বুধবার ● ২২ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » বরিশাল বিভাগ » লালমোহনে জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
লালমোহনে জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
খলিল উদ্দিন ফরিদ, ভোলা প্রতিনিধি :: ভোলার লালমোহনে জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে আবারও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, লালমোহন উপজেলায় (২০১৯-২০২০) অর্থবছরে “অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের” আওতায় ৮৯টি নলকুপ স্থাপনের কাজ পায় পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “দ্বীপ এন্টার প্রাইজ”। বরাদ্দকৃত কাজটি গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও স্থাপনকৃত নলকুপগুলোর পাটাতন না করেই উপ-সহকারী প্রকৌশলীর ছত্রছায়ায় কাগজে কলমে তা সম্পন্ন দেখিয়ে বিল উত্তোলণ করে নিয়েছেন ঠিকাদার।
এদিকে পাটাতন না করার ফলে উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউপি সদস্যা শাহিনার নলকুপের গোড়া থেকে ভেঙে পড়ে। তার স্বামী সেলিম মাষ্টার জানায়, পাকাকরণের বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহকে একাধিকবার জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি, বরং জানাতে গিয়ে মাসুম বিল্লাহর দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন স্ত্রী শাহিনা। বিষয়টি ভোলা জেলা জনস্বাস্থ্য’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ধলীগৌরনগরের চতলা এলাকার মোসলেউদ্দিন জানান, তার নলকুপের পাটাতন করা থাক দুরের কথা, এ থেকে কাদা, বালিসহ নোংরা পানি বের হচ্ছে। এ বিষয়ে অফিসে একাধিকবার জানিয়ে এখনও কোন প্রতিকার পাননি তিনি। ৯নং ওয়ার্ড এলাকার খোকন হাওলাদারের স্ত্রী আয়েশা জানান, নলকুপ মেকানিকদের সাধ্যমত আপ্যায়ন করেও নলকুপের গোড়া পাকাকরণ করাতে পারিনি। ৬নং ওয়ার্ড এলাকার মাও: ছালাউদ্দিন জানান, নিজের অর্থায়নে পাটাতন করে নিতে হয়েছে। পাটাতন বিহীন রয়েছে দক্ষিণ পশ্চিম প্যারিমোহন সৈয়দ আহমেদ মৌলভী বাড়ির দরজায় জামে মসজিদ সংলগ্ন নলকুপকটিও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, “অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের” ঠিকাদারের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি, চলমান রয়েছে। সে কোন বিল উত্তোলণ করেনি। পাটাতন বাবদ টাকা রেখে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেও আবার তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তার কাছ থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ফোন নাম্বার চাইলেও দিতে পারেন নি তিনি।
তবে ভোলা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আকমল হোসেন বলেন, “অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের” ঠিকাদার তার কাজটি সম্পন্ন দেখিয়ে প্রায়ভাগ বিল্ উত্তোলন করেছেন, কিছুটা বিল রয়ে গেছে। ঠিকাদারের কাছ থেকে পাটাতন বাবদ কোন টাকা রাখার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে (২০১৯-২০২০) অর্থবছরে “পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্প” এর বরাদ্দকৃত ৫৫টি নলকুপের মধ্যে ৩০টি স্থাপনের কাজ পায় ভোলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইলিয়াছ এন্টারপ্রাইজ। কাগজে কলমে ওই ঠিকাদার কাজ সম্পন্ন দেখালেও মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায় অসম্পন্ন রয়েছে প্রতিটি নলকুপের পাটাতন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইলিয়াছ এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো: ইলিয়াছ বলেন, নলকুপ স্থাপন, পাটাতনকরণসহ পুরো কাজটি সম্পন্ন হয়েছে প্রায় তিনমাস আগে এবং বিল প্রায়ভাগই উত্তোলণ করেছেন তিনি।
তবে ঠিকাদার তার কাজ সম্পন্ন ও বিল নেয়ার বিষয়ে বললেও লালমোহন জনস্বাস্থ্যের উপ-প্রকৌশলী জানান, কাজ সম্পন্ন হয়নি, ঠিকাদার বিলও পাননি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারকে ফোন করার পর পরই স্থাপনকৃত নলকুপগুলোর পাটাতনের কাজ সম্পন্ন করতে তরিগড়ি শুরু করেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ঠিকাদারের কাছ থেকে পাটাতন বাবদ অর্থ রেখে দিয়েছেন মাসুম বিল্লাহ। তার কাছ থেকে খরচ নিয়ে আমার মাধ্যমে স্থাপনকৃত ২০টি নলকুপের পাটাতনের কাজ আমিই করছি। এরমধ্যে প্রায়ই ভাগই শেষ বাকি ২/৩টার কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, এর আগে “সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ” প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলায় ২৩৪টি গভীর নলকূপ স্থাপনের ওয়ার্ক অর্ডার না হতেই গ্রাহকদের কাছ থেকে সরকারি ফি’র অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের, ফলে লাগামহীন হয়ে উঠেছে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতি।