শনিবার ● ৪ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » কৃষি » করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঝিনাইদহ খামারিরা
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঝিনাইদহ খামারিরা
মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের আর এক মাসেরও কম সময় বাকি। প্রতিবছর এই সময়টায় ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে উঠেন পশু ব্যাপারী, খামারি ও হাটের ইজারাদাররা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসে পশু বিক্রির হাট। কিন্তু এ বছর নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যেনো পাল্টে গেছে সেই চিরচেনা চিত্র। নেই কোনো বেপারী, নেই পশু বেঁচা-কেনার ব্যস্ততা। এমতাবস্থায় পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক পশু পালক ও খামারিরা। তেমনি একজন প্রান্তিক পশু পালনকারী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষক রবিউল ইসলাম। গত মঙ্গলবার উপজেলার বৈডাঙ্গা পশুর হাটে গরু বিক্রি করতে নিয়ে যান তিনি। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এবার একটি মাত্র গরুই লালন-পালন করেছেন তিনি। আশা করেছিলেন ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করবেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দুই মাস সপ্তাহিক এ হাটটি বন্ধ থাকার পর পুনরায় বেচাকেনা চালু হলেও আসেনি তেমন ক্রেতা। রাজধানী থেকেও পশু কিনতে আসেনি কোনো ব্যাপারী। আর দুই একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী যারা হাটে এসেছিলেন তারা গরুটি কিনতে চেয়েছেন মাত্র ৭০ হাজার টাকায়। ফলে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় এ কৃষককে। শুধু রবিউল নয়, তার মতো হতাশ হয়ে হাট থেকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে আরো অনেক কৃষককেই। স্থানীয়রা জানান, এই হাটে পশু বিক্রি করতে আসেন ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রান্তিক কৃষক ও খামারিরা। মূলত দুই ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করেই তারা গরু লালন-পালন ও বিক্রি করে থাকনে। গত ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখে প্রশাসন এ হাট বসতে না দেওয়ায় এখন পশুর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাই এবার কোরবানির ঈদেও গরু বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে খামারি ও পশু পালকদের মনে। একই অবস্থা চুয়াডাঙ্গার গরু ব্যবসায়ীদেরও। জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার জাহাপুর গ্রামের খামারি মো. আউয়াল-উজ-জামান দুই পুরুষ ধরে গরু লালন-পালন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সারা বছরের লাভ-ক্ষতি পুষিয়ে নেন কোরবানির ঈদে। এ বছরও কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ২০৭টি গরু পালন করেছেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি গরু বিক্রি করেছেন। অথচ গত বছর ঈদে বিক্রি করেছিলেন ৭২টি গরু। এমতাবস্থায় গরু বিক্রি নিয়ে চিন্তিত তিনি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার দেশে ১ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার ৫০০টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এর মধ্যে ৪২ লাখ ৩৮ হাজার হচ্ছে গরু ও মহিষ, ৪ হাজার ৫০০টি হচ্ছে উট ও দুম্বা এবং ৬৭ লাখ হচ্ছে ছাগল ও ভেড়া। গত বছর ঈদুল আজহায় দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিলো ১ কোটি ১৮ লাখ। সেই তুলনায় এবার পশুর সংখ্যা ৯ লাখ কম। কিন্তু করোনার কারণে এবার কোরবানির পশুর চাহিদাও কম। তাই ঈদে পশু সংকট দেখছেন না অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) একেএম আরিফুল ইসলাম জানান, এবারের ঈদে কোরবানিযোগ্য পশুর যোগান কম হলেও তা চাহিদার তুলনায় কম হবে না। তারা করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে পশু বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পশুর হাট বাড়ানোর জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে গরুর খাদ্যের দাম গড়ে ২০ খেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েক দফায় বেড়েছে ভুসি, খুস, ধানের বিচালিসহ গরুর অন্যান্য খাদ্য সমাগ্রীর দাম। এমতাবস্থায় কোরবানির ঈদে সঠিক দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে লোকসানে পড়বেন পশু পালক ও খামারিরা।
ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ১৩ জন করোনায় আক্রান্ত
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ১৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো ২৪৯ জন। সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম জানান, শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ঝিনাইদহে ৫২ টি রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে ১৩ টি পজেটিভ। আক্রান্তরা হলেন, সদর উপজেলায় ৫ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৩ জন, শৈলকুপা উপজেলায় ৩ জন, কোটচাদপুর উপজেলায় ১ জন ও মহেশপুর উপজেলায় ১ জন। আক্রান্ত ২৪৯ জনের মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ৯৪ জন। জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫ জন।
নসিমন উল্টে চালক নিহত
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ সড়ক দুর্ঘটনায় এক নসিমন চালক নিহত হয়েছে। শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার হলিধানী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, সকালে হরিণাকুন্ডুর শাখারীদহ গ্রাম থেকে মাছ নিতে ডাকবাংলা এলাকায় যাচ্ছিল নসিমন চালক রইচ উদ্দিন। পথে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের হলিধানী এলাকার ভেটেরিনারী কলেজের সামনে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার উপর বিটে ব্রেক না করায় উল্টে যায়। এতে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ঝিনাইদহে করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু, মোট দাফন ১৫ জনের
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে করোনা উপসর্গ নিয়ে আনিছুর রহমান নামের আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সে শৈলকুপা উপজেলার কাচেরকোল গ্রামের মৃত কাশেম মিয়ার ছেলে। জেলা বিএমএ এর সাধারণ সম্পাদক ও শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন জানান, আনিছুর রহমান শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি নিয়ে ভুগছিলেন । গেল রাতে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। সম্প্রতি তিনি ঢাকা থেকে নিজ গ্রামে এসেছিলেন। তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক জনাব সরোজ কুমার নাথ এর অনুমতিক্রমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো: আব্দুল হামিদ খান এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলামের সহযোগিতায় শৈলকুপা উপজেলার ফিল্ড সুপারভাইজার মো: আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ইসলামিক ফাউন্ডেশন শৈলকুপা ঝিনাইদহ গঠিত দাফন কমিটির সদস্যগণ জানাযা শেষে স্থানীয় গোরস্থানে বৃহস্পতিবার রাতে দাফন কাজ সম্পন্ন করেন। জানাজার সময় দাফন কমিটির সদস্য ছাড়া স্থানীয় কোন লোকজনকে পাওয়া যায়নি। করোনা উপসর্গ মৃত্যুতে এলাকা মানুষ শূন্য হয়ে যায়। লাশ বহনের জন্য একজন ভ্যান চালক এলেও তাকে লাশ বহন করতে দেওয়া হয়নি। এ পর্যন্ত ১৫টি করোনা আক্রান্ত ও করোনা উপসর্গ মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন সম্পন্ন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠিত দাফন কমিটি ।