রবিবার ● ১২ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ
পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: পার্বত্য চট্রগ্রামে অব্যাহত ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে এবং বেদখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেয়া ও প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতির দাবিতে রাঙামাটির কাউখালী, কুতুকছড়ি ও নানিয়াচরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
আজ রবিবার ১২ জুলাই ইউপিডিএফের স্থানীয় ইউনিটসমূহ এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলার কাউখালীতে ইউপিডিএফের স্থানীয় ইউনিটের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের কাউখালী ইউনিটের সংগঠক বাবলু চাকমা ও তারেক মারমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কাউখালি থানা শাখার সহ সভাপতি সুমন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নীতিশোভা চাকমা।
অপরদিকে রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়িতে সকাল ১১টার সময় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউপিডিএফের রাঙামাটি সদর ইউনিটের সংগঠক মন্টো চাকমার সভাপতিত্বে ও সাজেক চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিকন চাকমা ও এলাকার কার্বারী ভদ্র চাকমা প্রমুখ।
একই কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলার নানিয়াচরেও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিবেক চাকমার সঞ্চালনায় ও ইউপিডিএফের নানিয়াচর ইউনিটের সংগঠক গিরি চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাংগামাটি জেলার শাখার সহসভাপতি নেপচুন চাকমা ও এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বী মুক্ত রঞ্জন চাকমা প্রমুখ।
পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত এসব সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন করে দিতে শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনত্যম হচ্ছে ভূমি বেদখল। সেই আশির দশকে বাঙালি সেটলারদের পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে যে ভূমি বেদখল কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল তা আজও অব্যাহত রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক ভূমি জবরদখলের ঘটনা ঘটছে। ইতিমধ্যে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে লংগদু, গুইমারা, রামগড়, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামাসহ বিভিন্ন জায়গায় বাঙালি সেটলার কর্তৃক এবং সেনা-বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে ভূমি জবরদখল করা হয়েছে এবং জবরদখলের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কথিত উন্নয়ন ও পর্যটনের নামেও হাজার হাজার একর ভূমি জবরদখল করে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
সরকার জাতিগত দমন পীড়ন জারি রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, গত শুক্রবার বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে শান্তি লতা তঞ্চঙ্গা নামে এক নারীকে হত্যা ও তার ৪ বছর বয়সী শিশু সন্তান আহত করেছে। শুধু তাই নয়, একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে প্রতিনিয়ত খুন, গুম, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে অরাজক পরিস্থিতি জিইয়ে রাখা হয়েছে। আর অন্যায় ধরপাকড়, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির মতো ঘটনাতো প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে বেদখল হওয়া ভূমি ফেরত দেয়া, ভূমি বেদখল বন্ধ করতে প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, অন্যায় ধরপাকড়সহ ইউপিডিএফের ওপর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন বন্ধ করা এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে আটক ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।
একই সাথে বক্তারা একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদদান বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছেন।
বেদখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফ রামগড় ইউনিট
রামগড় :: আজ ১২ জুলাই রবিবার প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি চাই, বেদখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফ এর রামগড় ইউনিট ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে এবং সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রামগড় উপজেলার পিসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাদুর ত্রিপুরা। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলার ও রাষ্ট্র কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের নানা কৌশল করে চলেছে রাষ্ট্র। সেনাক্যাম্প, পর্যটনের নামে সরকার নানাভাবে পাহাড়িদের ভূমি কেড়ে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। কিন্তু ছাত্র সমাজ তা মেনে নিতে পারেনা তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
আরো বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম রামগড় উপজেলার সাধারণ সম্পাদক জার্মেন্ট ত্রিপুরা। তার বক্তব্যে বলেন, যে ভূমিতে নিরলস পরিশ্রম করে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা কষ্ট করে ভূমিতে রূপান্তরিত করেছে, সেই ভূমি গুলো রাষ্ট্র কর্তৃক বেদখল করা হচ্ছে। সাজেক, নীলগীড়ি পর্যটনের নামে পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে সর্বশান্ত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে সেটেলারদের পক্ষ নিয়ে রেকর্ডভূক্ত ভূমিও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
সেনাক্যাম্প স্থাপন করে পাহাড়িদের ঘিরে ফেলার চক্রান্ত চালাচ্ছে। সেনা পরিকল্পনায় পাহাড়িদের বিভক্ত করে ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে।
ভ্রাতৃঘাতি নাম দিয়ে বন্দুক যুদ্ধ সাজিয়ে প্রতিবাদী মানুষদের ঠান্ডা মাথায় খুন করা হচ্ছে।
তাই সকলকেই সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যুব শক্তিকে কাজে লাগার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ সংগঠক সাবাগ চাকমা বলেন, আমরা প্রথাগত আইনে ভূমি সমস্যার সমাধান চাই। প্রচলিত আইনে সমাধান চাই না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী র্যাংক বাড়ানোর জন্য ইউপিডিএফ কর্মী সাজিয়ে নিরীহ জনসাধারণকেও ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার করছে।
সম্প্রতি বান্দরবানে ছাত্রসহ ৪ জন নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার করেছে। তাদের ফায়ারে শান্তিলতা তঞ্চঙ্গ্যা ও তার ৫ বছরের শিশু অর্জুন তঞ্চঙ্গ্যাকে হত্যা করেছে অথচ মিডিয়া ধামাচাপা দিতে বন্দুক যুদ্ধ সাজিয়ে সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে বলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সেনা শাসন জিইয়ে রেখে রাষ্ট্র সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের ধ্বংসের চেষ্টা চালাচ্ছে। এবং সম্প্রতি এক পাহাড়ি সৈনিককে তার বাবা পিসিজেএসএস আঞ্চলিক
রাজনৈতিক দল করার কারণে চাকুরীচ্যুত করে বর্ণবাদী আচরণ করা হয়েছে। তিনি এর তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা জানান।
সেটেলারদের সম্মানজনক পূণর্বাসনসহ সংখ্যালঘু জাতিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানান। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন ইউপিডিএফ সংগঠক জিয়েন চাকমা।