শনিবার ● ৪ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » হিজড়াদের তান্ডবে করোনার দুর্যোগের মধ্যে অতিষ্ঠ মানুষ
হিজড়াদের তান্ডবে করোনার দুর্যোগের মধ্যে অতিষ্ঠ মানুষ
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাচ্চা লাচাইতে (নাচাতে) দে, নইলে তোরা বিপদে পড়বি ! বাচ্চা পানিতে পড়বো, করোনায় মরবো। এমন সব ভয়ঙ্কর অভিশাপ দিয়ে নবজাতকের পরিবারে ভীতির সৃষ্টি করে হাজার হাজার টাকা, কাপড়চোপড়, চাল-ডালসহ বিভিন্ন মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছে হিজড়ার দল। গত এক মাস ধরে করোনার এই দুর্যোগের মধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলার গ্রামাঞ্চলে তান্ডব চালাচ্ছে এই নপুংসক জাতি। এ পর্যন্ত ৫০ বাড়িতে হানা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
চাহিদা পুরণ না করলে বাচ্চা ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হাতে-পায়ে ধরে এমনকি বাচ্চা লুকিয়ে রেখেও রেহাই পাচ্ছে না সন্তানের মা-বাবারা। কমিশনে রাখা খোঁজারুরা কোন বাড়ি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে তার সন্ধান দিয়ে দিচ্ছে হিজড়াদের। করোনায় কর্মহীন, দিনমজুর ও অসহায় অনেক পরিবার হিজড়াদের অনৈতিক দাবি মেটাতে গিয়ে পড়েছে চরম সংকটে। তাদের অত্যাচারে গ্রামের মানুষ ও নবজাতকের পরিবার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
আগে হিজড়ারা শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারের দোকানদারদের কাছ থেকে তোলা ওঠাতো। পাশাপাশি বাচ্চাদের নাচিয়েও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিত। কিন্তু বর্তমানে করোনার কারণে তাদেরকে আর হাটবাজারে দেখা যায় না। এখন তারা গ্রামেগঞ্জে ঘুরে নবজাতকের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর ভোলার পাড় গ্রামের ভ্যানচালক আলামিন হাওলাদার জানান, তার একমাত্র মেয়ে মরিয়মের বয়স দুই মাস। গত বৃহস্পতিবার (২জুলাই) দুপুরে তিন হিজড়া তার বাড়িতে হাজির হয়ে তিন হাজার টাকা দাবি করে। একদিন ভ্যানের চাকা না ঘুরলে যার সংসারের চাকাও অচল হয়ে পড়ে, তার কাছে তিন হাজার টাকা দাবি করায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। পরে হাতে-পায়ে ধরে এক হাজার টাকা দিয়ে কোনোমতে রক্ষা পান আলামিন।
ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক মো. জাকারিয়া আকন জানান, এক সপ্তাহ আগে হিজড়ার দল বাড়িতে ঢুকে তার এক মাস বয়সের ছেলে জারিফকে জোর করে তুলে নিয়ে ঝাকিয়ে নৃত্য শুরু করে। এতে তার বাচ্চা ভয়ে চিল্লাতে থাকে। তারা পাঁচ হাজার টাকা দাবি করলে দুই হাজার ৫০০টাকা দিয়ে রেহাই পান।
ভোলার পাড় গ্রামের চায়ের দোকানী মনি শংকর হালদার জানান, করোনার মধ্যে তার দোকানে তেমন বেচাবিক্রি নেই। সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। এরই মধ্যে হিজড়ার দল তার বাড়িতে গিয়ে ১০হাজার টাকা দাবি করে। এতো টাকা কোথায় পাবেন বলতেই তার আট মাসের পুত্র সন্তান সূর্যকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে অনেক কষ্টে তিন হাজার ৫০০টাকা দিয়ে বাচ্চাকে ছাড়িয়ে রাখেন।
মাসখানেক আগে ধানসাগর গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী সুমী রাণীর একমাত্র কণ্যা সন্তান ছয় মাসের শ্রেয়সীকে নানা রকম অভিসাপ দিয়ে ১২হাজার টাকা দাবি করে থাকে তিন হিজড়া। তারা সুমীকে বলে, মেয়ে লাচাইতে দে, নইলে তুই বিপদে পড়বি। করোনায় ধরবো। তোর মেইয়ে পানিতে পড়বো।
হিজড়াদের এমন অভিশাপে ভীত হয়ে পড়েন সুমী ও তার পরিবার। বাচ্চা নাচাতে না দেওয়ায় এবং তাদের দাবি পুরণ না করায় শরীরের কাপড় খুলে উদ্দাম নৃত্য করতে থাকে হিজড়ারা। পরে চার হাজার টাকা ও সাত কেজি চাল দিয়ে বিদায় করা হয়।
এছাড়া, রাজাপুর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রুহুল আমীন শিকারীর বাড়ি থেকে এক হাজার টাকা ও আড়াই হাজার টাকা দামের একটি শাড়ি, ভোলার পাড়ের পান-সিগারেটের দোকানী কবির বয়াতীর বাড়ি থেকে ৫০০টাকা, পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের দিনমজুর নজরুল হাওলাদারের বাড়ি থেকে এক হাজার টাকা, রাজাপুর গ্রামের দিনমজুর মো. রাজা হাওলাদারের বাড়ি থেকে ৬০০টাকা, চাল-ডাল এবং ধানসাগর গ্রামের দিনমজুর আলমগীর হাওলাদারের বাড়ি থেকে ৫০০টাকা এবং সাত কেজি চাল হাতিয়ে নেয় ।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের ১নম্বর উত্তর রাজাপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাকির খান ও ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সাজেদুর রহমান আজাদা জানান, গত এক মাসে তাদের দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কমপক্ষে ৫০বাড়িতে হানা দিয়েছে হিজড়ারা। করোনার এই মুহূর্তে অনেক গরীব মানুষের সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের অস্বাভাবিক আচরণে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মানুষ। এদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই দুই জনপ্রতিনিধি।
শরণখোলা থানার ওসি এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বলেন, এব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। তবুও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে। তবে, এ ব্যাপারে হিজড়া দলের কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে দস্যুদমন ও বনের বনজ সম্পদ রক্ষায় পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু
বাগেরহাট :: বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে দস্যুদমন ও সুন্দরবনের বনজ সম্পদ রক্ষায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে মোংলা বন্দরের ওয়াটার জেটির পশুরনদী সংলগ্ন এলাকা থেকে বাগেরহাট পুলিশ সুপারের তত্বাবধানে এ অভিযান শুরু করা হয়। মোংলা থানা পুলিশের ২০ সদস্যের একটি দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সুন্দরবনসহ উপকুলীয় এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করবে। যা মোংলা থেকে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন হিরোনপয়েন্ট পর্যন্ত তাদের টহল চলমান থাকার কথা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বনের অমুল্য বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রানী রক্ষায় বহু পদ্ধতি ব্যাবহার করা হচ্ছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে, কিন্ত কোনটাই কাজে আসছে না। পাচার হচ্ছে সুন্দরী,পশুর,বাইনসহ বহু মুল্যবান গাছ। বনের গহীন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অসংখ্য বন্যপ্রানী। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় বনের মৎস্য সম্পদ ও সুন্দরবনের বণ্যপ্রানী শুণ্যের কোঠায় নেমে আসবে।
সূত্র থেকে জানা যায়, বিশ্ব ঐতিহ্য “ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড” হিসেবে স্বীকৃত এই বনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে বাঘ, বানর, চিত্রা ও মায়া হরিণ, বন বিড়াল, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ডলফিন, লোনা পানির কুমির, বন্য শুকর ও উদবিড়ালসহ ৩৭৫ প্রজাতির প্রাণী। যা এখন প্রায়ই বিলুপ্তির পথে।
বাগেরহাট পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, সুন্দরবনের মধ্যে চোরা শিকারীরা বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বাঘ) শিকার করে তার চামড়া, হাড় ও মাংশপেশী বেশীদামে বিক্রি করছে। এছাড়াও বিভিন্ন কারনে নোনা পানির কুমিরও মারা পড়ছে। প্রতিনিয়ত চোরাই ভাবে মায়া ও চিত্র হরিন জাল ও ফাদঁ পেতে শিকার করছে। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন থেকে এ মায়াবী হরিনের বিচরন। এক শ্রেনির হরিন শিকারীরা অসাধু কিছু স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় জেলে বেশে বনের গহীনে প্রবেশ করে। বনের মধ্যে অস্ত্র বা ফাঁদ পেতে অহরহ শিকার করছে হরিন যা লোকালয় এনে বেশী মুল্যে বিক্রি করছে তারা।
তাছাড়া জেলেরবেসে বনে প্রবেশ করে নদী ও খালে গিয়ে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে। সুন্দরবনের খালের মধ্যে বিষ প্রয়োগ করলে শুধু মাছ নয় এখানে যা কিছু থাকে সব কিছুই মরে যায়। আর এ বিষ যুক্ত মরা মাছ অন্য পশুপাখী খেলে সেগুলোও মারা যায়। যার ফলে বনের পরিবেশ নষ্টসহ ক্ষতি হয় অপুরনীয়।
একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানুষসৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনের প্রাণীকুল সংকটের মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যেও মানুষের নিষ্ঠুরতা। এ বনে নানা প্রজাতির পশুপাখী ছাড়াও রয়েছে মৎস্য সম্পদের ভান্ডার, যা এ বনের জন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবনের ভুমিকা অপরিসীম। তাই এ বনের বিপুল পরিমাণ গাছপালা ও পশুপাখি রক্ষার জন্য বিশেষ করে সরকারের নির্দেশনা মতে চলতি দুই মাস মৎস্য সম্পদের পাশাপাশী নানা অপরাধ মুলক কর্মকান্ডসহ বনের দস্যুদমন ও বনজ সম্পদ রক্ষায়ও এখন থেকে কাজ করবে পুলিশ। তাই এ অভিযান অব্যাহত থাকার ঘোষনা দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মোংলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আসিফ ইকবাল, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
অসুস্থ দিনমজুর সোবাহান চিকিৎসার সহায়তা চান
বাগেরহাট :বাগেরহাটের কচুয়ার এক অসুস্থ দিন মজুর এর বর্তমানে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন। কচুয়া উপজেলার বাধাল গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে সোবাহান শেখ দিন মজুরের কাজ করতেন। প্রায় ৬ মাস আগে বিদ্যুতের সক লেগে তার ডান পা অকেজো হয়ে যায়। খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসা করিয়েছেন এবং বর্তমানে চিকিৎসা চলমান আছে।
এপর্যন্ত চিকিৎসা করাতে দরিদ্র পরিবারের অনেক আর্থিক খরচ হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন তার উন্নত চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। বর্তমানে মহামারি করোনার কারনে কোন ধরনের আয় করতে পারছেন না। গরিব এ মানুষটির ব্যায় ভার বহন করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। তাই তার জীবন বাঁচাতে আর্থিক সাহায্য দরকার। স্ব-হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে তিনি তার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছেন। সাহায্য পাঠানোর মাধ্যম- ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার:-বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বাধাল বাজার শাখা, কচুয়া, বাগেরহাট, হিসাব নং-৮৭২১/৮০,বিকাশ নাম্বার:- ০১৮৬১৩০৩১১৬ (পার্সোনাল)।