সোমবার ● ৬ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » করোনা সংকটকালে ভাল নেই গ্রামবাংলার যাত্রাশিল্পীরা
করোনা সংকটকালে ভাল নেই গ্রামবাংলার যাত্রাশিল্পীরা
মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: করোনা সংকটকালে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা যাত্রা শিল্প ও শিল্পীদের টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। অতীতে এই শিল্পের যে বিত্তবৈভব ছিল, তা এখন ¤্রয়িমাণ। মঞ্চে মেকআপ করা রঙিন মানুষগুলোর অবস্থা বাস্তবে ঠিক তার বিপরীত। তার ওপর করোনা যেন মহাসংকটে ফেলেছে এ অঙ্গনের মানুষদের। এ পেশায় টিকে থাকতে পারবেন কি না, সেটাই ভাবছেন যাত্রার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা। এই সময়ে করোনার কারণে একেবারেই ক্ষতির মুখে পড়বে এ শিল্প। এটা পুষিয়ে ওঠা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত যাত্রা সংশ্লিষ্টজনেরা। করোনার এ ধাক্কায় একেবারেই তাঁদের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ যাত্রা মালিক সমিতির আহবায়ক ও চৈতুলী অপেরাদর স্বত্বাধিকারী কুতুবুল আলম শাহীন মনে করেন, দেশে যাত্রাশিল্পের দর্শক কমে যাওয়ায় এ শিল্পের অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে শোচনীয়। এখন করোনার কারণে ধুঁকতে থাকা এ শিল্প একেবারেই বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। তিনি আরো বলেন, ‘যাত্রাশিল্পের এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে শোচনীয় অবস্থা, এর মধ্যে আবার কিছু অসাধু মানুষ যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য দেখিয়ে ভালো শিল্পীদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের বিরুপ চেহারায় এখন মনে হচ্ছে হাল ছেড়ে দিতে হবে। কবে করোনা ভালো হবে, কবে মানুষের সমাগম হবে, কবে যাত্রা করার অনুমতি পাব, এগুলো নিয়ে বড় চিন্তায় আছি। একটি যাত্রাদলে যন্ত্রশিল্পী, মেকআপম্যান, অভিনয়শিল্পী মিলে প্রায় ৪০ জন, কোনো কোনো দলে তারও বেশি মানুষ কাজ করেন। তাঁদের প্রায় সবাই এই যাত্রার ওপরই নির্ভরশীল। করোনায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁরা সবাই বেকার। করোনা ভালো হওয়ার লক্ষণ না দেখে কিছু যাত্রাশিল্পী পেশা বদল করেছেন। আবার কেউ কেউ সুদিনের আশায় অপেক্ষা করছেন। যাত্রা ছাড়া অন্য কিছু আমার পক্ষে সম্ভবও নয়। এখন কীভাবে চলব, কোনো উপায়ই দেখছি না। খেয়েপরে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চৈতালী অপেরার অভিনেতা ইবাদত হোসেন, হাসেম মুন্সি, শাহাদৎ হোসেন, রিজিয়া খাতুন, অঞ্জু ঘোষ সহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার শুরু থেকে তারা কাজ হারিয়ে পড়েছেন বিপাকে। জীবিকার তাগিদে তারা কেউ কেউ সবজির ব্যবসা, রিকশা চালানো, দিনমজুর, সাইকেল মেকারির কাজ সহ বিভিন্ন নি¤œমানের কাজ করে কোনোরকমে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। তারা আরো জানান, আগে নিয়মিত অনুশীলনে মুখর থাকত চৈতুলী অপেরার টিনের ঘরটি। দিনরাত কাটত যাত্রার অনুশীলনে। এই ঘরে রাখা যাত্রার পোশাক, ঢোল-তবলায় জমতে শুরু করেছে ধুলাবালু। এই অপেরার নায়ক চরিত্রের অভিনেতা সেলিম রেজা বলেন, ‘আমাদের শৈলকুপা উপজেলায় প্রায় ৪৫ জন এ পেশার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের প্রায় ৯৯ ভাগই ভালো নেই। ধারদেনায় আমরা জর্জরিত। সরকার আমাদের সহযোগিতা না করলে হয়তো এই পেশাতেই আর থাকতে পারব না। শৈলকুপা উপজেলা যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি তাহাজুদ্দিন মেম্বর জানান, কয়েক বছর ধরে যাত্রাশিল্প খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তার অস্তিত একেবারে সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়ে গেছে। আগে থেকেই বিপর্যস্ত এ শিল্পকে এখন একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে করোনা। নাটক-চলচ্চিত্র সব মাধ্যমে ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু বিকল্প হিসেবে তাঁরা ফেসবুক, অনলাইনে লাইভ করছেন। অনেকে শুটিং করছেন। কিন্তু যাত্রাশিল্পীদের সেই সুযোগ নেই। কীভাবে শত শত যাত্রাশিল্পী চলছেন নাগরিক জীবনে, এটার কেউ খোঁজখবর রাখে না। উপজেলায় ৪৫ জনের মতো যাত্রাশিল্পী আছে। তাদের খোঁজখবর কিংবা কোন সাহায্য সহযোগিতা করেনি কেউ। কিছুদিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মমকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নিকট সাহায্যের দরখস্ত দিয়েছিলাম। তিনি আশ্বাসও দিয়েছিলেন, তবে তার কোন ফল আমরা পাইনি। তাই এ শিল্প ও শিল্পীদের বাঁচানোর জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন।
ঝিনাইদহে আরও ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো ২৯৫ জন। সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম জানান, সোমবার সকালে কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ঝিনাইদহে ৬৪ টি নমুনার ফলাফল এসেছে। এর মধ্যে ১৮ টি পজেটিভ। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৯ জন, শৈলকুপায় ২ জন, হরিণাকুন্ডুতে ২ জন, কালীগঞ্জ ৩ জন ও কোটচাঁদপুরে ২ জন রয়েছে। আক্রান্ত ২৯৫ জনের মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ১০২ জন। জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭ জন।
৩ হাজার বিঘা জমি পানির নিচে
ঝিনাইদহ :: পায়রাডাঙ্গা গ্রামের মুক্তার হোসেনের মাত্র ২৬ কাঠা জমি ছিল একমাত্র সম্বল। জমিতে যে ধান হতো তাই দিয়ে চলতো সারা বছরের খাবার। কিন্তু অবৈধ ভাবে পুকুর কাটার ফলে তার দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। মুক্তার হোসেনের মতো হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভালকী ও পায়রাডাঙ্গা গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবারের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। এক সময়ের ধানী জমি এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। পুকুর কাটার ফলে তিন হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। উপায়হীন কৃষক পরিবারগুলো প্রতিকার পেতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও তড়িৎ কোন পদক্ষেপ পায়নি। প্রশাসনের এই নীরবতায় পুকুর মালিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসির অভিযোগ, অবৈধ ভাবে জমির শ্রেনী পরিবর্তন করলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এক রকম নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। পায়রাডাঙ্গা গ্রামের আক্তারুজ্জামান জানান, তাদের গ্রামে ৮/১০ বিল রয়েছে। দুই মৌসুমে এই বিলে বিপুল পরিমাণ ধান উৎপন্ন হতো। কিন্তু পায়রাডাঙ্গা গ্রামের আইয়ূব মন্ডলের ছেলে ডালিম মন্ডল ও জব্বার মন্ডলের ছেলে দেলোয়ার হোসেন দলু মন্ডল যত্রতত্র পুকুর কটছে। ফলে গোটা বিলে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসির ভাষ্যমতে পায়রাডাঙ্গা গ্রামের হাতিশুড়ো, মুচেইখালী, ট্যাবার মাঠ ও সঞ্জেরখালী মাঠ এখন পানির নিচে। সঞ্জেরখালী মাঠে সরকারী জমি ছিল দেড় বিঘা। সেখানে বিল ও খালের সংযোগ স্থানে ছিল একটি ব্রীজ। সেখানে পুকুর কাটায় ব্রীজের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারী রাস্তায় কেও চলাচল করতে পারছে না। সরকারী ভাবে নির্মিত যাত্রী ছাউনিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকারী জমি দখল, সরকারী রাস্তা ও ব্রীজ বন্ধ, সরকারী যাত্রী ছাউনি পরিত্যক্ত ও সরকারী খাল নষ্ট করার পরও কেন ঝিনাইদহের প্রশাসন দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না এ নিয়ে গ্রামবাসি প্রশ্ন তুলেছে। তাদের ভাষ্য বেআইনী ভাবে জমির শ্রেনী পরিবর্ত করে ডালিম ও দলু আইন ভঙ্গ করেছেন। সেই সাথে তারা হাজারো মানুষের পেটে লাথি মারতে বিলের মধ্যে পুকুর কেটে চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। এরপরও যদি তাদের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ না হয় তবে পায়ারাডাঙ্গা-ভালকী গ্রামে এই পুকুর কাটা নিয়ে দাঙ্গা ফ্যাসাদ শুরু হতে পারে বলে গ্রামবাসি আশংকা প্রকাশ করছেন। পুকুর মালিক ডালিম ও দলু জানান, তারা তাদের জমিতে পুকুর কাটছেন। পুকুর কাটার কারণে কোন কৃষকের ক্ষতি হলে তারা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিবেন। এ ব্যাপারে হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাফিজ সুলতানা জানান, আমি অসুস্থ থাকার কারণে অভিযোগটি পায়নি। তবে জেলা প্রশাসন থেকে আমাকে অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলেছেন। আমি সরেজমিন তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তার সাথে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দেন।
ঝিনাইদহে যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে সীমিত পরিসরে যুব মহিলা লীগের ১৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। দলটির জেলা শাখার আয়োজনে সোমবার সকালে শহরের পায়রা চত্বর থেকে একটি র্যালী বের করা হয়। র্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রেরণা একাত্তর চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বঙ্গবঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। পরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ ঝিনাইদহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সালমা ইয়াসমিনসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা শাখার সহ-সভাপতি নাজমা খাতুন, আফরোজা সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক বেবী নাজনিন, যুগ্ম সম্পাদক মিতা মায়া, সদস্য গুলশান আরা, তন্নী খাতুন, রোজিনা খাতুন প্রমুখ। বক্তারা, যুবলীগের ভাবমুর্তি আরও উন্নত করতে করোনাকালে অসহায় ও দুস্থদের পাশে দাড়াতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির চাল নয় ছয়
ঝিনাইদহ :: তদন্তে ফেঁসে গেছেন মধুহাটীর চেয়ারম্যান ও চালের দুই ডিলার। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটী ইউনিয়নে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির চাল বিতরণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতির তথ্য পেয়েছে জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটি। গত ৭ জুন তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত সরেজমিন তদন্ত করতে গেলে অভিযোগকারীরা চেয়ারম্যোন ফারুক হোসেন জুয়েল ও দুই ডিলার ইমদাদুল এবং জিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সাক্ষি দেন। তদন্তকালে একই জাতীয় পরিচয় পত্রের (মৃত ব্যক্তিসহ) বিপরীতে একাধিক ব্যক্তির চাল উত্তোলন, একজনের কার্ডের চাল অন্যজনকে প্রদান ও ওজনে কম দেওয়ার সত্যতা পান বলে গত ১৫ জুন তারিখে জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির চালের ডিলার ইমদাদুল এবং জিয়া তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নি। এ সময় তারা নিশ্চুপ ছিলেন। ফলে চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় দুই ডিলার মধুহাটী ইউনিয়নে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির চাল বিতরণে নয় ছয় করেছেন মর্মে প্রতিয়মান হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, চেয়ারম্যানের তালিকায় নাম না থাকলেও উপজেলা খাদ্য অফিসারের তালিকায় নাম আছে কুবিরখারী গ্রামের নুরুল ইসলামের। তিনি কোন চাল পাচ্ছেন না। একই ভাবে বেড়াশুলা গ্রামের পিকুল, রবিউল, কমতা গ্রামের জাকির ও শরীফ, নওদাপাড়ার ফেরদৌসি, শহরবানু, আক্তারুজ্জামান, রেশমা, শামিম রেজা, গোপালপুরের দিজেন্দ্র নাথ, আলতাফ হোসেন ও বেজিমারা গ্রামের আবুল হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি চাল পান না। রুপালী খাতুন নামে এক মহিলা প্রথম ৬ মাস চাল পেলেও পরবর্তীতে চাল পাননি। ৭টি জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরীতে ৩২ জনের নামে কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। ৬ জনের নাম ও ঠিকানা দুই তালিকায় ভিন্ন রকম পেয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা। এ সব বিষয়ে মধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জুয়েল তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেন, ৩৪ জনের তালিকা মৃত্যু ও সচ্ছল হওয়ার কারণে হালনাগাদ করে নতুন নাম অর্ন্তভক্তি করা হয়েছে। এদিকে চেয়ারম্যান ও দুই ডিলারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতির তথ্য প্রমানিত হওয়ার পরও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। অভিমতসহ তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে পাঠাতে বিলম্ব করা হচ্ছে। ফলে চেয়ারম্যান বরখাস্ত বা ডিলারশীপ বাতিলের কালক্ষেপনে অভিযোগকারীরা নানা প্রশ্ন তুলছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরিফ উজ জামান বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত বিষয়টি যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
জমি দখল করে বিল্ডিং নির্মাণের অভিযোগ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করে বিল্ডিং নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আলমডাঙ্গা বাজারে মুক্তিযোদ্ধা মৃত নুরুল ইসলামের জমি জোরপূর্বক দখল করে বিল্ডিং নিমাণ করছেন প্রতিপক্ষ বিবাদী বাবুল হোসেন ও নাছির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন। শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চরগোলকনগর গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মিজানুর রহমান মজনু অভিযোগ করে বলেন, আমার ৯নং আলমডাঙ্গা মৌজায় যার সাবেক দাগ নং- ৯৫৩, ৯৫৬, ৯৫৭, ৯৬০ ও ৯৬১ এবং হাল দাগ- ৪৮৯ নং এ ১ একর ৪৬ শতকের মধ্য ১৯ শতক রেকর্ড পেয়েছি। কিন্তু সরেজমিনে দখল পেয়েছি প্রায় ৩ শতক জমি। এর ভিত্তিতে গত ১৮ ফ্রেবুয়ারি ২০২০ ইং তারিখে দেওয়ানি মোকদ্দমা করি। যার নং- ৪৬/২০। আদালত বাদী পক্ষের প্রার্থনা মোতাবেক কেন বিবাদী পক্ষের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হবে না অত্র নোটিস প্রাপ্তি ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ইং তারিখে উভয় পক্ষকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয় বিজ্ঞ আদালত। কিন্তু মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন ও একই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু বক্কর ও সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে ক্ষমতার দাপটে আইনকে অমান্য করে বিবাদী প্রতিপক্ষ বাবুল হোসেন ও নাছির হোসেনকে ওই জমিতে বিল্ডিং নির্মাণের সহযোগিতা করছে তারা। এঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি সহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু বক্কর ও সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান থেকেই একটি শালিশ করেছি। তবে ওই জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা তা আমার জানা ছিল না। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু বক্কর ও সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করে বলেন আমরা এই শালিশে উপস্থিত ছিলাম না। এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার এস আই সামছুর রহমান জানান, তিনি আদালতের নিষেধাজ্ঞা পেয়ে সেখান যান। কয়েক দফায় উক্ত জমিতে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার জন্য উভয়পক্ষকে নোটিশ করেন। কিন্তু বিবাদী পক্ষ জোরপূর্বক আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উক্ত জমিতে বিল্ডিং নির্মাণ করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এভাবেই তারা একের পর এক বাদীকে হেনেস্তা করে চলেছে। আমি প্রয়োজনে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ আদালতকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাবো।
৪৩২ বোতল ফেন্সিডিলসহ মাদক ব্যাবসায়ি গ্রেফতার
ঝিনাইদহ :: সিপিসি-২, ঝিনাইদহের আভিযানিক দল কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মাসুদ আলম এবং এএসপি এইচ এম শফিকুর রহমান এর নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ জেলার সদর থানার শেরে বাংলা সড়ক এলাকা হতে ইং ০৬/০৭/২০ তারিখ ১২২০ ঘটিকার সময় ০১ জন আসামী মো: রকিবুল ইসলাম রকি (২৫), পিতা-মো: নওশের আলী, সাং- রাঙ্গিয়ার পোতা (৯নং ওয়ার্ড), থানা ও জেলা- ঝিনাইদহকে গ্রেফতার করা হয়। সেসময় আসামীর নিকট থেকে ৪৩২ বোতল অ্যালকোহল/ফেন্সিডিল (অ্যালকোহল-৮৩%), ০১ টি মোবাইল সেট,০২ টি সীম কার্ড, নগদ ৪৫৭/- টাকা উদ্ধার করা হয়। আটককৃত ব্যক্তিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ঢাকা থেকে সোনারগা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে উক্ত জব্দকৃত অ্যালকোহল ঝিনাইদহে নিয়ে এসে ফেন্সিডিল এর বিকল্প হিসেবে পানি মিশিয়ে বিক্রয় এবং ব্যবহার করে।
কোটচাঁদপুরে ইট ভাটার ট্রাক্টরের ধাক্কায় প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহেরে কোটচাঁদপুরে ইট ভাটার একটি ট্রাক্টরের ধাক্কায় রোহান (১৮) নামে এক প্রতিবন্ধী যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৬জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার সাফদারপুর মকসেদ মোড়ে এই দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত রোহান সাফদারপুর ইউনিয়নের লক্ষিকুন্ড গ্রামের (খাঁন পাড়ার) ফসিয়ারের ছেলে। স্থানীয়রা জানায়, সোমবার সকালে প্রতিবন্ধী রোহান বাড়ি থেকে পায়ে হেটে সাফদারপুর বাজারে আসছিলেন। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা (মকসেদ মোড়ের) রিপন ব্রীক্সসের একটি ট্রাক্টর বেপরোয়া গতিতে ঘটনাস্থলে পৌছে প্রতিবন্ধী ওই যুবককে সজোরে ধাক্কা দেয়। দূর্ঘটনায় ট্রাক্টরের চাকায় প্রতিবন্ধী যুবকের শরীর পিষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠালে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। এব্যাপারে কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুল আলম জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নেশায় মরিয়া হরিণাকুন্ডুর শিশু কিশোর
ঝিনাইদহ :: ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, টাপেন্টাসহ নানা ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্যের কথা হরহামেশায় শোনা যায়। কিছুদিন আগেও দেশের যুব সমাজের একটা বিশাল অংশ এসব মরণনেশায় ঝুঁকে পড়েছিলো। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারী আর জোরদার অভিযানের ফলে এখন এসব মাদকদ্রব্যের আকাল চলছে। আর এসব নেশাদ্রব্যের দামও আগের তুলনায় অনেকাংশে বেশি। ফলে বিকল্প হিসেবে এবার নতুন নেশাদ্রব্য ‘আঠা’তে ঝুঁকছে মাদকসেবিরা। উঠতি বয়সি ১০-১৫ বছরের শিশু-কিশোরদের একটা ব্যাপক অংশ আসক্ত হচ্ছে এই মরণনেশা আঠায়। স্কুল- কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আর বখাটে এসব শিশু-কিশোররা এখন ক্রমেই এ নেশায় আসক্ত হয়ে বিপথগামি হচ্ছে। ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকসহ সচেতন মহল। এ অবস্থা ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলার পৌর এলাকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পৌর এলাকার টাওয়ার পাড়া, তেতুলিয়ামোড়, বৃত্তিরপোলের ক্যানেল এলাকা, হরিণাকু-ু জোড়াপুকুরিয়া মাঠের একটি মেহগুনি বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন উঠতি বয়সি শিশু-কিশোররা এই ‘আঠা’ নেশায় মেতে ওঠে। জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক শিরিন আক্তার জানান, বাজারে ড্যান্ডি ও ড্যান্ডোরাইড নামে ইন্ডিয়ান দুটি কোম্পানির আঠা পাওয়া যায়। যা জুতা সেন্ডেল, কাঠের ফার্নিচার ও ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে রাবার জাতীয় দ্রব্যে জোড়াতালির কাজে ব্যবহার করা হয়। দেশের ফাইভ জেমস ও বেঙ্গল গ্রুপ ওই পণ্য দুটির প্যাকেট ও বাজারজাত করছে। এসব আঠা এখন উঠতি বয়সি যুবকরা নেশাদ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি আরও জানান, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, টাপেন্টসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের দাম অনেক বেশি এবং এসব মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কঠোর অভিযান ও নজরদারির ফলে এখন এগুলোর আকাল চলছে। ফলে কম দাম পেয়ে এখন যুবসমাজ আঠা নেশায় ঝুঁকে পড়ছে। এ নেশায় আসক্ত একাদশ শ্রেণি পড়ুয়া এক যুবক জানায়, কিছুদিন আগে তারা ব্যাথানাশক ট্যাবলেট টাপেন্টা ও ঘুমের ট্যাবলেট কাশির সিরাপের মধ্যে মিশিয়ে ভোলাদানা তৈরি করে নেশা করতেন। ফার্মেসিগুলোতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি আর পুলিশি অভিযানের ফলে এখন আর এগুলো পাওয়া যায় না। তাই তারা কম দামে এখন বাজারের ইলেট্রনিক্সের দোকান থেকে এসব আঠা কিনে পলিথিনের মধ্যে দিয়ে ঝাঁকিয়ে তা হাতের তালুর সাহায্যে ঘষে নিঃশ^াসের মাধ্যমে সেবন করেন। এতে ভালো নেশা হয় বলে জানায় ওই যুবক। একইরকম অনুভুতি জানিয়ে ১৪ বছর বয়সের এক মিল শ্রমিক জানায়, এ নেশায় নিজেকে কিছু সময়ের জন্য রাজা মনে হয়। হরিণাকুন্ডু উপজেলা মোড়ের ইলেট্রনিক্স ব্যবসায়ী কাকন এন্টারপ্রাইজের মালিক টিটো জানান. একশ্রেনির অসাধু ব্যবসায়ীরা ২৫-৩০ টাকা মূল্যের এসব আঠা ৫০-৬০ টাকা দামে উঠতি বয়সি ছেলেদের কাছে বিক্রি করে তাদের বিপথগামি করছে। তিনি এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ জামিনুর রশিদ জানান, আঠা সেবনের ফলে সাময়িক মস্তিস্কের নার্ভাস সিস্টেমকে জাগ্রত করে মস্তিস্ক উত্তেজিত করে। আর কেও দীর্ঘস্থায়িভাবে এ নেশায় আসক্ত হলে তার মস্তিস্ক, কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যেতে পারে। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, শিশু-কিশোরদরে কাছে এসব আঠা বিক্রেতা অসাধু ব্যবসায়িদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।