বৃহস্পতিবার ● ৯ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটিতে আক্রান্ত ৪১৮ জন : করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার দাবি
রাঙামাটিতে আক্রান্ত ৪১৮ জন : করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার দাবি
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস মানবজাতির ইতিহাসের একটি অভিশস্ত অধ্যায়। পৃথিবীর ২১৩ দেশ ও অঞ্চলের সোয় ১ কোটি জনগন যার সর্বনাশী থাবার শিকার। মৃত্যু বরন করেছেন ৫ লাখের অধিক। কর্তৃত্ববাদী, সাম্রাজ্যবাদী আর শ্রেণীবাদীদের ধনী গরীব বা সাদা কালো ধারনা করোনা ভাইরাসের কাছে পার্থক্য নয়, তার চাওয়া শুধু মানবপ্রাণ। তার প্রতিরোধহীন আক্রমন উন্নত রাষ্ট্র থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত রাষ্ট্রের সকল মানবজাতির উপর সবখানে সমান। বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা ভাইরাস কোন মানব শরীরে আক্রমন করলে সেই মানব শরীর যদি নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে জয় করতে পারে তো করোনা পরবর্তী বসবাসের সম্ভাবনা! নয়তো মৃত্যু অবধারিত। পুরো বিশ্বের গবেষক মহল হন্যহয়ে খুঁজছে করোনাভাইরাসের প্রতিকার ও প্রতিরোধক। চলছে নানা গবেষণা ও গবেষনাপত্রের ট্রায়াল। মানব জাতির এই অভিশপ্ত অধ্যায়ের শেষ কবে বা কোথায় এখনো অজানা। কিন্তু আশাবাদী মানবজাতির চেষ্টার শেষ নেই। দিনরাত এক করে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন করোনা ভাইরাস মোকাবেলায়। সারা বিশ্বে আক্রান্তের বিবেচনায় ১৮ নম্বরে থাকা আমার বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তে ও গবেষনায়। গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে আজ বৃহস্পতিবার ৯ জুলাই গত ৪ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭৫ হজার ৪৯৪ জনে এবং মৃত্যু বরন করেছেন ২হাজার ২৩৮ জন। কাজ হারিয়েছেন প্রায় এক কোটি খেটে খাওয়া মানুষ। এতো শুধু সরকারী হিসাবের খাতার তালিকা। এর বাইরে শুধুমাত্র করোনা উপসর্গ নিয়ে কতজনের মৃত্যু হচ্ছে তার সব হিসাব তো অজানা। অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা আর চিকিৎসার অবহেলার ঘটনাই বা কয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ২১ কোটি জণগণের দেশে প্রতিদিন ৭০টি পিসিআর ল্যাবে গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা কতটুকু পর্যাপ্ত! দেশের ৬৪টি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নেই, নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। দেশের সর্ববৃহৎ জেলা রাঙামাটিসহ ৩ পার্বত্য জেলার জনগণের অবস্থা আরো নাজুক। এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া তার উপর ভংগুর যোগাযোগ ব্যবস্থা। চিকিৎসা ব্যাবস্থা তো আরো নাজুক। জেলা হাসপাতালে নেই আইসিইউ নেই আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির কাছে করোনা ভাইরাস শুধু একটি রোগে আক্রান্ত হওয়া নয়, পরিবারসহ সর্বশান্ত হওয়ার সামিল। তার উপর সরকার করোনা শনাক্তের নমুনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারন করায় গরীব জনগোষ্ঠির মানুষ নিজ উদ্যোগে টাকা খরচ করে নমুনা দিতেও অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে। তার বিশেষ কারণ এমনিতেই খেটে খাওয়া তার উপর কয়েকমাস ধরে কর্মহীন, টাকা আসবে কোথা থেকে! এরই মধ্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ১০ উপজেলা আক্রান্ত। কাপ্তাই উপজেলা করোনা ফোকাল পার্সন ডা. ওমর ফারুক রনিসহ জেলায় মোট আক্রান্ত ৪১৮ জন। মৃত্যু ৭ জনের।
আক্রান্ত, মৃত্যু, আতংক আর ঝুঁকি যা ই বলি করোনা মোকাবেলায় বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপন হচ্ছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায়। এমাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে নমুনা পরীক্ষা জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা ফোকাল পার্সন ডা. মোস্তফা কামাল। সাধারন মানুষ আশায় বুক বাধে। দেশের এত ধনীলোক! দেশের কাড়িকাড়ি টাকা সুইস ব্যাংকে জমা! মন্ত্রী এমপিরা বিমান ভাড়া করে বিদেশে যায় চিকিৎসা নিতে অথবা ছুটি কাটাতে। যেখানে বিশ্ব ব্যাক্তিত্বগণ করোনা ভাইরাসের ঔষুধ সকলের জন্য উন্মুক্ত (জনগণের সম্পত্তি) করার দাবি জানিয়েছেন। আমাদের দেশে অন্তত করোনা ভাইরাস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে না আসা পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিনামূল্যে হোক। এ দাবি খেটে খাওয়া সাধারন মানুষের, যাদের শ্রমের বিনিময়ে গতিময় হয় উন্নয়নের চাকা।
উল্লেখ্য, রাঙামাটি জেলায় মোট কোয়ারেন্টাইনে ৩৪৫৫ জন। হোম কোরেন্টাইনে ২২১৪ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ১২৪১ জন। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছেন ৩২৮৫জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১৭০ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৮ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৩১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের।
এ পর্যন্ত ২৩৬৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইন্সষ্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পাওয়া গেছে ২২৫৮ জনের, রিপোর্ট অপেক্ষমান আছে ১০৯ জনের।