শনিবার ● ২৫ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ করোনায় ৪ জনের মৃত্যু
ঝিনাইদহে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ করোনায় ৪ জনের মৃত্যু
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনসাইদহে গতকাল শুক্রবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুলিশ ফাড়ির এক টিএসআইসহ চারজন মৃত্যু বরণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কালীচরণপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ফুটবলার হাফিজুর রহমান (৬২), ঝিনাইদহ ট্রাফিক পুলিশের টাউন সব ইন্সপেক্টর ও মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বদনপুর গ্রামের মৃত দলিল উদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৫৫), শহরের আপরাপপুর খাঁ পাড়ার সিতাব উদ্দীন (১০৪) ও বৃদ্ধা ছাদিয়া রহমান। এদের মধ্যে টিএসআই শরিফুল ও আরাপপুরের সিতাব উদ্দীন ঝিনাইদহ কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাকি দুজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা সেলের মুখপাত্র ডা. প্রসেনজিৎ পার্থ বিশ্বাস।
তিনি ১৯৮৩-৮৪, ১৯৮৪-৮৫ ও ১৯৮৬-৮৭ সালে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হাফিজুর রহমান যশোর থেকে প্রকাশিত তৎকালীন জনপ্রিয় দৈনিক রাণার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। এ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলায় সরকারী হিসাব মতে ১৬ জন এবং বেসরকারী মতে ২০ জনের মৃত্যু হলো। বাকী ৫ জন ঝিনাইদহে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন বলে জানান ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের করোনা সেলের মুখপাত্র ডাঃ প্রসেনজিৎ র্পাথ বিশ্বাস। ঝিনাইদহ ইসলামী ফাউন্ডশনের উপ-পরিচালক আব্দুল হামিদ খান জানান, গত পহেলা জুলাই সাবেক সাংবাদিক হাফিজুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহ কেভিতোভ-১৯ হাসপাতাল (শিশু হাসপাতাল) ৮দিন ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ১৭ জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে ইন্তেকাল করেন। ঢাকা থেকে লাশ ঝিনাইদহে আসার পর ইসলামীক ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে ঝিনাইদহ পৌর গোরস্থানে দাফন করা হবে বলে সুত্র জানায়।
ঝিনাইদহ পুলিশের টাউন সাব ইন্সপেক্টর মো: শরিফুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ জুলাই ঝিনাইদহ কোভিড হাসপাতালে (শিশু হাসপাতাল) ভর্তি হন এবং সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে ইন্তেকাল করেন। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লাশ দাফন কমিটি মৃতের গোসল, কাফনের কাপড় ও ডেডবডি ব্যাগে নিয়ে লাশ গ্রামের বাড়ীতে সন্ধ্যায় দাফনের ব্যবস্থা করবেন বলে জানা গেছে। এদিকে ঝিনাইদহ পৌরসভার আরাপপুর খাঁ পাড়া ১০৪ বছর বয়সী মো: সিতাব উদ্দীন গত ১৭ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহ কেভিতোভ-১৯ হাসপাতাল (শিশু হাসপাতাল) ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসারত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মৃত্যু বরণ করেন।
জেলা প্রশাসক জনাব সরোজ কুমার নাথের নির্দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঝিনাইদহের লাশ দাফন কমিটি বিকালে সিনিয়র ফিল্ড সুপারভাইজার মো: আমিনুল ইসলামের নেতৃত্ব দাফন পক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এই নিয়ে লাশ দাফন কমিটি ৩২ টি লাশ দাফন করলো বলে জানান ঝিনাইদহ ইসলামী ফাউন্ডশনের উপ-পরিচালক আব্দুল হামিদ খান। এদিকে সাবেক সহকর্মী হাফিজের মৃত্যুতে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপু, ঝিনাইদহ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান বাবুল, সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম, দৈনিক নবচিত্র পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম এবং সম্পাদক আলাউদ্দীন আজাদ সাবেক প্রেসক্লাব সম্পাদক হাফিজুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, আশির দশকে সাংবাদিক হাফিজুর রহমান প্রেসক্লাব উন্নয়ন ও সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেন।
৭০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ি গ্রেফতার
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ র্যাবের কোম্পানী কমান্ডার সিনিয়র এএসপি সোহেল পারভেজ এবং স্কোয়াড কমান্ডার এএসপি এইচএম শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান চালানো হয়। সেসেময় শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজ ফতেপুরের মাঠ থেকে মাসুদুর রহমানকে (২৬) গ্রেফতার এবং তার কাছ থেকে ৭০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। সে মহেশপুরের কৃঞ্চচন্দ্রপুর (মিয়া পাড়ার) মোঃ মহি উদ্দিনের ছেলে।
হরিণাকুন্ডুতে রাস্তা খানা-খন্দে ভরা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার সাধুহাটি থেকে তৈলটুপী সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের অভাবে ছোট বড় খানা খন্দে বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে । যেন দেখার কেউ নেই। এরই মধ্যে সড়কটির প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশের বিটুমিন ও খোয়া উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে শহরের দোয়েল চত্তর থেকে তৈলটুপী পর্যন্ত সড়কটি ১৬ কিলোমিটার। ২০০০ সালে সড়কটির কার্পেটিং কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে এলজিইডি’র অর্থায়নে ভবানিপুর বটতলা থেকে জোড়াদহ বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলামিটার রাস্তা পাঁচ বছর পূর্বে সংস্কার করা হয়েছিল। স্থানীয়রা জানান বিগত প্রায় ৩/৪ বছর ধরে রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষাকালে অল্প পানিতেই সড়কটি প্রায় সম্পূর্ন পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে প্রায় হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। উপজেলার জোড়াদহ, ভায়না, তাহেরহুদা ও কুষ্টিয়া জেলার কিছু অংশের কয়েক হাজার মানুষের হরিণাকু-ু উপজেলার সাথে যোগাযোগের প্রধান সড়ক এটি। এছাড়াও এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা, ব্যবসাসহ নানা প্রয়োজনে পাশ্ববর্তী কুষ্টিয়া, চুয়াডাংগা ও ঝিনাইদহে শহরে যাতায়াত করে। চলাচল করে প্রতিদিন শত শত যানবাহন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তাটির প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার অংশের এতই বেহাল দশা গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে তাদের দ্বারা গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে খানাখন্দ পার করা হচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে ভারী যান চলাচল। ছোট খাটো দু-একটি যান চলাচল করলেও তা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বাধ্য হয়ে মানুষ বিকল্প রাস্তা হিসাবে বেছে নিচ্ছে গ্রামীণ সড়কগুলো এতে যেমন তাদের সময় ও বাড়তি ব্যয় বেড়েছে, নষ্ট হচ্ছে গ্রামের রাস্তাগুলো। এরই মধ্যে রাস্তাটির জোড়াদহ-ভোড়াখালী অংশের বেশকিছু জায়গা সংস্কাররে জন্য এগিয়ে এসেছে কয়েক জন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, তারা সকলে ভেড়খালী যুব উন্নয়ন সংঘের সদস্য। এই ভাঙ্গা রাস্তা সংস্কারের জন্য বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ২০ থেকে ২৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও যুবক সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তারা জানিয়েছে, গ্রামের রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে আমরা নিজ উদ্যোগেই রাস্তা সংস্কারের কাজ করছি। রাস্তায় প্রায় ২০ টলি ইটের টুকরা ও ৫টলি বালি ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকদুর থেকে এ কাজের মালামাল নিজেদের অর্থে নিয়ে এসে খানাখন্দ ভরাট করেছি। স্বেচ্ছাশ্রমে যুবকেরা মালামাল উঠানো, নামানোসহ সব কাজই করেছে। রাস্তায় চলাচলকারী কয়েকজন গাড়ী চালক জানিয়েছে, রাস্তার ভাঙ্গা অংশগুলো খুবই ঝুকিপূর্ণ ছিল। এ রাস্তা সংস্কারে আমরা খুবই উপকৃত হয়েছি। ঢাকা কলেজের ছাত্র মোঃ মঞ্জুর রশীদ বলেন, রাস্তায় যানবাহন যাতে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারে এ জন্য দেশের সচেতন নাগরিক হিসাবে আমরা এ সংস্কার কাজ করছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইমুর রশীদ বলেন, শহর বা গ্রামের যে সব রাস্তা বৃষ্টির কারণে ভেঙ্গে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে সব স্থানে যুবকেরা নিজ দায়িত্বে কাজ করলে সাময়িক ভাবে হলেও দেশের মানুষের উপকৃত হবে। সংস্কার কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইখতিয়ার উদ্দিন। তরুন সমাজের এই কাজকে স্বাগত জানিয়ে জোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা পলাশ বলেন, ওই সড়কটির প্রায় ৫ কিলোমিটার ভবানিপুর থেকে জোড়াদাহ ও বাকচুয়া কালীমন্দির পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। এতে জোড়াদহ, ভায়না ও তাহেরহুদাসহ তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। তিনি সড়কটির দ্রুত সংস্কারের দাবী জানান। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সড়কটির ওই এলাকার ৫ কিলোমিটার অংশের সংস্কারের জন্য এলজিইডির ফ্লাড প্রকল্পে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
করোনা: আমার মাদরাসাছাত্র ছেলেটি এখন ‘ইজিবাইক চালক’
ঝিনাইদহ :: ‘স্বপ্ন ছিল ছেলে-মেয়ে দুটিকে লেখাপাড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব। আজ সেই স্বপ্ন ধুলায় মিশে শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। করোনা নামক অদৃশ্য রোগে মানুষ আর আমার চায়ের দোকানে আসে না। তাই সংসার চালাতে আর পারছি না। সরকারি অনুদান এক দিন ১০ কেজি চাল ২ কেজি আলু পেয়েছি। আর ভাগ্যে জোটেনি। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই পড়াশোনা ছেড়ে ছেলেকে নামাতে হয়েছে সংসার চালানোর জন্য অর্থ রোজগারে। আমার ছেলেটি এখন ইজিবাইকচালক।’ কথাগুলো বলছিলেন আর ঘাড়ে থাকা গামছা দিয়ে বারবার চোখ মুচছিলেন এক স্বপ্নপূজারি পঙ্গু পিতা। এই স্বপ্নপূজারি ব্যক্তিটি হলেন ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবদালপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের পঙ্গু চা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। বড় ছেলে মোস্তফা কামাল কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবদালপুর দারুল উলুম আলিম মাদরাসার শেষ বর্ষের ছাত্র। আর মেয়ে স্বর্ণালী একই মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলে-মেয়ে দুটি আমার ভীষণ মেধাবী। আমি একজন পঙ্গু মানুষ। আমার একটি পা নেই। তবু অভাবের সংসার হলেও কারো কাছে কখনো হাত পাতিনি। এ অবস্থায় চায়ের দোকান দিয়ে সংসারের চাহিদা যতটুকু পেরেছি মিটিয়ে এসেছি এত দিন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন নজরুল। ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ খান বলেন, চা বিক্রেতা নজরুল ইসলামের চাষাবাদের জমি ছিল এক বিঘা। তা-ও গেল আস্ফান ঝড়ে তার কাঁচা ঘরবাড়ি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হলে জমিটি বন্ধক দিয়ে বাড়িটি মেরামত করেন। বাকি টাকা দিয়ে চায়ের দোকানে কিছু মালামাল তোলেন। এরপর আবার করোনার কবলে পড়ে বেচাকেনা না থাকায় দোকানের পুঁজিও শেষ হয়ে গেছে তাঁর। তার ওপর রয়েছে দোকানভাড়া। চা দোকানি নজরুল ইসলামের ছেলে মোস্তফা কামাল বলেন, বাবার বড় ইচ্ছা ছিল আমি লেখাপড়া শেষ করে সংসারের হাল ধরব। কিন্তু সংসারের অবস্থা দেখে বাধ্য হয়েই লোন তুলে একটি ইজিবাইক কিনে ভাড়া মেরে বেড়াচ্ছি। করোনার কারণে যাত্রীও কম। একদিকে লোনের কিস্তি, অন্যদিকে সংসারের কথা চিন্তা করে প্রচুর খাটতে হয়। সারা দিন খুব পরিশ্রম হয়ে যায়। রাতে বাড়ি ফিরে আর বই নিয়ে বসতে ইচ্ছা করে না। মাদরাসার প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, মোস্তফা কামাল আমার মাদরাসার একজন মেধাবী ছাত্র। আমরা মাদরাসার বেতনসহ মাদরাসাকেন্দ্রিক সব বিষয় দেখব। বিষয়টি নিয়ে সাবদালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি নয়াব আলী নাছির বলেন, নজরুল ইসলাম পঙ্গু বিধায় তাকে পঙ্গুভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সাহায্যে তেমন একটা ইউনিয়ন পরিষদে না আসায় আমরা এসব মানুষকে তেমন কিছু সাহায্য করতে পারি না। তবে আগামীতে দেখব ওই পরিবারের জন্য কিছু করা যায় কি না।
ভারত থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ঝিনাইদহের যুবক লালমনিরহাটে আটক
ঝিনাইদহ :: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের আঙ্গরপোতা সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে চার বাংলাদেশি দেশে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি হাতে আটক হন। পরে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দায়ের করে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) রাতে লালমনিরহাট জেলহাজতে পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন, পাটগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোজাম্মেল হক। এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে ওই চারজনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার মহিষডাঙ্গা গ্রামের কাজী আব্দুস ছামাদের ছেলে মো. ওয়ালিউল্লাহ (৩৪) , নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার চাদপাশা গ্রামর আব্দুল হাকিমের ছেলে মো. মুরাদ হোসেন (২৫) , ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কাজিরদোর গ্রামের মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে মো. ইমরান হোসেন (২২) ও ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার কামাইদিয়া গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে মো. মনিরুজ্জামান (৪৩)। বিজিবি ও পুলিশ জানায়, প্রায় পাঁচ মাস আগে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে ভারতে গিয়েছিল ওই চার বাংলাদেশি। সেখান থেকে বুধবার রাতে দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় আঙ্গরপোতা বিজিবি ক্যাম্পের টহলরত সদস্যরা তাদের প্রধান পাড়া এলাকা থেকে আটক করে।
ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী ঢোল সমুদ্র দীঘি
ঝিনাইদহ :: ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভরপুর ঝিনাইদহ। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির দিক দিয়ে অন্যান্য জেলার থেকে অনেক এগিয়ে আছে ঝিনাইদহ জেলা। ইতিহাস-ঐতিহ্য এক অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে এই ঝিনাইদহে। বিভিন্ন মৌসু্মে হরেক রকমের ফসল রয়েছে সুপ্রাচীন খ্যাতি। তার মধ্যে উল্লেখ্য হলো ধান, গম, আম,পাট,আখ, খেজুরের গুড়, কলা-পান ইত্যাদি। মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি এবং প্রাণজুড়ানো আবহাওয়া ছাড়াও এই জেলায় রয়েছে প্রাচীন বিভিন্ন স্থাপনা মসজিদ, মন্দির ছাড়াও রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঝিনাইদহের ঢোল সমুদ্র দীঘি। প্রায় ৫২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত এই দীঘি ঝিনাইদহের সর্ববৃহৎ দীঘি। সুন্দর এবং মনোরোম পরিবেশ বিশিষ্ট এই দীঘি। বহুবছর আগে থেকেই এই দীঘি ঝিনাইদহে বিনোদনের একটি অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন উৎসবে যেমন পহেলা বৈশাখ,বিশ্ব ভালোবাসা দিবস,ঈদ,বিভিন্ন পূজায় অনেক মানুষ ভিড় জমায় এই দীঘিতে। আবার অনেকেই দল বেঁধে এই দীঘির পাড়ে পিকনিক করতে আসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা সময় কাটায় এই দীঘিতে। দীঘির চারিদিক ছোট ছোট টিলা দ্বারা বিশিষ্ট। টিলার উপর থেকে নজর কাড়া দৃশ্য উপভোগ করা যায়। যা একজন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের হৃদয় মুহুর্তেই কেড়ে নিবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,ঝিনাইদহে রাজা মুকুট রায় নামে এক প্রভাপশালী জমিদার ছিলেন। ঝিনাইদহ তার রাজ্যের রাজধানী ছিলো। তিনি খাঁন জাহান আলী (রাঃ) এর মত জলাশয় প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী এবং যতœবান ছিলেন। রাস্তা নির্মাণ ও জলাশয় খনন করতে করতে তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবং রাজ্যের জলকষ্ট লাঘবের জন্য তিনি ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী পাগলা কানাই ইউনিয়নে খনন করেন ঢোল সমুদ্র দীঘি। ঢোল সমুদ্র দীঘিটি শতাব্দী পরিক্রমায় পানীয় জলের অফুরন্ত আধার হিসেবে এবং একজন পরাক্রমশালী রাজার রাজকীয় স্থাপনা সমূহের একটি স্মৃতি হিসেবে আজও টিকে আছে ঝিনাইদহের বুকে। ঢোল সমুদ্র দীঘি খননের পেছনে রূপকথাকে হার মানানো একটি লোকশ্রুতি আছে-রাজা মুকুট রায়ের রাজত্বকালে একবার জলকষ্ট দেখা দেয়। বিল, বাওড়, নদী সব শুকিয়ে গিয়েছিল। কোথাও কোন জল ছিল না। ফলে রাজ্যে জলের সংকট দেখা দিলো। এই জলের সংকট দূর করার জন্য রাজা দীঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকশো শ্রমিকে নিয়োগ দেওয়া হয় দীঘি খননের জন্য। শ্রমিকেরা দিন রাত পরিশ্রম করে গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত করে দীঘি খনন করলো। কিস্তু দীঘিতে জল উঠল না। রাজা হতাশ হয়ে পড়লেন এবং দু চিন্তা ভুগতে লাগলেন। একদিন রাতে রাজা ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলেন, রাণী যদি দীঘিতে নেমে পূজা দেন, তবে দীঘিতে জল উঠবে। স্বপ্নের কথা জেনে রাজা পূজার সকল উপকরণের বন্দবস্ত করে প্রজাকল্যাণের স্বার্থে রানীকে পূজা দেওয়ার উদ্দেশ্য দীঘির তলদেশে নামালেন। রাণী পুকুরের তলদেশে উপস্থিত হয়ে ইষ্টদেবতাকে নিবেদন করে পূজা আরম্ভ করলেন। আশ্চার্যজনকভাবে দীঘিতে জল ওঠা শুরু হলো এবং প্রার্থনা পূর্ণ হওয়ায় রাণী উপরে উঠতে শুরু করলেন। সহসা প্রবলবেগে দীঘিতে জল উঠতে লাগলো। দীঘিতে জল দেখে পাড়ে থাকা সকল প্রজারা বাদ্য-বাজনার সাথে উৎসব আনন্দ করতে লাগলো। রাণী দীঘির তলদেশ থেকে পাড়ে উঠতে পেরেছে কিনা সেইদিকে কেউ লক্ষ্যে করেনি। অলক্ষ্যে রাণী অথৈ জলের গভীরে তলিয়ে গেলেন। দুঃসংবাদ পেয়ে রাজা তাৎক্ষণিক দীঘির পাড়ে উপস্থিত হন। রাণীকে খোঁজার জন্য দীঘিতে লোক নামান। কিন্তু অনেক খোঁজখুঁজির পরেও রাণীকে পাওয়া যায়নি। ফলে জলের কষ্ট লাঘব হলেও রাজ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। এই স্মৃতি স্মরণে আজও লোকজন এ দীঘিকে ঢোল সমুদ্র দীঘি বলেই জানে।
কিভাবে যাবেন ঢোল সমুদ্র দীঘি
ঢোল সমুদ্র দীঘি ঝিনাইদহ শহর থেকে মাত্র ৪কিঃমি দূরত্বে পশ্চিমে অবস্থিত। ফলে খুব সহজেই ঝিনাইদহ শহর থেকে ভ্যান রিক্সা, ইজিবাইক যোগে এই ঐতিহ্যবাহী ঢোল সমুদ্র দীঘি যাওয়া যায়।