শনিবার ● ২০ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সাংবাদিক কপিল পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন সরকারি সহায়তা চায়
সাংবাদিক কপিল পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন সরকারি সহায়তা চায়
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার যে মানুষটি সমাজের নানা চিত্র সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরেন নির্ভীকভাবে, তিনিই এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য এবং ওষুধ-পথ্য সংকটে রয়েছেন তিনি ও তার পরিবার। প্রায় শতবর্ষী মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পাঁকা ঘরে তাদের বসবাস। চুন-সুড়কির দালান ঘরের অভ্যন্তরে পলিথিনের ছাউনি, তবু তাতে মানেনা বৃষ্টি। ছাদ চুঁইয়ে পড়তে থাকে পানি।সাংবাদিক পরিবার চরম অসহায়।সাংবাদিক পরিবার সরকারি সহায়তা চায়।
একদিকে ওই সাংবাদিকের মেরুদন্ডের হাড়ে তীব্র ব্যাথায় চলাফেরা করাটা মারাত্মক কষ্টসাধ্য, প্রায় অচল অবস্থা, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় হচ্ছে না। গত বছর তিনি এইচএলএবি-২৭ পজেটিভে আক্রান্ত হলে শুভাকাঙ্খিগণের সহযোগিতায় কোন রকমে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরেন। অর্থাভাবে তার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা হয়নি।
অপরদিকে, করোনা ভাইরাসের সরকারী বিধি নিষেধে তার সংসারের আয়ের মাধ্যম-স্ত্রীর এনজিওর কাজ এবং ছোট ভাইয়ের ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানো প্রায় বন্ধ। মারাত্মক অভাবের প্রেক্ষিতে লোকলজ্জা ছুড়ে ফেলে অসুস্থ্য শরীরেও ইউনিয়ন পরিষদের ত্রাণের লাইনে গিয়ে দাড়ান তিনি। অথচ পেশায় তিনি সাংবাদিক। পেশাদারিত্বে আপোষহীন ও নির্ভীক। ওই সাংবাদিকের দুই সন্তান। একজন সপ্তম শ্রেণিতে, অপরজন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো দালান ঘরে তারা বসবাস করছে। দেয়ালের পলেস্তরা, ছাদের টালি ও জংধরা লোহার পাতের জং খসে ঝরে পড়ছে। তা ঠেকানোর জন্য তারা পলিথিন টানিয়ে পাঁকা দালান ঘরের ভিতরে তৈরী করেছে বিকল্প ঘর। সেই আবরণে বাসা বেধেছে সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, টিকটিকি, তেলাপোকা আর মাকড়সার দল। ঝড়-বৃষ্টি হলে তাদের অবস্থা হয় শোচনীয়। বৃষ্টির পানি ছাঁদ ও দেয়াল চুঁইয়ে ঘরের ভিতরের সবকিছু একাকার করে ফেলে। তখন ব্যাথার যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে সাংবাদিক কপিল ঘোষ বালতি নিয়ে পানি ঠেকাতে চেষ্টা করে। ততক্ষণে তার ঘরের বইপত্র, ছবি, পত্রিকা, সিডিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংরক্ষিত জিনিস ভিজে একাকার হয়। সংসারের অন্য সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে বস্তাবন্ধি জিনিসগুলো একবার এই খাটের তলা, আরেকবার অন্য চৌকিতে স্থানান্তর করার জন্য।
সাংবাদিক কপিল ঘোষ বলেন, ‘কখন মরে যাবো জানিনা। তবে দুঃখ এই যে, নিজের চিকিৎসার জন্য এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বড় ছেলের চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর দুইটি আবেদন করেছিলাম। প্রায় এক বছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু সেই আবেদনের কোন উত্তর পাইনি। তবু অপেক্ষায় আছি হয়তো একদিন সহযোগিতা আসবে!’
১৯৯৮ সালে কপিল ঘোষ সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইব) হতে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা পাশ করেন। দৈনিক যুগান্তর, সমকাল পত্রিকায় ইতোপূর্বে কাজ করেছেন। প্রায় ১০ বছর উন্নয়নকর্মী ছিলেন। বর্তমানে তিনি কালের কন্ঠ পত্রিকায় চিতলমারী উপজেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন।
তার পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে কপিল ঘোষ অসুস্থ্য হলে তার শুভানুধ্যায়ী ও উপজেলা প্রশাসনের আর্থিক সহায়তায় তাৎক্ষনিকভাবে চিকিৎসা করানো হয়। বর্তমানে অবস্থা শোচণীয়। ওষুধ-পথ্য দুরে থাক। তিন বেলার পরিবর্তে দুই বেলা প্রয়োজনীয় খাবার যোগাড় করাও তাদের জন্য কষ্টসাধ্য।
সাংবাদিক কপিল ঘোষ আরও জানান, করোনার এই দুর্যোগ কালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের নিকট খাদ্যের অভাবের আবেদন জানিয়ে পেয়েছেন দুই হাজার টাকা। বাগেরহাট ফাউন্ডেশন দিয়েছে আরো দুই হাজার টাকা। সুরশাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গোপনে এক রাতে দিয়েছে শিশুদের খাবার। উপজেলা প্রশাসন হতে প্রেস কাবে পাঠানো ত্রাণ হতে পেয়েছে দশ কেজি চাল, আধা লিটার তেল, এক কেজি আলু ও ডাল। প্রেস কাবের কয়েক সাংবাদিক বন্ধু মিলে তাকে দিয়েছে কুড়ি কেজি চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি। অসহায় এই সাংবাদিক ও তার পরিবার এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা জরুরী।