বুধবার ● ২২ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ
স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ
মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: শহরের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব কোন প্রকার মানছে না এখানকার চিত্র ভিন্ন। সেখানে নিয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই। বেশির ভাগ মানুষ করোনা বিষয়ে সচেতন নয়। আর যারা সচেতন তারাও মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। হাট-বাজার গুলোতে কেউ মানছে না শারীরিক দূরত্ব। বিশেষ করে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলে ও ব্যবসায়িরা রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। অনেক দোকান ও কিছু হোটেল দিন রাত ২৪ ঘন্টা খোলা রেখে ব্যবসা করছে। সে মোতাবেক কালীগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত ২ শতাধিক ব্যাক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা ভাইরাস সংক্রামক থেকে রক্ষা করার জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেউ মানছে না লকডাউন। এতে দিন দিন করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। গ্রামের মানুষদের সচেতন করতে প্রশাসন কাজ করলেও পাল্টায়নি কোনো কিছু, আগের মতই স্বাভাবিক নিয়মেই যেন চলছে তারা। কালীগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু হাট ঘুরে দেখা গেছে শহরের চেয়ে গ্রামের হাট বাজারের ভিন্ন চিত্র। এসব গ্রামের হাটবাজারে মানুষের সমাগম অনেক বেশি। এখানে একদিকে মানুষের ভিড় অন্যদিকে গাদাগাদি করে চলছে কেনাকাটা। স্বাভাবিক নিয়মেই চলছেন তারা। কারো মুখে মাস্ক নেই কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই যে যার মত চলছেন। করোনা মহামারি সম্পর্কে জেনেও এরা একদিকে যেমন নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলছেন অন্যদিকে তাদের পরিবার ও প্রতিবেশীরাও পড়ছে মারাত্বক ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় সবাইকে আরো বেশি সচেতন করা না হলে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল। রামনগর গ্রামের মহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রামের মানুষ এত অচেতন যে তারা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পালন করেন না। সরকার প্রতিনিয়ত তাদের সচেতন করছে, কিন্তু গ্রামের মানুষ গুলো সেই নিয়ম মানছেন না, এ জন্য আমরা খুবই আতঙ্কিত ও চিন্তিত। পাইকপাড়া গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মানুষদের ভেতরে সচেতনতা বলতে কিছু নেই। এ বিষয়ে প্রশাসনের আরো নজরদারি বাড়ানো উচিত। করোনা সংক্রমণ রোধে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন অনেক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষ স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা করছে না। প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতনতা কমিটি গঠন করে দেওয়া হলে মাস্ক ব্যবহার থেকে শুরু করে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে ওই কমিটি দৃষ্টি রাখবে, এতে কিছুটা হলেও মানুষ সচেতন হবে। শহরের লোকজন সচেতন থাকলেও গ্রামের লোকজন মোটেও সচেতন নয়, তাদের কোনোভাবে বোঝানো যাচ্ছে না করোনা রোগটির ভয়াবহতা। তারা যেভাবে শারীরিক দূরত্ব না মেনে চলছে তাতে এটা আরো বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কালীগঞ্জ উপজেলার গ্রাম এলাকার হাট বাজার গুলোতে প্রচার প্রচারনা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসনের সব ধরনের কার্যক্রম চলছে। প্রত্যান্ত এলাকাতে মানুষকে সচেতন করতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে। আবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও ব্যাপকভাবে শহর ও গ্রাম এলাকায় টহল দিচ্ছে এবয় মানুষকে সচেতন করছে তার পর ও মানুষ কোন কিছুই তোয়াক্কা করছে না। সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতি থাকা অবস্থায় এক ধরনের চিত্র, ফিরে আসার পর ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। নিয়ম গুলো পালনের বিষয়টি তাদের ভেতর থেকে আসে না।
ঝিনাইদহে দুই সন্তানকে চেয়ারে পিটমোড়া করে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও স্ত্রীকে পাঠালো পাষ- বাবা
ঝিনাইদহ :: ‘মাদকসেবী’ স্বামীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান স্ত্রী। কোনোভাবে স্ত্রীকে বাড়িতে ফেরাতে না পেরে নিজের দুই সন্তানকে চেয়ারে বেঁধে নির্যাতন শুরু করে পাষ- বাবা। প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠায় ‘মাদকসেবী’ স্বামী। সোমবার ঝিনাইদহ সদরের ধানহাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এরইমধ্যে মা শিরিন সুলতানা দুই সন্তানের নির্যাতনের ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভিডিওটিতে দেখা যায়, নিজের দুই সন্তানকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে তাদের ‘মাদকসেবী’ বাবা। একই সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে বলছে ‘তোর মা আমার কথা শোনে না কেন’? এছাড়া সন্তানদের দিয়ে ঘর মোছানোর কাজ করানো হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, ২০০৬ সালে জেলা সদরের ধানহাড়িয়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান শিমুলের সঙ্গে বিয়ে হয় শহরের আরাপপুর এলাকার শিরিন সুলতানার। এ দম্পতির ঘরে দুটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে নানা কারণে শিরিনের ওপর অত্যাচার করছিল শিমুল। অত্যাচার সইতে না পেরে দুই ছেলেকে রেখে বাবার বাড়িতে চলে যায় শিরিন। পরে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে আবার বাড়ি ফিরে আসার দাবিতে দুই ছেলেকে চেয়ারে বেঁধে নির্যাতন করে বাবা শিমুল। মা শিরিন বলেন, বিয়ের পর থেকে প্রায়ই আমাকে মারধর করত স্বামী। কয়েকবার শালিসের পর বাড়িতে নিয়ে আবারো মারধর করে স্বামী। এ জন্য তাকে তালাক দিতে বাধ্য হই। এখন আবার আমাকে ফিরিয়ে নিতে সন্তানদের মারধর করা হচ্ছে।
ফেসবুকে দেয়া শিরিনের স্ট্যাটাসটি হলো-
‘আমার বাসা আরাপপুর ঝিনাইদহ। এই বাচ্চা দুইটা আমার। এদের বাবার অত্যাচারের কারণে আমি চলে এসেছি বাবার বাড়ি। ওরা ওদের দাদা দাদীর সঙ্গে থাকে। মাঝে মাঝে আমার কাছে আসতো। ফোনে কথা হতো। কিন্তু এখন ওদের বাবা এরকম অত্যাচার শুরু করেছে। ভিডিও করে আমার কাছে পাঠায়। আমি বাচ্চা কাছে রাখছিলাম কিন্তু জোর করে নিয়ে গেছে। বাসায় এসে ভাঙচুর করে। আমার কোনো ভাই নাই, বাবাও অসুস্থ। বাচ্চা মানুষ করার সামর্থও নাই আমার। তাই জোরও করতে পারি না। কিন্তু এখন অত্যাচারের পরিমাণ এতো বেড়ে গেছে যে আমার বাচ্চারা ওখানে থাকলে মরে যাবে। আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি বাইরে যেতে পারছি না। এমন কি আমার শ্বশুরও বলেছে ফোন করে, আমি গেলে আমাকে খুন করে ফেলবে। ওদের বাবা নেশা করে। মাথার ঠিক নাই। কাজ করে না। এমন অবস্থায় আমি খুব নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছি। আমি আমার বাচ্চাদেরকে আমার কাছে রাখতে চাই। এবং ওর শাস্তি দাবি করছি। আপনারা আমাকে সাহায্য করেন। ওর নাম হাবিবুর রহমান শিমুল। বাসা ধানহাড়িয়া, চুয়াডাঙ্গা। ঝিনাইদহ। পিতা লিয়াকোত আলী।’ ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, দুই ছেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরইমধ্যে অভিযুক্ত শিমুলকে আটক করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।