বুধবার ● ১৫ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » হুহু করে বাড়ছে পানি গাইবান্ধায় পাউবোর সতর্কতা জারি
হুহু করে বাড়ছে পানি গাইবান্ধায় পাউবোর সতর্কতা জারি
সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নদী তীরবর্তী বসবাসকারীসহ সর্বসাধারণকে সতর্ক করতে জেলা প্রশাসনসহ সকল সরকারী দপ্তরে জরুরি বার্তা প্রেরণ করেছে গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) রাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান জরুরি বার্তা পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বার্তায় বলা হয়, গত বছর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ফুলছড়ি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সমতল ২০.৮৮ মিটার হলে পানি বিপদসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪ টি পয়েন্টে ব্রীচ হয়ে ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে পানি ১৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্তমানে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার সকাল ৯টায় ফুলছড়ি ঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ১১৬ সেন্টিমিটার এবং শহরের ব্রীজরোড পয়েন্টে ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে এবং দ্রুততার সাথে ক্রমেই অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে যা ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। পানি সমতল অব্যাহত ভাবে বৃদ্ধি পেলে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে ব্রীচ হয়ে বাঁধ ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে।
এ অবস্থায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক বন্যার সতর্কতা জারিসহ খাদ্য গুদাম সমূহের সংরক্ষিত খাদ্য নিরাপদে রাখা পর্যাপ্ত শুকনা খাদ্য মজুদ রাখা, বন্যা আক্রান্ত লোকদের জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, জরুরি মৎস্য আহরণ করে বিক্রির পরামর্শ প্রদান করা ইত্যাদিসহ বা পাউবো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভিতরে যে সকল স্থানে বন্যা মুক্ত রয়েছে সে সকল স্থানের জনগণকে সতর্ক করে তাদের জানমালের আগাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে মাইকিং করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এছাড়াও বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয় আগামী ১৬ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলার প্রতিটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র হতে জানানো হয়েছে।
গাইবান্ধায় ২৬টি ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
গাইবান্ধা :: উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত এবং ভারী বর্ষণের কারণে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়া সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ চুঁইয়ে পানি অপর পাড়ে যাচ্ছে। এতে বাঁধটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বন্যার পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙ্গে ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। তবে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধের ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়া খোলাহাটি ইউনিয়নের কিশামত বালুয়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধও চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ায় তা হুমকির মুখে পড়েছে।
অপরদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির ফলে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ওঠায় পানিবন্দী পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। শুকনো খাবার ও জ্বালানির অভাবে খাদ্য সংকটে পড়েছে বন্যার্ত মানুষ। এছাড়া গোবাদি পশুরও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার অনেকে ইতোমধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বন্যা কবলিত ৪টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২১ হেক্টর জমির পাট, আমন বীজতলা, আউশ ধান এবং বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফুলছড়ির বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে জনসাধারণকে বিদ্যুতের খুটি স্পর্শ না করার জন্য মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বুধবার দুপুর ১২টা ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১৬ মিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৯৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।