শুক্রবার ● ১৭ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » কমলগঞ্জে কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ
কমলগঞ্জে কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ
এম এ কাদির চৌধুরী ফারহান, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পশুরহাটগুলো করোনায় যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। দিন দিন করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে আর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই।
হাটগুলোতে মাক্স, হেন্ডগ্লাব্স ছাড়া ও সামাজিক দুরত্ব না মেনেই চলছে পশু ক্রয়-বিক্রয়। এতে যেন পশুর হাটগুলো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের খনি ও মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আবার ল্যাম্পি স্কিন নামক গবাদি পশুর নতুন একটি ভাইরাস সারাদেশে মহামারি আকারে ছড়িয়েছে, এর প্রভাব রয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়ও। এরপরেও হাটগুলোতে পশুগুলোর কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই চলছে ক্রয়-বিক্রয়। বাজারগুলোতে নেই কোন পশুর রোগ নির্ণয় করার ব্যবস্থা, নেই কোন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমোদিত পশু ডাক্তার বা পর্যবেক্ষণ টিম।
আজ শুক্রবার ১৭ জুলাই এমন দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার সর্ববৃহত পশুর হাট আদমপুর বাজারে। কমলগঞ্জ উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৯ জন মানুষ, সুস্থ হয়েছে ৫১জন ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। অন্যদিকে উপজেলায় ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসে সহস্রাধিক গবাদি পশু আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২০টি গরুর। তবে এখন এ রোগের প্রকোপ নেই বলে দাবী করছে উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ।
গরু ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, গরুগুলোকে কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাজারে প্রবেশ করানো হচ্ছে। মাক্স পরিধানসহ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা উচিত বলেও মনে করেন তারা। কিন্তু তাও নানা অজুহাত দেখিয়ে মানছেন না কেউ কোনো স্বাস্থ্যবিধি। করোনা ভাইরাসের কারণে ক্রেতা কিছুটা কম হওয়ায় ও গরুর ল্যাম্পিং স্কিন ভাইরাসের কারণে গরুর দাম অনেক কমে গেছে।
হাট ইজারাদার কোন রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই পশু ক্রয়-বিক্রয় করার কথা স্বীকার করে বলছেন, তারা জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচারণা করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটরাও হাট-বাজারগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে অনেককে জরিমানাও করছেন। কিন্তু তার পরেও জনগণ তা মানছেন না।
সরেজমিনে শুক্রবার বিকেলে আদমপুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের চায়ের দোকানে, সেলুনে, গণপরিবহনে, প্রতিটি অলিগলিতে নেই কোন সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। দোকানে রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। বেশিরভাগ লোক মাস্ক ব্যবহার করছে না। কেউ কেউ মুখে না পড়ে গলায় বা থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখছে। জিজ্ঞাসা করলে দিচ্ছে নানা ধরনের অজুহাত। সিএনজি, অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ি আগের মতোই পাঁচজন যাত্রী নিয়ে করছে নিত্য চলাচল। আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলেও সেলুনে যাচ্ছে সবাই। সেখানে বসার আসন আর সরঞ্জামাদি জীবানুমুক্ত না করেই চলছে চুল-দাড়ি কাটা। পাড়া-মহল্লা চায়ের দোকানে চলছে আড্ডা, নাম মাত্র ধুয়ে দেওয়া অন্যের চুমুক দেয়া কাপেই খাচ্ছেন চা।
আদমপুর বাজারের এক রিকশাচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, সংসারের প্রয়োাজনে বের হয়েছি, কিন্তু কাম না করলে খামু কি! নিজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে বের হইলেও বেশি ভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে না। ফলে নিজেও রয়েছি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: হেদায়েত আলী বলেন, কোরবানির গরুর হাটগুলোতে তাদের মেডিকেল টিম কাজ করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা উভয়ে যাতে উপকৃত হয় তার জন্য দু’একদিনের মধ্যে মেডিক্যাল টিম পশুর হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক তদারকি করবে। তিনি আরো জানান, কিছুদিন আগে কমলগঞ্জ উপজেলায় ল্যাম্পিং স্কিন ভাইরাসে গবাদি পশু আক্রান্ত হলেও এখন আর এ ভাইরাসটি নেই। গবাদিপশুগুলো সুস্থ আছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একমাত্র ব্যক্তি সচেতনতাই পারে কমলগঞ্জের করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। তারপরেও যতটা সম্ভব সকলে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানদের কেউ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা ছাড়া কোন ভাবেই করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। করোনা থেকে বেঁচে থাকার যে কয়েকটি উপায় রয়েছে তার মধ্যে সামাজিক দ‚রত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অন্যতম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
ক্যান্সার আক্রান্ত বিএনপি নেতা মন্নানের পাশে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফি
কমলগঞ্জ :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান দীর্ঘ দিন ধরে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নর্থইস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিজের সম্পদ বলতে যা ছিল তা নিজের রোগ-সুখে খরচ চালাতে গিয়ে অনেক আগেই শেষ করে দিয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এমন সময় এ বিএনপি নেতার পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাঁড়ালেন কমলগঞ্জের দানশীল পরিবারের সন্তান সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি,বর্তমান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া শফি। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত বিএনপি নেতা মন্নানকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আলাপকালে গোলাম কিবরিয়া শফি বলেন, আব্দুল মান্নান বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী। তার আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভাল নয়। আমি তার ক্যান্সার আক্রান্তের খবর শুনার পর এখন পর্যন্ত যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। আগামীতেও এ সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান শফি। তিনি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে আহবান জানান মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত বিএনপি নেতা আব্দুল মন্নানের পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করুন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল মন্নান বলেন, আমি অনেক দিন যাবত ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়, নিজের অল্পকিছু জমি ছিল তা বিক্রি করে ও অনেক বিএনপি নেতার সাহায্যে চিকিৎসা চালাচ্ছি। বিএনপি নেতাদের মধ্যে গোলাম কিবরিয়া শফি আমাকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং তিনি বলেছেন আর যতটুকু পারেন সহযোগিতা করবেন। তিনি বলেন, তার চিকিৎসার জন্য আরো অনেক টাকার প্রয়োজন। তার সেই চিকিৎসা খরচের জন্য তিনি সকলের কাছে দোয়া ও সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
কমলগঞ্জে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বৃদ্ধের করোনা পজেটিভ : বাড়িতে আক্রান্ত-৫
কমলগঞ্জ :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনাথপুর গ্রামে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী বৃদ্ধ মুন্সীবাজার ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মরহুম ইউনুছ মিয়ার ছেলে ইয়াওর আলী (৭০) এর নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ এসেছে। গত সোমবার (১৩ জুলাই) রাতে তিনি মারা যান। ইয়াওর আলীর ছোট ভাই ব্যবসায়ী আকবর হোসেন (৬২)সহ বাড়ির ৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ এসেছে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রাপ্ত ফলাফলে এ তথ্য জানা যায়।
করোনা শনাক্ত রহিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনাথপুর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার আকবর হোসেন শুক্রবার সকালেই সিলেট মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সোমবার রাতে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে বৃদ্ধ ইয়াবর আলী অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাবার আগেই তার মৃত্যু হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে নিহত বৃদ্ধসহ পরিবার সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ফলাফলে বাড়ির ৫ জনের নমুনা পজেটিভ আসে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মঙ্গলবার মৃত ব্যক্তির জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী বৃদ্ধের পরিবার সদস্যরা জানান, ব্যবসায়ী আকবর হোসেন করোনা শনাক্ত হয়ে শুক্রবার সকালে সিলেট মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এম, মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে মারা যাওয়া বৃদ্ধের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজেটিভ আসে। একই সাথে বৃদ্ধের ছোট ভাই ব্যবসায়ী আকবর হোসেনের করোনা শনাক্ত হয়ে সিলেট একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে বাড়ির লোকজন আগে থেকেই আইসোলেশনে আছেন। নমুনা পরীক্ষায় বাড়ির ৫ জনের করোনা পজেটিভ আসায় বাড়িটি আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন করা হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার রাতে প্রাপ্ত ফলাফলে কমলগঞ্জে চিকিৎসক, ব্যবসায়ীসহ নতুন করে আরো ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৯ জন। নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে সুস্থ্য হয়েছেন ৫১ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুকরণ করেছেন ৬ জন।
প্রবীণ শ্রমিকনেতা মনোহর আলী শোক সংবাদ
কমলগঞ্জ :: পূর্ব-পাকিস্তান চা-শ্রমিক সংঘের অন্যতম পৃষ্টপোষক এবং কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ, প্রবীণ শ্রমিকনেতা ও প্রাক্তন ইউপি সদস্য মনোহর আলী (৭৮) দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরস্থ নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ৩ কন্যাসহ অংসখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টায় শিংরাউলী ঈদগাহ মাঠে জানাযা শেষে স্থানীয় দাফন করা হয়।
প্রবীণ শ্রমিকনেতা মনোহর আলীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন, সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, জেলা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, ধ্রবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তফা কামাল ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া গভীর শোক প্রকাশ করে শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।