ার পর তার আইটি দপ্তরের প্রধান ছোট ভাই আকাশ, টিক্কা ও একদিল বন্দুকযদ্ধে নিহত হন। খুন করার পর দাদা তপনের ছোট ভাই আকাশ ফ্যাক্স বার্তায় হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিতেন। মুকুটহীন সম্রাটের মতোই দাদা তপন আন্ডারয়োর্ডে ছড়িয়ে দেয় বিভিষিকা। তার আগ্রাসী তৎপরতায় পুর্ববাংলার অপরগ্রুপ, বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টি, শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, গনমুক্তিফৌজ, কৃষক সংগ্রাম সমিতি, জাসদ গনবাহিনী ও সর্বহারা পার্টিসহ গোপন এবং প্রকাশ্য সংগঠনগুলো কোনঠাসা হয়ে পড়ে। ঝিনাইদহের অনেক বড় বড় নেতা ও ঠিকাদারকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হতো দাদা তপনের। তপনের কথা হেরফের হলেও বোমার ঝাক গিয়ে পড়তো নেতাদের বাড়িতে নয় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ’৯০-এর দশকের শুরুতে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আবির্ভাব ঘটে। হরিণাকুন্ডু উপজেলার হিঙ্গেরপাড়া গ্রামের দর্জি টিপু মুকুটহীন সম্রাট হয়। এই দলের দাপটে বাঘে-ছাগলে একঘাটে পানি খায়। টিপু সঙ্গী হিসেবে পায় চরমপন্থী ইছাকে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ইছা। দলীয় ক্যাডাররা বিশ্বাসঘাতকতা করে টিপু ও তার ৩ সঙ্গীকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার এক বিলের মাঝে জীবন্ত কবর দেয়। শেষ হয় টিপু অধ্যায়। বিবিসির খবরে টিপুর নাম উল্লেখ করে বুলেটিন প্রচারিত হয়। এ ভাবে ক্ষমতার পালা বদলে আন্ডার ওয়ার্ড অশান্ত হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের দিকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে ঝিনাইদহের মীর ইলিয়াস হোসেন দিলিপের নেতৃত্বে গঠন করা হয় শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন। দলের সামরিক শাখার নাম দেয়া হয় গণমুক্তি ফৌজ। বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির বেশিরভাগ নেতা বা ক্যাডার গণমুক্তিফৌজে যোগ দেয়। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৯ সালে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ দেয়। শুরু হয় আত্মসমর্পন পক্রিয়া। এ সময় বিপ্লবী ও পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি আত্মসমর্পণে সাড়া দেয়নি। ২০০০ সালের ১৫ জানুয়ারী শহরের পাগলাকানাই মোড়ে গুলিতে সঙ্গী আলফাজসহ নিহত হন মীর ইলিয়াস হোসেন দিলিপ। ২০০০ সালের দিকে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙ্গে গঠিত হয় (এমএল লাল পতাকা), (এমএল জনযুদ্ধ) ও (এমএল যোদ্ধা) এই ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সামরিক শক্তি এবং হত্যা কৌশলের দিক থেকে আবদুর রশিদ মালিথা ওরফে দাদা তপনের নেতৃত্বাধীন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল জনযুদ্ধ) শীর্ষে চলে যায়। বাচ বিচার না করে গ্রাম শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, ঠিকাদার ও সাধারণ মানুষকে হত্যার নিশানা বানিয়ে দাদা তপন এক মুর্তিমান আতংক ছড়িয়ে দেয়। ওদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় একের পর এক নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়ে “আমি আবির হাসান বলছি’ ছদ্ম নাম ব্যাবহার করে মিরপুর উপজেলার মালিহাট গ্রামের নছর হত্যার দায় স্বীকার করে আতংকের সৃষ্টি করে। সিরাজ, লাল্টু, বিপ্লব ও ঠান্ডুসহ অনেকই সে সময় এক একজন আতংকের নাম ছিল। দাদা তপনের আগে দেশে সবচেয়ে সাড়া জাগানো ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনা ছিল সিলেটের বুনিয়াদি পরিবারের সন্তান কমরেড মোফাখখার চৌধুরী। তিনি ছিলেন গোপন রাজনৈতিক দল পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির একজন শীর্ষ নেতা। সাহিত্যিক ও লেখক হিসেবেও তার সুখ্যাতি ছিল। ২০০৫ সালে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরবর্তীতে র্যাবের তরফ থেকে জানানো হয় যে মি. চৌধুরী ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। মোফাখখার চৌধুরী নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু বৃদ্ধিজীবী। ২০০৮ সালে পুলিশের সাথে আরেকটি বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় নিহত হন নিষিদ্ধ সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এম এল লাল পতাকা) শীর্ষ নেতা কোটচাঁদপুরের ডা. মিজানুর রহমান টুটুল ওরফে রাকেশ কামাল। এমবিবিএস চিকিৎসক ডাঃ মিজানুর রহমান টুটুল আটক হবার পর তার মা নভেরা খাতুন ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আকুতি জানিয়েছিলেন যে তার ছেলেকে যেন ‘ক্রসফায়ারে মারা না হয়’। তবে ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে জনযুদ্ধের দাদা তপনই এক মুর্তিমান আতংক ছিলেন, যা এখনকার প্রজন্মের কাছে রুপকথার গল্পের মতো।
দেশে চরমপন্থি দলের উত্থানঃ
একসময় পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ও সর্বহারা পার্টি ছিল তাত্তিকভাবে শ্রেণিহীনদের পক্ষে কথা বলার জন্যই তৈরী হয়েছিল। এখন ভাগ হয়ে বহু পার্টির নামকরণ হয়েছে। যার একটিও মার্কসবাদ, লেলিনবাদ ও মাওবাদ নয়। একেক এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে যার যার মতো খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি, চিংড়ি ঘের দখল, চর দখলসহ এমন কোন অপরাধ কর্মকান্ড নেই যে তারা করে না। নিজেদের স্বার্থে চলা বিভিন্ন পার্টির নামে চরমপন্থীদের কর্মকা-েই তা প্রমাণিত। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কমরেড হক (যশোর) যখন এ চরমপন্থি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন সেই সময় তার সঙ্গী হিসাবে ছিলেন কমরেড তোহা, নড়াইল জেলার হেমন্ত সরকার, বিমল বিশ্বাস, খুলনার জীবন মুখার্জী, চুয়াডাঙ্গার আনিছুর রহমান মল্লিক, ঝিনাইদহের আনোয়ার জাহিদ, পাবনার আলাউদ্দীন টিপু বিশ্বাস, আব্দুল মতিন, সিলেটের মোফাখখার চৌধুরী ও খুলনার মধুবাবু। অভ্যন্তরীন দ্বন্দ ও আদর্শগত বিরোধের জের ধরে ৭৪ সালের দিকে আঃ মতিন, আলাউদ্দিন, লুৎফর রহমান বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টি থেকে বের হয়ে এসে গঠন করে ইপিসিপি। যার মূল নেতৃত্ব দেন পাবনার টিপু বিশ্বাস। দূর্নীতি, স¦জনপ্রীতি ও আদর্শগত বিরোধের জের ধরে মোফাখখার চৌধুরী ও মধুবাবুকে দল থেকে বহিষ্কার করে। পরে মধুবাবু ও মোফাখখার চৌধুরী এবং রাজশাহীর জামাল মাষ্টার পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি (এম.এল) নামে এক বেআইনি চরমপন্থী সংগঠন তৈরী করে কার্যক্রম চালাতে থাকে। দলটি গোপনে কার্যক্রম চালাতে থাকে এবং জনগনের আস্থা অর্জন করতে সামাজিক ও সাংগঠনিক কাজে হাত দেয়। খুজতে থাকে একাধিক শিক্ষিত যুবক যারা ভবিষ্যত কর্ণধার। ৮৭/৮৮ সালে পার্টির তৃতীয় দফা ভাঙ্গন দেখা দেয়। মোফাখখার হোসেনের সাথে মনোমালিন্য দেখা দেয় মধু বাবু ও জামাল মাষ্টারের। তারই ফলশ্রুতিতে এরা লাল পতাকা নামের আরো একটি সংগঠনের জন্ম দেয়। অপরদিকে, বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টির একাংশ কমরেড তোহা সাহেবের সাথে সাম্যবাদী দলে যোগদান করে। ইপিসিপির অন্যান্যরা গঠন করে কমিউনিষ্ট লীগ। পরবর্তীতে ইউনাইটেড কমিউনিষ্ট লীগ নামে পরিচিত। ৮২ সালে এই পার্টির বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পাটি নামে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০০ সালের দিকে দল বদল করে মোফাখ্খার চৌধুরী পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি (এম এল) এ যোগদান করে। মোফাখখার চৌধুরীর সাথে যোগ দেয় ঝিনাইদহ জেলার বিষয়খালী গ্রামের আব্দুর রশীদ মালিথা ওরফে তপন। মোফাখখার চৌধুরী খুলনা যশোর এলাকাতে শিমুল, পলাশ, তুষার চন্দনসহ অনেককে নিয়ে কার্যক্রম চালাতে থাকে। আর তপনকে দেয়া হয় বৃহত্তর কুষ্টিয়ার দায়িত্ব। একের পর হত্যাকান্ড চাঁদাবাজীসহ কালো টাকার পাহাড় গড়াকে কেন্দ্র করে মোফাখখার ও তপনের মধ্যে এক দ্বন্দ দেখা দেয়। একই সময়ে ধরা পড়ে চরমপন্থী রানা। ২০০২ সালের দিকে তপন - মোফাখখার দ্বন্দে ভাগ হয়ে যায় দলটি। তপন গঠন করে জনযুদ্ধ আর বিভাগীয় সম্পাদকের দায়িত্ব নেয় প্রয়াত কমরেড আবীর হাসান। মূল দলে মোফাখখার হোসেনের সাথে থাকে চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার জামাল ওরফে রবি। ২০০৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুর থেকে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন মোফাখখার চৌধুরী। এর একদিন পরই রাজধানীতে র্যারের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা যান। মোফাখখার চৌধুরী নিহত হওয়ার পর দ্বায়িত্ব পান চুয়াডাঙ্গার পলাশ পাড়ার জামাল ওরফে রবি। শেষ পর্যন্ত রবিও বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। এর পর থেকে দলটি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বের হয়ে নিউ বিপ্লবী পার্টি গঠন করে ডুমুরিয়ার একসময়ের মূর্তিমান আতংক মনোরঞ্জন গোসাই ওরফে মৃণাল। ১৯৮৭ এর দিকে সে ডুমুরিয়া এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করলেও আশপাশের জেলা ও উপজেলায় বিশেষ করে কেশবপুর, তালা, সাতক্ষীরা, ডুমুরিয়া ও খুলনা এলাকায় দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে ভয়ংকর জনপদ হিসেবে চিহ্নিত করে। মৃণাল পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতে খুন হয়। তার অস্ত্রভান্ডার অরক্ষিত থাকে। অস্ত্র চলে যায় ওই গ্রুপের অন্যান্যদের হাতে। একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ভারতে মৃণালের সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর কবীর খুন হয়। ১৯৯৮ সালে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বের হয়ে শ্রমজীবি মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন ঝিনাইদহের মীর ইলিয়াস হোসেন ওরফে দীলিপ। যশোর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া এলাকায় ওই পার্টির ব্যাপক তৎপরতা চলে এক সময়। ২০০০ সালের ১৫ জানুয়ারি দীলিপ প্রতিপক্ষ চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়। সে ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পণের মূল ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। ওই সময় অনেক আর্মস ক্যাডার প্রকাশ্যে আসলেও পরবর্তীতে আবার পূর্বাবস্থানে ফিরে যায়। এখনো তার পার্টির আর্মস ক্যাডাররা গণমুক্তি ফৌজ নামে ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া এবং যশোরের একটা অংশে বিচরণ করছে। যশোর অঞ্চলের পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আরেক নেতা জাফর সেখ তার বাড়ি বাঘারপাড়ায়। সে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা যায় ২০০৩ সালে। ২০০৫ সালের ২৩ আগস্ট চরমপন্থী গ্যাংলিডার সাগর নিহত হয়। খুলনা অঞ্চলে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আরেক নেতা আব্দুর রশীদ তপু ২০০৪ সালের ২০ মে ঢাকায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ২০০১ সালের ২০ মে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) এর থেকে বের হয়ে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-জনযুদ্ধ) প্রতিষ্ঠা করে ঝিনাইদহের আব্দুর রশীদ মালিথা ওরফে তপন। দাদা তপন নামে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জনযুদ্ধের দাপট সৃষ্টি হয়। গোটা অঞ্চলে এককভাবে বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে জনযুদ্ধ। সে ২০০৮ সালের আগস্টে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মহিলা আর্মস ক্যাডার রিক্তাসহ নিহত হয়। আলাউদ্দীনের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা, সর্বহারা জনযুদ্ধ, সোনার বাংলা, পূর্ববাংলা সর্বহারা, সর্বহারা কামরুল, সর্বহারা (অ,প,ক), পূর্ব বাংলা জনযুদ্ধ, পূর্ব বাংলা মধু বাবু, পূর্ব বাংলা সাম্যবাদী দল আনোয়ার হোসেন, গণমুক্তি ফৌজের লাল্টু ও রুহুল, গণবাহিনীর সিরাজুল ইসলাম, পূর্ব বাংলা (মাওবাদী) খুলনার মাহফুজ ও দিপুসহ অনেক দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে অপরাধ কর্মকান্ড ঘটায়। যার সিংহভাগই গ্যাংলিডারের অস্তিত্ব এখন নেই।
বৃষ্টির মধ্যে শুয়ে আছেন কম্বল গায়ে বৃদ্ধ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কে শৈলকুপার ভাটই বাজারের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে কাদাপানিতে শুয়ে কম্বল গায়ে কাঁপছেন নাম না জানা অজ্ঞাত পরিচয়ের এক বৃদ্ধ গত দুই-তিন দিনের প্রচন্ড বৃষ্টিতে কাদাপানিতে ঢেকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছেন। তবুও তিনি বৃষ্টির মধ্যে শুয়ে আছেন কম্বল গায়ে। তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি স্থানীয় প্রমাসন ও এলাকাবাসী। বুধবার (১৭ জুন) বিকেল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে তাকে দেখা গেছে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কে শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজারের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে। কাদাপানিতে শুয়ে কম্বল গায়ে কাঁপছেন। এদিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না তার দিকে। বৃষ্টির কাদাপানিতে সারা শরীর একাকার বৃষ্টির মধ্যে সড়কে যানবাহন চলাচলের ফলে কাদাপানি ছুটে তার মাথার লম্বা লম্বা চুলে ও মুখমন্ডলে ভরে গেছে। তবুও উঠছেন না সেখান থেকে তবে পাগল হিসেবে পরিচিত ওই বৃদ্ধ বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। করোনার মধ্যেও নেই তার কোনো ভয়ভীতি। বছরের পর বছর রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে রাস্তায় বসবাস করে আসছেন অজ্ঞাত পরিচয়ের এই বৃদ্ধ উপজেলার ভাটই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল বিশ্বাস জানান, তিনিও বেশ কয়েক বছর ধরে ওই বৃদ্ধাকে তাদের এলাকায় দেখছেন। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে বাজারের যে কোনো স্থানে শুয়ে থাকেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ওই বৃদ্ধা ভাটই পুলিশ ফাঁড়ির সামনে মহাসড়কে বৃষ্টির মধ্যে একটি কম্বল গায়ে শুয়ে আছেন। বৃষ্টিতে কাদাপানিতে প্রায় ঢেকে যাওয়ার উপক্রম। তার এ অবস্থা হলেও এখন পর্যন্ত তাকে উদ্ধারের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। ভাটই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই রেজওয়ানুল হক জানান, পুলিশ ফাঁড়ির সামনে মহাসড়কে এক অজ্ঞাত পরিচয় বৃদ্ধকে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে কাদাপানিতে কম্বল গায়ে শুয়ে থাকতে দেখেছি। তাকে মাঝে মধ্যে খাবার দিলে খাবার নেন। আমি এখানে নতুন এসেছি তবে শুনেছি বৃদ্ধ লোকটি এ এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে রয়েছেন।