শিরোনাম:
●   নিখোঁজের ৪ ঘন্টা পর পুকুরের পানিতে মিললো শিশুর মরদেহ ●   হাতের নাগালেই মিলছে বিনামূল্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ●   নবীগঞ্জে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার-২ ●   সংবিধান বাতিল বা পরিবর্তন করা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয় ●   রাঙামাটিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মানববন্ধনে পাহাড় থেকে সকল বৈষম্য নিরসন করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বৈষম্য নিরসন কমিশন গঠনের দাবি ●   রাউজানে প্রবাসী যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ●   নবীগঞ্জে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু ●   আগামী কাল সোমবার সকালে রাঙামাটি বিসিক এর সামনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মানববন্ধন ●   কাউখালীতে যুবদলের ৪৬ তম প্রতিষ্টাতা বার্ষিকী পালন ●   পানছড়িতে ৫৩ তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপিত ●   ঘোড়াঘাটে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কর্মী সম্মেলন ●   বিজিবির অভিযানে অস্ত্র মাদকসহ চার জন আটক ●   তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে বিএনপির বিক্ষোভ ●   সামাজিক সংগঠন ‘ইগনাইট মিরসরাই’র আত্মপ্রকাশ ●   আত্রাইয়ে জাতীয় যুব দিবস পালন ●   অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সকল উসকানির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে ●   রাউজানে আগুনে ৫ দোকান ভস্মিভূত ●   ঘোড়াঘাটে দৈনিক সকালের বাণীর ১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ●   রাঙামাটিতে জাতীয় যুব দিবস পালিত ●   ছেলেকে ফিরে পেতে এক মায়ের আকুতি ●   কাউখালীতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য অপহরণ ●   ঈশ্বরগঞ্জে জাতীয় যুব দিবস পালিত ●   মিরসরাইয়ের বিএনপি নেতা হত্যার মামলায় ছাত্রলীগ নেতা ফিরোজ গ্রেফতার ●   আত্রাইয়ে নবাগত ইউএনও‘র যোগদান ●   খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ’র সড়ক অবরোধ পালিত ●   মিরসরাইয়ের ধুমে পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু ●   কুষ্টিয়াতে আাধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা ●   ঈশ্বরগঞ্জে জিয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার-২ ●   নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ ●   সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল নিশ্চিত করতে হবে
রাঙামাটি, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১



CHT Media24.com অবসান হোক বৈষম্যের
বুধবার ● ১ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » করোনাকালে ব্যবহার করা যায় ‘ইতিবাচক’ নামের মহৌষধ
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » করোনাকালে ব্যবহার করা যায় ‘ইতিবাচক’ নামের মহৌষধ
বুধবার ● ১ জুলাই ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

করোনাকালে ব্যবহার করা যায় ‘ইতিবাচক’ নামের মহৌষধ

---ফজলুর রহমান :: এক যুবক তার সব কাজেই ব্যর্থ হচ্ছিল। তার ব্যর্থতার কারণ কেউ বুঝতে পারছিল না। কারণ, তার সব ছিল। তার জন্ম হয়েছিল একটি প্রভাবশালী পরিবারে। তার শিক্ষা ছিল খুবই উন্নত মানের। ভালো ভালো সব জায়গায় তার দারুন যোগাযোগ ছিল।

কিন্তু তারপরও সে কিছুতেই সফল হতে পারছিল না। যে যা-ই করছিল, তাই নষ্ট হচ্ছিল। বহু চেষ্টার পরও সে সফল হতে পারছিল না। চেষ্টা করতে করতে একটা সময়ে সে তার ব্যর্থতার কারণ বুঝতে পারল। এবং এটা বুঝতে পারার পর তার জীবন বদলে গেল। অবশেষে সে সাফল্যের দেখা পেল। তার স্বভাবও বেশ বদলে যেতে লাগলো।

যখন সেই যুবককে তার সাফল্য ও তার ব্যক্তিত্বের হঠা‌ৎ পরিবর্তনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যুবকটি উত্তর দিয়েছিল: খুব সাধারণ একটি জিনিস তার জীবন বদলে দিয়েছে। জিনিসটা হল, বিশ্বাস। সে বলেছিল, “বিশ্বাস জাদুর মত কাজ করে। কেউ যদি বিশ্বাস করে তার সাথে খারাপটা ঘটবে, তাহলে বেশিরভাগ সময়েই তার সাথে খারাপটা ঘটে। আর ভালোটা বিশ্বাস করলে ভালোটা ঘটে।’

দি পাওয়ার অব পজিটিভ থিংকিং বইয়ের এর লেখক নরম্যান ভিনসেন্ট পেইল এ বিষয়ে বলেন, “এটা আসলে জাদু নয়। মানুষ যখন ভালোটা আশা করে কাজে নামে, তখন তার আচরণে পজিটিভ ভাব প্রকাশ পায়। সে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করে, এবং অন্যরাও তাকে পছন্দ করে। আমাদের উচি‌ৎ সন্দেহ ও শঙ্কার ওপর ফোকাস না করে, আশা ও সম্ভাবনার দিকে ফোকাস করা। তাহলেই আমাদের আচরণ ও কাজের ফলাফল বদলে যাবে। তবে যারা মনে করেন, পজিটিভ থিংকিং বা ইতিবাচক চিন্তা করার মানে নেতিবাচক বিষয়গুলোর প্রতি চোখ বন্ধ রাখা – তারা আসলে ভুল করেন। নেতিবাচক বিষয়গুলোকে পুরোপুরি এড়িয়ে গেলে বরং বিপদ আরও বেড়ে যায়।”

বলা হয়ে থাকে যে, “নদীর অপর পাশের ঘাস সব সময় একটু বেশি-ই সবুজ দেখায়”। রবীন্দ্রনাথও শিখিয়ে গেছেন,”নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।”

আসলে বিপুল তৃষ্ণায় আমৃত্যু পথচলার দেখা যায় জীবনযাপনে। হাহাকার দেখা যায় সবখানে। তবে এর মাঝেও থাকে রাশি রাশি হাসির উপলক্ষ, আনন্দের ক্ষণ, খুশির খবর। যা মনকে আলোড়িত করে। নতুন প্রেরণায় আন্দোলিত করে। প্রাপ্তির খাতাটি বড় হয়।

ডাচ সংস্কৃতিতে একটি প্রবাদ রয়েছে-”গেন গ্রোটার ফারমাক ডান লিডফারমাক” অর্থাৎ, “দুর্ভোগের চেয়ে বড় বিনোদন আর কিছু নেই,” বিবিসিকে এমনটা বলছিলেন নেদারল্যান্ডসের ব্রেডার বাসিন্দা অ্যাড ডি লিউ। কিন্তু তার মতে, তার বাবা তাকে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস শিখিয়েছেন। আর তা হলো, নিজের দুর্ভাগ্য নিয়ে হাসো। অ্যাড এটি মেনে চলেন এবং বলেন যে, তার জীবন ‘একটি বড় ধরণের আনন্দোৎসব’।

আসলেই জীবন একটা সুখ-দুঃখের ভ্রমণ। কারণ এখানে এখানে প্ল্যান এ ব্যর্থ হলেও সব সময়ই প্ল্যান বি থাকে। জীবনের এই দিকটাকে মনে রেখে ইতিবাচক থাকতে পারাতেই আছে অনেক সুফল। আজকের আলোচনা ‘ইতিবাচকতা’ নামের নেয়ামত নিয়ে। আর করোনাকালের এই সংকটে এইসব ইতিবাচকতাকে ধারণ করে মানসিক শক্তি বাড়ানো যেতে পারে।

ইতিবাচক চিন্তা কি?
আমেরিকান লেখক নরম্যান ভিনসেন্ট পেইল এর মাধ্যমেই পজিটিভ থিংকিং বা ইতিবাচক চিন্তার ধারণাটি মূলত বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পজিটিভ থিংকিং বা ইতিবাচক চিন্তার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন – “ইতিবাচক চিন্তার সংজ্ঞা দেয়ার বদলে আমি ইতিবাচক চিন্তা করা মানুষের সংজ্ঞা দিতে চাই। এটাই সহজ হবে। ইতিবাচক চিন্তাকারী (positive thinker) এমন একজন মানুষ, যিনি নেতিবাচক বা খারাপ বিষয় গুলো দেখতে পান। কিন্তু তিনি সব সময়ে মনে রাখেন, তিনি তাঁর নিজের চেষ্টায় এই নেতিবাচক বিষয়গুলো মোকাবেলা করে ভালো কিছু করতে পারবেন।”

ইতিবাচকতা আর নেতিবাচকতার পাঠ দিতে অন্যতম জনপ্রিয় হলো ‘গ্লাস তত্ত্ব ‘।
একটি গ্লাসে আধা গ্লাস পানি আছে।
ইতিবাচক মন বলবে,’গ্লাসটির অর্ধেক পানি ভরা।
অতি ইতিবাচক মন বলবে,’গ্লাসটির অর্ধেক পানি ভরা, আর বাকি অর্ধেক বাতাস ভরা’।
আর নেতিবাচক মন বলবে,’গ্লাসটির অর্ধেক খালি’।

এই ইতিবাচক চিন্তা কেন দরকার?

ইতিবাচক মনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে Mayo clinic in Rochester এর ১টি গবেষণায় কিছু রোগীকে পারসোনালিটি টেস্ট করা হয় যেখানে তাদের optimism ( আশাবাদ ) and pessimism ( দুঃখবাদ ) পরিমাপ করা হয় । ৩০ বছর ধরে এই রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং গবেষণার ফলাফলে এটা পাওয়া গেছে যে, optimistic দের গড় আয়ু বেশী এবং pessimistic দের গড় আয়ু তুলনামূলক কম । গবেষকেরা এটা খুঁজে পেয়েছেন যে, optimism মানুষের immune system কে শক্তিশালী করে এবং সুস্থ জীবন যাপনে সহায়তা করে । যারা optimistic তারা নিজেদের সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা করে এবং নিজেদের যত্ন নেয় । কিন্তু pessimistic রা অযথা নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা করে যা তঁদেরকে অসুস্থ করে ফেলে এবং তারা উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে । অনেক গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, যখন কেউ ইতিবাচক চিন্তা করতে থাকে তখন সে নিজেকে অনেক বেশী সুখী ভাবতে পারে এবং সে অনেক কিছুই অর্জন করতে পারে সহজেই ।

চিন্তা করার ক্ষমতাই মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করে তার নিজস্বতা বোঝাতে সাহায্য করে। মানুষ এর চিন্তাই পদ্ধতিই বলে দিবে সে কেমন ও তার সামগ্রিক ভালো দিকগুলো। আর ইতিবাচক চিন্তার বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতার দেখা পেয়েছেন গবেষকরা।

শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক চিন্তার বেশ প্রভাব আছে। কেউ জিতবে নাকি হারবে তার পিছনে যেমন ইতিবাচক/নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব আছে, তেমনি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে শারিরিক সুস্থতার উপরও ইতিবাচক বা নেতিবাচক চিন্তার প্রভাব বের করেছেন। এজন্যই ভালো জীবনযাপন করার জন্য, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ইতিবাচক চিন্তার চর্চা করা উচিৎ। এখন আমরা বুঝতে চেষ্টা করি ইতিবাচক চিন্তার কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারী দিকগুলো সম্পর্কে। বিশেষ করে দেখি ৮টি প্রধান স্বাস্থ্যগত উপকারিতা।

১। মেজাজ ঠিক থাকে।

মানুষ এর সফলতার ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক তার মেজাজ। ইতিবাচক চিন্তা মেজাজ এবং অন্যান্য চিন্তার পদ্ধতিকে উন্নত করে,যেগুলো সুখ ও ভালো সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। এটা মনকে সবসময় যথাযথ অবস্থায় রাখবে,যা মানসিক সমস্যার ঝুঁকি কমাবে।

২। দীর্ঘায়ু আসে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা আশাবাদী তারা যারা নেতিবাচক চিন্তা করে তাদের থেকে বেশি বাঁচে । ইতিবাচক হলে অন্যদের চেয়ে উচ্চরক্তচাপ,ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগে কম ভুগবে, রোগের দিকে কম ঠেলে দিবে। এই অবস্থাগুলোর ঝুঁকি কমে যাওয়ায় দীর্ঘ জীবন লাভ সম্ভব হয়।

৩। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।

গবেষণা মতে, ইতিবাচক চিন্তা আর স্বাস্থ্য সম্পর্কযুক্ত, আশাবাদ দেহকে সাহায্য করে সাধারণ ঠাণ্ডার মতো রোগের সাথে লড়াই করতে। সদা ইতিবাচক হলে ব্রেন শক্তিশালী হবে, যা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে, আরোগ্য লাভে সহায়ক হয়।

৪। বিপদ মোকাবেলার শক্তি।
ইতিবাচক মন কষ্ট সামলানোর ভালো পথ দেখাবে, চ্যালেঞ্জ জেতার প্রেরণা দিবে। কারণ, যখন দেহ একটা সময় বলবে এটা মোকাবেলা সম্ভব নয়,তখন মন বলবে এটা সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারবে অন্য কোন উপায়ে। ইতিবাচক মানসিকতা সেই উপায়টিও দেখিয়ে দেবে।

৫। কোলেস্টেরল কমায়।

উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডায়েট এবং ব্যায়াম করা কোলেস্টেরল কমানোর খুব ভালো উপায়। কিন্তু শুধুমাত্র আশাবাদী হয়েই কোলেস্টেরল কমাতে পারা যায়! Harvard School of Public Health ২০১৩ সালে একটি গবেষণা করে, যার ফলাফল পরে The American Journal of Cardiology তে এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাদের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, মধ্য বয়সী যারা এতে অংশ নিয়েছিল তাদের যারা আশাবাদী হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের উচ্চমাত্রার ‘ ভালো ‘ কোলেস্টেরল আছে। ‘মন্দ’ কোলেস্টেরলের বিপরীতে যা খুব স্বাস্থ্যকর।

৬। উচ্চ রক্তচাপ কমায়।

উচ্চ রক্তচাপ এর অন্যতম কারণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। ইতিবাচক চিন্তা উচ্চ রক্তচাপ কমাবে, কারণ ইহা ঐ চাপ কমায় । যতো কঠিন সমস্যাই হোক না কেন তা মোকাবেলার শক্তি পাওয়া যায়।যদি কেউ বিফল হয়, কিন্তু আশাবাদী হয় যে পরে সফল হবে, তাহলে এটা চাপ ও অন্য মানসিক সমস্যার ঝুঁকি কমাবে।

৭। দৈহিক যন্ত্রণার সহ্যশক্তি বৃদ্ধি।

ইতিবাচক চিন্তা অনেক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়। জীবনে যখন কোন খারাপ কিছু ঘটে তখন কম ঘাবড়ে যায়। আশাবাদী হলে শারীরিক ব্যথাও ভালোভাবে নিতে পারা যায়। ইতিবাচক চিন্তা লড়াই করার আরো শক্তি দিবে সেই সব ব্যথার বিরুদ্ধে যা হাড়ভাঙ্গার, গলার ক্ষত ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথার কারণে হয়।

৮। তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
Canadian Medical Association Journal এর গবেষণা থেকে জানা যায়, ৬০ কিংবা তাঁর বেশি বয়সের মানুষ যারা হতাশাবাদী তাদের চলৎশক্তি খুব দ্রুত কমতে থাকে। এই গবেষণা যাদের নিয়ে করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা মাঝারি এবং অল্প হারে জীবনটাকে উপভোগ করছে, তাদের মধ্যে চলাফেরা ও শারিরিক দিকে বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দেয়। কিন্তু যারা তাদের চেয়ে অনেক সুখী তারা এই সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারছে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে শুধুই বেশি দিন বাঁচা যায়, তা নয়, একই সাথে বার্ধক্যের লক্ষণগুলোও দেরিতে আসবে।

এখন দেখা যাক কিভাবে ইতিবাচক থাকা যায়? বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত কিছু টিপস খতিয়ে দেখা যাক।

১. যা আছে তার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন।

“একদা ছিল না জুতা চরণ যুগলে দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।”
নিজের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার সবচেয়ে ভালো উপায়টি হলো, যা রয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা। পরিকল্পনামাফিক জীবনটা সবসময় চলে না। এভাবে মাপলে সমস্যায় ভরে যাবে জীবন। তারপরও মনে রাখতে হবে, নিজের অনেক কিছুই রয়েছে যা অনেকের নেই।

২. নিজের ওপর থেকে মনোযোগ কমানো।

কারো গুরুত্বপূর্ণ কাজই যদি হয় নিজের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করা, তাহলে নিজেকে আরো বেশি অসহায় মনে হবে। ভালো মুহূর্তেও জীবনটাকে বিষাদ মনে হবে। নিজের ওপর থেকে অতিরিক্ত মনোযোগ সরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা কেউই নিখুঁত নই৷ কিন্তু আমরা বার বার বাকিদের সঙ্গে নিজের তুলনা করি৷ নিজের যা নেই, তা নিয়েই যেন বেশি মাথা ঘামাই। আর এসব ভাবনাই আমাদের চিন্তাশক্তিকে নেতিবাচক করে তোলে। হতাশ হয়ে পড়ি। বেঁচে থাকার আসল মজাটা চলে যায়। সুখী হওয়া কঠিন হয়।

৩. শরীর চর্চা।

এটা প্রমাণিত যে, শরীর চর্চায় শুধু দেহ নয়, মনটাও আশার আলোতে ভরে ওঠে। এতে দেহে হরমোনের প্রবাহ বাড়ে। এতে দুশ্চিন্তা দূর করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠায় সামর্থ্য যোগায়।

৪. সৃষ্টিশীল কাজ।

খারাপ সময়ে সৃষ্টিশীল কিছু নিয়ে মেতে থাকা যায়। এতে নতুন সম্ভাবনা ও কৌতুহল জন্মায়। মন ও মস্তিষ্ক ভালো কাজ পায়। এতে বর্তমানের সমস্যার নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে সরে থাকবে মন।

৫. ইতিবাচক ভাষা ব্যবহার

“হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় একটি মাত্র পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে”– লাও ঝু, চীনা দার্শনিক।

বাজে সময়ে মেজাজ খারাপ করে নেতিবাচক ভাষা ব্যবহার করা, উচ্চস্বরে আক্ষেপ প্রকাশ করা পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে দেবে। তারচেয়ে সব খারাপ দিক বাদ দিয়ে সেখানে একটি ভালো সম্ভাবনাকে আনতে পারলে অনেক কিছুই ভালো হয়ে যাবে।

৬. সাহায্য নেয়া।
“সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে ”
সব সমস্যা একা মোকাবিলা করা যায় না। কাজেই বাজে পরিস্থিতিতে কাছের মানুষদের সহযোগিতা নেয়া যায়। তারা হয়তো সমস্যা অনুধাবন করতে পারবে এবং ভালো পরামর্শ দিতে পারবে। তাদের সহায়তায় ভালো কোনো উপায় বের হয়ে আসতে বাধ্য।

৭। ইতিবাচক মানুষের সাথে মিশুন
“সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”
নেতিবাচক মানুষের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করলে চিন্তাশক্তির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ধীরে ধীরে চিন্তাও নেতিবাচক দিকে রূপ নেবে এবং যেটা জীবনে ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে। ইতিবাচক মানুষের সাথে মেলামেশা করলে চিন্তাশক্তিও তাদের সংস্পর্শে পজেটিভ হবে। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনে চলার পথে কাজে লাগিয়ে উন্নতি সাধন করা সম্ভব।

৮। অন্যদের সাহায্য করা
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন মন সকলি দাও/তার মত সুখ কোথাও কি আছে?”
অন্যদের সাহায্য করা নিজেদের সুখের চাবিকাঠি হতে পারে। এটাও আনন্দ দেয়, আরও স্বাস্থ্যবান করে তোলে, ইতিবাচক চিন্তাশক্তি আরো প্রখর করে তোলে। কেননা অন্যদেরকে সাহায্য করলে আমাদের মন অচিরেই খুশি হয়ে যায়। আর মন খুশি থাকলে চিন্তাশক্তিও পজেটিভ হিয়। নিজের জন্য করলে যতটা না খুশি লাগে অন্যের জন্য করতে পারলে ভিতরে নিজের জন্য গর্ব জন্মায় আর এটাই আমাদের ইতিবাচক চিন্তা করতে সাহায্য করে।

৯। ইতিবাচক উক্তি পড়া।
“চোখের বদলে চোখ পৃথীবিটাকেই একদিন অন্ধ করে দেবে ‘-মহাত্মা গান্ধী॥
ইতিবাচক উক্তি পড়লে সেই উক্তিগুলো চিন্তাশক্তিকে প্রভাবিত করবে। উদ্ভুদ্ধ করবে ইতিবাচক চিন্তা করতে। সঠিক রাস্তা দেখাবে। অন্যদিকে নেতিবাচক কিছু পড়লে সেটাও আমাদের প্রভাবিত করে, কিন্তু সেটা খারাপ দিকে। তবে শুধু পড়লেই হবে না, সেই অনুযায়ী কাজ করলেই চিন্তাশক্তি ইতিবাচক হবে।

১০। নিজেকে ক্ষমা করতে শিখা।
“মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়”
নতুন কোন কাজে হাত না দিয়ে নিজেকে দোষ দিয়ে বসে থাকে অনেকেই। তবে নিজেকে যদি ক্ষমা করে, বদলে ফেলে আপন উদ্যমে কাজে নেমে পড়লে তখন ফলাফলটা ভিন্ন হতো। তাই নিজেকে দোষারোপ না করে নিজেকে ক্ষমা করার মধ্যমে নতুন করে কাজে নেমে পড়লে জীবন সফলতায় ভরে উঠবে। আর এই প্রক্রিয়াই ইতিবাচক চিন্তা করতে সহায়তা করবে।

১১। ভুলের উৎস খুঁজে বের করা।

“ভুল সবই ভুল/এই জীবনের পাতায় পাতায়..”

ইতিবাচক চিন্তার মানে এই নয় যে, ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে হবে বা ভুলগুলোকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে। আসলে এর মানে হলোভুলগুলো বা নেতিবাচক দিকগুলোকে খুঁজে বের করে ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে সেই ভুলের সমাধান করে এগিয়ে চলা।

১২। ব্যর্থতাকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহন ।

” Failure is the pillar of success”

ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা লাভ করে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছানো সম্ভব। ব্যর্থ হয়ে পথচলা বন্ধ না করে, সেই ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে, সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে গেলে বিজয় নিশ্চিত। তাই ব্যর্থ হলেই থেমে যাওয়া যাবে না। এটাকে নতুন সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

জীবন হলো নিত্য আবেগের হাট-বাজার। কোন আবেগই মূলত ভাল বা খারাপ নয়। সমস্ত আবেগই প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। সেই আবেগের মাত্রা ও বহিঃপ্রকাশের ধরণের উপর নির্ভর করে এই ভাল বা খারাপ হওয়া নির্ভর করে। তবে সেই আবেগগুলোর ইতিবাচক রূপ থাকলে জীবন নামক গোলকধাঁধায় বেঁচে থাকা সুন্দর হয়।

মুদ্রার যেমন এপিঠ ওপিঠ রয়েছে তেমনি সব কিছুরই ২টি দিক রয়েছে। জীবনের দীর্ঘ চলার পথে যেমন ভালো সময় আসে ঠিক তেমনি আসে খারাপ সময়ও।

খারাপ সময়কে অতিবাহিত করতে সময় নিতে হবে। আগেই নেতিবাচক চিন্তা করে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।

অপেক্ষা করতে হবে খারাপ সময়টি কাটার জন্য, নিজেকে সময় দিতে হবে। আর এটি ইতিবাচক চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। আত্মা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ক্ষত সারাতে সহয়তা করে। আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

ইতিবাচক চিন্তার শক্তি বেশ প্রখর। পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে দুইবার ঘটে; একবার চিন্তায় আর একবার বাস্তবে। অর্থাৎ একবার ভেতরে অন্যবার বাইরে। মানুষ যা কিছু করে তার আগে সে চিন্তা করে। চিন্তা যেমন হবে কাজ তেমন হবে। একটি কাজ বার বার করলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। অভ্যাসের সমষ্টি তার চরিত্র এবং চরিত্রই নিয়ে যাবে তার গন্তব্যে। অর্থাৎ একজন মানুষের গন্তব্য সুখের জায়গায় নাকি দুঃখের জায়গায় হবে তা নির্ভর করবে তার চরিত্রের ওপর। চরিত্র নির্ভর করে অভ্যাসের ওপর আর অভ্যাস নির্ভর করে কর্মের ওপর। কর্ম নির্ভর করে চিন্তার ওপর। সুতরাং চিন্তা যেমন হবে বাকি সব ধাপ তেমনই হবে। জীবনকে সুখ শান্তিময় করতে আর্থাৎ সফল ও সার্থক জীবনের জন্য চিন্তাকে ইতিবাচক করতেই হবে। ইতিবাচক চিন্তা ও বিশ্বাস মানুষকে ইতিবাচক বাস্তবতার দিকে নিয়ে যায়। ইতিবাচক চিন্তা করার অভ্যাস বড় লক্ষ্য ঠিক করার ও তা অর্জন করতে কাজ করার আত্মবিশ্বাস যোগাবে।

এই করোনাকাল অনেক বেদনায় ভরা। অনেক নেতিবাচক খবর ও পরিস্থিতি চারপাশে। অনেক কিছু হারিয়ে ফেলছে মানুষ। তারপরও বলা হচ্ছে, যতোটা সম্ভব ইতিবাচক থাকতে পারাটাই হবে মহৌষধ। এভাবে থাকতে পারলে মানুষের জয় হবেই। কারণ, অতীতে এর চেয়েও বড় দূর্যোগ জয় করেছে মানুষ। আবারো আলো নিয়ে আসবে মানুষ। কারণ চিন্তা করার ক্ষমতায় মানুষ অন্য প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ। মানুষই একমাত্র প্রাণী যাঁরা মহামারীর বিরুদ্ধে প্রতিষেধক বানিয়ে বারবার জয়ের হাসি হাসতে পেরেছে। এই সত্যিটা বলে গেছেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে-“মানুষ পরাজয়ের জন্য সৃষ্টি হয়নি। তাকে হয়তো ধ্বংস করা যায়, কিন্তু হারানো যায় না।”–
শেষটা করি এ. আর. রেহমান-এর কিছু কথা পড়ে। ভারতের অস্কার বিজয়ী সংগীত পরিচালক যা বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে।

“যখন জীবনে কোনো সংকটময় মুহুর্ত আসবে তখন মনকে শান্ত করে ফেলতে হবে। গতি কমিয়ে আনতে হবে। সংকট সমাধানে যে পদক্ষেপই নাও না কেন তা দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করতে হবে। শুধু একটা কথা মনে রাখবে, কখনো রাতারাতি কোনো পরিবর্তন আশা করোনা। তোমার পুরষ্কার ঠিক সময়েই তোমার হাতে পৌঁছাবে।”

লেখক : ফজলুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)