শুক্রবার ● ১৭ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » ফিচার » বিশ্বনাথে অফিস সহকারী আসমার আত্মহত্যার জন্য দায়ী কে ?
বিশ্বনাথে অফিস সহকারী আসমার আত্মহত্যার জন্য দায়ী কে ?
মো. আবুল কাশেম :: হারপিক খেয়ে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বাহাড়া-দুভাগ গ্রামের ফজলুর রহমানের স্ত্রী ও স্থানীয় ‘আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ’র অফিস সহকারী আসমা শিকদার সিমলা (৪০)’র আত্মহত্যায় ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। নিহতের স্বামী ও পিতার পরিবারের দাবি বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও এক সদস্যের চাপ এবং অপমান সইতে না পেরে আত্মাহুতির মতো ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিয়েছেন আসমা। এ অভিযোগে থানায় মামলাও চলমান রয়েছে। এদিকে, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফের পরিবারের দাবি পারিবারিক কলহের কারনেই আসমা শিকদার আত্মহত্যা করেছেন। এখন গভর্নিংবডির উপর দায় চাপিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। অন্যদিকে, পুলিশ বলছে অভিযুক্তরাই আসমার আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য দায়ী।
বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও এক সদস্যের চাপ-অপমান সইতে না পেরে, পারিবারিক কলহের কারণে, নাকি অন্য কোন কারণে আসমা শিকদার সিমলা আত্মহত্যা করেছেন? এই প্রশ্ন অনেকের। তাই ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রশাসন ও সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, গত ৬ জুলাই হারপিক পানের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮জুলাই আসমা শিকদার সীমলা মৃত্যুবরণ করেন। ওইদিন (৮ জুলাই) বিকেলে দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য আনোয়ার মিয়াকে (৪২) আটক করে পুলিশ। পরদিন ৯জুলাই নিহতের স্বামী ফজলুর রহমান বাদী হয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ, কমিটির সদস্য আনোয়ার মিয়া ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিম উদ্দিন (৫৫)’কে অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৬)। আর ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আনোয়ার মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
আসমার পরিবারের দাবী, প্রায় ১৯বছর ধরে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন আসমা শিকদার সিমলা। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৮ জুন নতুন কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রতিষ্ঠানের বিগত ৩ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার জন্য কয়েকজন সদস্য অফিস সহকারী আসমা শিকদার সিমলাকে চাপ প্রয়োগ করেন ও অপমান করেন একাধিকবার। এমনকি নিজেদের পছন্দের মানুষকে চাকুরী দেওয়ার জন্য কলেজ শাখার অফিস সহকারীর পদ থেকে আসমাকে বাদ দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুর রউফের বাড়িতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে অযুক্তিকভাবে বার বার চাপ সৃষ্টি করায় এবং চাকুরী থেকে বাদ দেওয়ায় তখন ওই বৈঠকে অনেকটাই ক্ষুব্ধ হয়ে আসমা জানতে চান ‘তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের একটি দূর্নীতি ধরে দেওয়ার পরও গভর্নিং বডি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং অযুক্তিকভাবে কেন তাকে (আসমাকে) আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার জন্য বার বার চাপ দেওয়া হচ্ছে?’। তখন আসমাকে তার স্বামী ফজলুর রহমানের সামনেই গভর্নিং বডির সদস্য আনোয়ার মিয়া চড় মেরে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন এবং হিসাব ঠিক না থাকলে তার পিতার গলায় চাপ দিয়ে টাকা উদ্ধার করার হুমকি দেন সভাপতি আব্দুর রউফ।
পরবর্তীতে ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আবারও অসালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হয় আসমাকে। আর এসব অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই দিন বৈঠক শেষে ২.১৫ মিনিটের দিকে নিজ বাসার (ভাড়াটিয়া) বাতরুমে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে হারপিক পান করেন তিনি। এরপর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জুলাই ভোররাতে মৃত্যুবরণ করেন আসমা।
আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা এম এ রউফ সাংবাদিকদের বলেন, আসমা আমার মেয়ের মতো হওয়াতে সে প্রায়ই নিজের পারিবারিক কলহের কথা আমাকে বলত। নিজেও মানসিক চাপে ভোগতো। তাই আমি তাকে নিজের সাধ্যমতো শান্তনা দিতাম। প্রতিষ্ঠানের হিসাব তার কাছে যাওয়া বা এজন্য তাকে চাপ দেওয়া একটি অবৈধ কাজ। আর আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন অবৈধ কাজ করতে পারি না। পূর্বের কমিটি আমাদের কাছে ৪ বছরের হিসাব হস্তান্তর করতে চেয়ে ছিলেন। আমরা সচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি অডিট কমিটি গঠন করে তদন্ত করাচ্ছি। তবে তাকে কিভাবে চাপ দিলাম। আসমার আত্মহত্যার জন্য তার স্বামী (ফজলুর) দায়ী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। আর সে (ফজলুর) নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট মামলা করেছে। এছাড়া একটি পক্ষ তাকে ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করছে।
আসমার স্বামী ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পারিবারিক কোন কলহ নেই। স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছি। আমার ভাই কর্তৃক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগটি মিথ্যা-বানোয়াট। আসমা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দূর্নীতি ধরে দিলেও গভর্নিং বডি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং আমার (ফজলুর) সামনেই আসমাকে চড় মেরে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন গভর্নিং বডির সদস্য আনোয়ার মিয়া এবং হিসাব ঠিক না থাকলে তার (আসমার) পিতার গলায় চাপ দিয়ে টাকা উদ্ধার করার হুমকি দেন সভাপতি। অধ্যক্ষের দূর্নীতি যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য আসমাকে কলেজ শাখার অফিস সহকারীর পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। আমরা চেয়েছিলাম বাহিরের কাউকে না জানিয়ে বিষয়টি শেষ করতে, আর তাই নিজেদের সম্মান রক্ষার জন্য কাউকে এব্যাপারে জানানো হয়নি। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানান ফজলুর রহমান।
এদিকে, আসমা শিকদার নিহতের দিন থেকে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিম উদ্দিন গাঁ ঢাকা দেয়ায় এলাকায় নানা গুঞ্জন ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন এবং যাতে কাউকে অযথা হয়রাণী করা না হয় সেজন্য প্রশাসন ও সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ প্রসঙ্গে দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমির আলী সাংবাদিকদের বলেন, এই মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি এ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. শামীম মুসা সাংবাদিকদের বলেন, অভিযুক্ত আসামীরাই আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য দায়ী। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। তবে এঘটনায় কাউকে হয়রাণী করা হবে না।
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি, সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম।
গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী আনোয়ার গ্রেফতার
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামের ১৮ বছরের এক পিতৃহারা তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী আনোয়ার মিয়া (৪০)’কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। সে ইসবপুর গ্রামের মন্নান মিয়ার পুত্র। আজ শুক্রবার (১৭ জুলাই) রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে উপজেলার ভুরকি বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্বনাথ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী।
গত ১ জুলাই রাতে গণধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী। ঘটনার বারোদিন পর গত সোমবার বিশ্বনাথ থানায় আনোয়ার মিয়াকে প্রধান আসামী করে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং দু’জনকে অজ্ঞাত আসামী রেখে থানায় মামলা (নং-১১) দায়ের করে ভিকটিম তরুণী। মামলার অপর দুই আসামী ইসবপুর গ্রামের রিয়াছদ আলীর পুত্র সুজন মিয়া (৩০) ও মৃত ফজর আলীর পুত্র শায়েস্তাবুর মিয়া (৩০) পলাতক রয়েছেন।