সোমবার ● ২০ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » উখিয়া-টেকনাফ সড়কে দিনব্যাপী অসহনীয় যানজটে জনদূর্ভোগ
উখিয়া-টেকনাফ সড়কে দিনব্যাপী অসহনীয় যানজটে জনদূর্ভোগ
পলাশ বড়ুয়া, উখিয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক সংস্কার কাজ নব্বই শতাংশ শেষ হলেও দীর্ঘ যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণের। বাকী অংশে খানা খন্দের কারণে তীব্র যানজট লেগে থাকে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কক্সবাজারের সড়ক বিভাগের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এই কাজের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৯০কি:মি দূরত্বের সড়কটির তিনটি পৃথক প্রকল্পের আওতায় ৭৯ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও উন্নয়নকাজে ৪৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দুটি প্রকল্পের অধীনে ৫০ কিলোমিটারের সংস্কারকাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত কাজে অগ্রগতি হয়েছে ৯০ শতাংশ। প্রথম প্রকল্পের আওতায় ১২২ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ২৫ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে সম্প্রসারণ করে সড়কটি ২৪ ফুট প্রস্থে উন্নীত করা হচ্ছে। যা লিংক রোড থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত কাজের ৯০শতাংশ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকল্পের আওতায় উখিয়া ফায়ার সার্ভিস থেকে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারে সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে ১৫৪ কোটি টাকা।
২০২০ সালের জুনের মধ্যে এই ৫০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হলে তৃতীয় প্রকল্পে অবশিষ্ট ১৮২ কোটি টাকায় টেকনাফ পর্যন্ত আরও ৩০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ শুরু হবে।
এর কারণ জানতে চাইলে সওজ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, সড়কটির প্রশস্থ ১৮ থেকে ৪৫ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। তবুও যত্রতত্র গাড়ী এবং ইজিবাইক পার্কিংয়ের কারণে যানজট লেগে থাকে। সড়কের কিছু অংশে প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকার কারণে বাকী অংশের কাজটি করা সম্ভব হয়নি। গত ১৯ জুলাই তা নিরসন হয়েছে। দ্রুত সময়ে বাকী অংশের কাজটিও শেষ করা হবে বলে জানান।
পথচারী জসিম নামে একজন বলেন, দীর্ঘ যানজটের কারণে গাড়ী চলাচল ছাড়াও সাধারণ মানুষের রাস্তা পারাপারে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি শফিক আজাদ বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক সংস্কার কাজের ধীরগতি ও ট্রাফিকিং অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিন দীর্ঘদিন যানজট লেগে থাকে। শতশত এনজিও’র গাড়ীর বহরের কারণে এই ধরণের যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই এনজিও গুলোর অফিস রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক স্থানান্তর করে সড়কের পর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যকর করা হলে যানজট নিরসন হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের সহকারি পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল চন্দ্র বণিক বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক নিয়োজিত রয়েছে। উখিয়া এবং কোটবাজার স্টেশনের কিছু অংশে সড়কের সংস্কার কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি তাই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কের মাঝে ডিভাইডার দিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা নিরসন করা হবে বলে তিনি জানান।
উখিয়ায় করোনাকালীনও থেমে নেই বাল্য বিবাহ
উখিয়া :: কক্সবাজারের উখিয়ায় করোনা মহামারিতেও থেমে নেই বাল্য বিবাহ। ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বহু বিবাহ, নারী- শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি, মাদকসহ নানা অপরাধ প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। মানা হচ্ছে না বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ নীতিমালা। যদিও দেশে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ বছরের নিচে বিয়ে না করার আইন রয়েছে। তবে আর্থিক দৈন্যতা, সামাজিক প্রথা, অসচেতনতা ও কুসংস্কারের কারণে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না বলে এমনটি মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৮ জুলাই রত্নাপালং ইউনিয়নের ৬নং ওর্য়াডের কামারিয়ার বিলে এলাকার হোসেন আলীর মেয়ে উম্মে হাবিবা জান্নাতকে সৎ মা কর্তৃক ইচ্ছার বিরুদ্ধে মরিচ্যার এক প্রবাসীর সাথে বাল্য বিয়ের দিন ধার্য্য করা হয়।
খবর পেয়ে উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খাঁন হাজির হয়। ওই সময় বরের উপস্থিতি পাওয়া না গেলেও কনের পরিবারকে সতর্ক করা হয়।
সূত্রে আরো জানা গেছে গত ১৬ জুলাই দুপুরে উখিয়ার রাজাপালং টাইপালং মাদ্রাসা নবম শ্রেণির এক ছাত্রী প্রকাশ বৈদ্যনির মেয়ের সাথে টেকনাফ হারাংখালী এলাকার এক সৌদি প্রবাসী মো. আহমদের সাথে বিয়ে সম্পন্ন হয়। মেয়েটির বয়স ১৪বছর হলেও কাবিননামা ছাড়া পালংখালী কাজী অফিসে বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে বিয়ে হয় বলে সূত্র জানায়।
টাইপালং মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুর রহিম এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে, আমাদের মাদ্রাসার নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর পালংখালী নিয়ে গিয়ে চুক্তির মাধ্যমে বিয়ের খবর শুনেছি। সে কামাল উদ্দিনের মেয়ে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে পালংখালী ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী কমরুদ্দিন মকুল বলেন, তাঁর অফিসে বাল্য বিয়ে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেহেতু সফটওয়্যারের মাধ্যমে বয়স যাচাই সাপেক্ষে কাবিন নামা সম্পাদন করা হয় তাই বাল্য বিয়ের কোন সুযোগ নেই।
একই ধরণের কথা বলেন, হলদিয়াপালং ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী আকতার হোসেন। বাল্য বিয়ে হতে পারে তবে সে ব্যাপারে তাঁর কাছে কোন তথ্য নেই বলে জানান।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের রুমঁখাপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সীমা বড়ুয়া (১৪) এর সাথে কুতুপালং এলাকার এক গ্রীল মিস্ত্রীর সাথে বিয়ে হয়। সে প্রতিবন্ধী ভুলু বড়ুয়ার মেয়ে।
এছাড়াও একই বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী পপি বড়ুয়ার সাথে আপেল বড়ুয়া নামে এক যুবকের সাথে বিয়ে সম্পন্ন হয়। সে দিনমজুর প্রদীপ বড়ুয়া মেয়ে।
এ বিষয়ে রুমখাঁপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, করোনাকালীন দুই ছাত্রীর বাল্য বিয়ের খবর শুনেছি। তাদের দুই পরিবারই নিতান্ত গরীব। তবে বাল্য বিয়ের খবর পেলে অবশ্যই তা প্রতিরোধ করা হতো।
এতো ছোট বয়সে মেয়ের ব্যাপারে অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সীমার বাবা ভুলু বড়ুয়া বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। নিজের থাকার ঘরটিও জীর্ণশীর্ণ। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মেয়ের বিয়ে দিতে হয়েছে। একই ধরণের কথা বলেন পপি’র পরিবার।
বৌদ্ধদের বিয়ে এখনো সামাজিক প্রথা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়। কোন কাবিন বা লিখিত চুক্তি সম্পাদন হয় না। জাতীয় ভাবে একটি আইন প্রণয়ন হচ্ছে। অনুমোদন হলে তা কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মেধু কুমার বড়ুয়া।
হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, বাল্য বিয়ের কারণে পারিবারিক সহিংসতাসহ বহুমুখী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তাই মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতা প্রতিরোধের বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি এনজিও গুলোকে আরো বেশি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বাল্য বিবাহ বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদেররা বাল্য বিবাহ বন্ধে সোচ্চার রয়েছেন। খবর পেলেই আমরাও অভিযান পরিচালনা করছি। বাল্য বিয়ের কোন কাজীর সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।