বৃহস্পতিবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরের মেয়র মান্নানের কারাভোগের এক বছর পূর্তি
গাজীপুরের মেয়র মান্নানের কারাভোগের এক বছর পূর্তি
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১১ফেব্রুয়ারী ২০১৬ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ৮.৫০মিঃ) গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র (বরখাস্ত) ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানের কারাভোগের এক বছর পূর্তি হলো ১১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার৷
২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের সার্ডি গেইট এলাকায় যাত্রীবাহীবাসে পেট্রোলবোমা হামলার মামলায় ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস’র নিজ বাসা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র (বরখাস্ত) ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ তারপর থেকে তিনি আদালতের নির্দেশে বন্দি রয়েছেন৷ এ পর্যন্ত ২১টি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে৷ এসব মামলার প্রায় সবগুলোই বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালকালে গাড়ী ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ, হত্যা, নাশকতা, বিস্ফোরক ও পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দানসহ বিভিন্ন আইনে দায়ের করা হয়েছে৷ এসব মামলার মধ্যে তিনি জয়দেবপুর থানায় ১৩টি, টঙ্গী মডেল থানায় ২টি, শ্রীপুর মডেল থানায় ২টি ও কালিয়াকৈর থানায় ২টিসহ মোট ১৯টি মামলার সবক’টিতেই ইতোমধ্যে জামিন পান৷ পুলিশ নতুন ভাবে জয়দেবপুর থানার আরো দুটি মামলায় ফের গ্রেফতার দেখানোয় তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ২১টি মামলা রজু হলো৷
মান্নানের বিরুদ্ধে সর্বশেষ দায়েরকৃত দুটি মামলার অভিযোগে বলা হয় বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে গত ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি এবং একই মাসের ১১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম বাইপাস সড়কের মেঘডুবি কলের বাজার এলাকায় অবরোধকারীরা গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অপর একটি ঘটনা ঘটে৷ ওই দু ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক দু’টি মামলা (নং-৪০ ও ৬৮) দায়ের করে পুলিশ৷ পরে ওই দু’মামলার তদন্তে অধ্যাপক এমএ মান্নানের ইন্দনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় ওই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়৷ এর প্রেক্ষিতে মামলা দু’টির তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই মামলা দু’টিতে তাকে গ্রেফতারের জন্য আদালতে আবেদন করেন৷ গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এসএম মারুফ চৌধুরী শুনানি শেষে ওই আবেদন মঞ্জুর করে অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতারের (শ্যোন এরেস্ট) আদেশ দেন৷ এনিয়ে অধ্যাপক এম এ মান্নানকে মোট ২১টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে৷
এব্যপারে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মেহেদী হাসান এলিস আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে বলেন, অন্যায় ভাবে অধ্যাপক এম এ মান্নানের বিরম্নদ্ধে মিথ্যা মামলা গুলো দায়ের করেছে ক্ষমতাসীন দল৷ বিপুল ভোটে জনগনের নির্বাচিত এই নগর পিতাকে শেষে বরখাস্তও করা হয়েছে৷ মেয়র মান্নান বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার অপরাধে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে জেলে রেখেছেন সরকার৷ কারগারে ‘বিনা বিচারে’ এক বছর আটক রয়েছেন তিনি৷ সরকার পতনের ভয়ে তাকে আটক রেখেছে আমরা অতিদ্রুত তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দাবি করছি৷
তিনি আরও বলেন, মেয়র মান্নান দীর্ঘদিন যাবত হার্ট, কিডনি ও ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ৷ তাই ক্ষমতাসীন দলের কাছে আমাদের দাবি কোনো প্রকার অজুহাত না দেখিয়ে তার মুক্তি দিন৷ এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনপ্রিয়তা কমাতে পারবেন না৷
অধ্যাপক এম এ মান্নানের আইনজীবী মঞ্জুর মোর্শেদ প্রিন্স আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বরখাসত্মকৃত মেয়র মান্নানের বিরুদ্ধে সর্বশেষ দু’মামলাসহ ২১টি মামলা রয়েছে৷ এ সব মামলার মধ্যে সর্ব শেষ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নাশকতার দুইটি মামলায় অধ্যাপক এমএ মান্নানের জামিন আদেশ বহাল রাখেন৷ পরে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালতে পাঠানো হয়৷ ইতোপূর্বে তিনি আরো ১৭টি মামলার সবক’টিতে জামিনে থাকায় তার মুক্তিতে কোন বাধা ছিল না৷ ফের দুটি নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেফতার (শ্যোন এরেস্ট) দেখানোর ফলে তার মুক্তি আটকে গেল৷
তিনি আরও জানান, অন্যায় ভাবে আটক করা হয়েছে সাবেক এই মেয়রকে৷ তার বিরম্নদ্ধে এতোগুলো মামলা দায়ের করার কোন অর্থই হয়না, মামলা গুলো পরিকল্পিত ভাবে দায়ের করা হয়েছে৷ মেয়র মান্নান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন৷ মামলা গুলো রম্নজু করা রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি করা ছাড়া আর কিছুই নয়৷
আইনজীবি বলেন, তার জামিনের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে৷
উলেস্নখ্য, মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের অবর্তমানে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷
গত বছরের ১৯ আগষ্ট স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের (সিটি কর্পোরেশন-২ শাখা) সহকারি সচিব এ.কে.এম আনিছুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ (২০০৯ সালের ৬০ নং আইন) এর ধারা ১২ এর উপধারা (১) মোতাবেক বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়৷ তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত নাশকতার মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় এ ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে৷