সোমবার ● ২০ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » পপির প্রতি প্রেমের পরীক্ষা
পপির প্রতি প্রেমের পরীক্ষা
ফজলুর রহমান :: তখন ‘পপি’ এক হট নাম। এক ‘পপি’র প্রেমে মাতোয়ারা অনেকে। কৈশোর পেরুনে বয়সে মাতাল করেছিল পপি।
পড়ার টেবিলে পপি। পরীক্ষার ফাঁকে পপি। মনে পপি। মগজে পপি। গোপনে পপি। স্বপনে পপি। শয়নে পপি।
সে সময়ে উঠতে বসতে পপি। পপি ছাড়া যেন চলেই না। এই ‘পপি গাইড’ ভাইরাস হানা দেয় ঘরে ঘরে। সাদরেও নেয় অনেকে।
লাইব্রেরিওয়ালার দোকান ভরা পপি নিমিষেই শেষ হচ্ছিল। এক পপি বেঁচেই ফুলে উঠে ব্যবসা। চড়া দামে কিনে সহজ তরিকায় পাস দিতে ব্যাকুলতায় ভরা চারপাশ।
পপি’র সাইজও ছিল ‘জটিল’। না মোটা না চিকন। না লম্বা না বেঁটে। অনেকটা ‘চটি বই’ সাইজ। নকল করার জন্য যথাযথ। কাঁচি দিয়ে কেটে ফাইল বানাতেই সহজ করে তৈরি যেন!
এই পপি হাতে নিয়ে আগের বছরে আসা প্রশ্ন বাদ দেয়া যাক। এরপর কমন প্রশ্নগুলো দেখতে হবে। তারপর কেটে কেটে ফাইল করে অর্ধেক সেবন করতে পারলেই পরীক্ষা নামের রোগমুক্তি! পাস নম্বর নিশ্চিত।
এতো গেল ৫০ নম্বরের কাহিনী। পূর্ণমান তো ১০০! তাই পূর্ণ দৈর্ঘ্য কাহিনী দেখতে হলে
সাথে রাখতে হবে ৫০০ নাম্বারের প্রশ্ন ব্যাংক। যেখান থেকে ৫০টি প্রশ্ন করা হবে। মানে ৫০০-৪৫০=৫০। সতর্ক থাকলে এখানে ৫০ এ ৫০।
১০০ নাম্বারের মধ্যে ৩৩ পেলে পাস। সেখানে আবার পপি’সাথে সখ্যতা, প্রশ্নব্যাংকের সাথে ঘনিষ্ঠতা। সব মিলে পাস ও পছন্দের ডিভিশন লাভের সুবর্ণ সুযোগ।
সব সরকারের মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত এক নেতা তখন মন্তব্য করে বসেছিলেন,’এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিলে একজন রিকশাওয়ালাও এসএসসি পাস করবে।’
সেই পপি মারফত পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়া মাত্রই এক বন্ধুর মুখভরা হাসি। থার্টি টু অলআউট করে আমাকে শুনিয়ে বলে, ‘সব কমন পড়েছে। একেবারে হুবহু বসায় দিছি। দাড়ি-কমাও ভুল নেই। কোন নাম্বার কাটতে পারবে না।’
তখন এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতো বৃহস্পতিবার। রেজাল্ট হতো শুক্রবার। ফলাফলে পপির প্রতি অতি প্রেম তেমন সফল হলো না।
আমার সেই বন্ধু আপাতত পার পায়। তবে পরে লেখাপড়ার দৌড়ে টিকতে পারেনি। তখন বুঝতে পারি পপিতে নয়, সহিতেই সফলতা। ভিতরে থাকতে হবে কিছু। যে যন্ত্রের জ্বালানি বেশি, সে যন্ত্রই লম্বা দৌড়ে সক্ষম।
এসব সেই ১৯৯৫ সালের কথা। তবে এখনো সেই পপিময় দিনের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে, ভাইয়ের সাইকেলের পেছনের ‘ক্যারিয়ার’-এ বসে দূরের স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যাওয়া। স্মৃতিতে আছে, পরীক্ষার দিন সকালে ডিম, দুধ, কলা না খাওয়ার অলিখিত নিয়মটিও!
ভালো থাকুক পরীক্ষা শেষে ডাব হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ভাই। ভালো থাকুক যতনে শাসনে মানুষ করতে চাওয়া মা-বাবা। ভালো থাকুক রঙিন শৈশবের সব সতীর্থ। ভালো থাকুন পরীক্ষা পর্যন্ত প্রোডাক্ট পৌঁছানো সব কারিগর।
লেখক : ফজলুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।