বৃহস্পতিবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » জানমালের নিরাপত্তায় আনসারদের প্রস্তুত থাকতে হবে - প্রধানমন্ত্রী
জানমালের নিরাপত্তায় আনসারদের প্রস্তুত থাকতে হবে - প্রধানমন্ত্রী
গাজিপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ৮.৩০মিঃ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির যে কোনো প্রয়োজনে আনসার বাহিনী সাহসিকতার সাথে সাড়া দিয়েছে ৷ তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সাথে দায়িত্ত্ব পালন করতে আনসার বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে হবে৷’
১১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের সফিপুরে আনসার ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৬তম জাতীয় সমাবেশ-২০১৬ এর উদ্বোধন করে বক্তব্য দানকালে এসব কথা বলেন তিনি৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার আনসার বাহিনীর সদস্যদের জন্য কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে পাঁচ লাখ টাকার অনুদানের ব্যবস্থা করেছে ৷ এ ছাড়া আহত হলেও অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে৷ ব্যাটালিয়ন আনসারদের পারিবারিক রেশনের ব্যবস্থা চালু হয়েছে৷ মহিলা থানা প্রশিক্ষিকাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে৷’
‘এই বাহিনীর কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর ট্রেনিং সেন্টার ছাড়াও বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৷ আমি জেনে আনন্দিত হয়েছি, ১৫টি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলেছে,’ যোগ করেন তিনি৷
এর আগে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে আনসার-ভিডিপি একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী ৷ এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব মোজ্জাম্মেল হক খান, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নাজিম উদ্দীন৷
এরপর প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানায় আনসার বাহিনীর একটি চৌকস দল৷ জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার পর একটি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর আনসার বাহিনীর সদস্যরা কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন৷
কুচকাওয়াজের পর কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আনসার সদস্যদের পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর এ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন তিনি৷
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে আনসার বাহিনী গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷ এ বাহিনীর ৬৭০ জন সদস্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন৷ একাত্তরে তারা মুক্তিকামী জনগণের মধ্যে ৪০ হাজার অস্ত্র বিতরণ করেছেন৷’
তিনি বলেন, ‘এ বাহিনীর ২০ জন বীর সদস্য বাংলাদেশের প্রথম সরকার মুজিবনগর সরকারের শপথের দিনে গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন৷ আমরা গভীর শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করি৷’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফায় আনসার বাহিনীকে মিলিশিয়া বাহিনীর মর্যাদা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছিল৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার সামগ্রিক উন্নয়নবান্ধব সরকার৷ দেশীয় উন্নয়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ চলছে৷ কর্ণফুলি নদীতে টানেল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক উন্নয়ন ও ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক বাসত্মবায়ন করা হয়েছে৷ ঢাকা-সিলেট চার লেন মহাসড়কেরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷’
তিনি বলেন, ‘দেশে আজ মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৩২৬ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে৷ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে৷ দারিদ্র্যের হার কমেছে৷ বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল৷ জাতীয় আয়ে প্রবৃদ্ধি এখন সাড়ে ৬ ভাগ৷ দারিদ্র্যের হার কমে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে৷ রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে৷ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি৷’
তিনি বলেন, ‘এই সাত বছরে প্রায় একশ বিদ্যুত্ কেন্দ্রর স্থাপন করেছি আমরা৷ বিনামূল্যে বই বিতরণের ব্যবস্থা করেছি৷ ১ জানুয়ারি ৩৩ কোটি ৩৭ লাখের বেশি বই বিতরণ করেছি৷ প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ শিক্ষার্থী বৃত্তি পাচ্ছে৷’
অনুষ্ঠানে তিন জনকে বাংলাদেশ আনসার পদক (সাহসিকতা), সাতজনকে প্রেসিডেন্ট আনসার পদক (সাহসিকতা), একজনকে মরণোত্তর বাংলাদেশ গ্রাম প্রতিরক্ষা দল পদক (সাহসিকতা), ছয়জনকে বাংলাদেশ গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা) পদক, ৩৭ জনকে প্রেসিডেন্ট আনসার (সেবা) পদক, ১৯ জনকে প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা) পদক প্রদান করা হয়৷
এ ছাড়া ২০১৪-১৫ কার্যকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ১৭ জনকে স্বর্ণপদক, দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে ২৫ জনকে রৌপ্যপদক, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ২১ জনকে ব্রোঞ্জ পদক ও ৪০ জনকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়৷
উল্লেখ্য, সারাদেশে ১৮ হাজার ব্যাটালিয়ন আনসার, ৩ লাখ সাধারণ আনসার, তাদের মধ্যে ৪৫ হাজার অঙ্গীভূত এবং ৫৯ লাখ গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্য রয়েছে৷ এবারের কুচকাওয়াজে ৬ শতাধিক আনসার ভিডিপি অংশ নেন৷ এছাড়াও কুটিরশিল্প প্রদর্শনী, গ্যালারি ডিসপ্লে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দরবারসহ বিভিন্ন পর্বে আড়াই হাজার আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা যোগদান করেন৷