সোমবার ● ২৭ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » দীঘিনালায় বিদ্যুৎ সংযোগের নামে লাখ টাকা বানিজ্যের অভিযোগ
দীঘিনালায় বিদ্যুৎ সংযোগের নামে লাখ টাকা বানিজ্যের অভিযোগ
আব্দুল্লাহ আল মামুন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ির দীঘিনালার রশিক নগরের একটি চক্রের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে এলাকাবাসী থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নিকট মৌখিক অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, রশিক নগর বটতলা বাজার, উত্তর রশিক নগর, রশিক নগর গুলছড়ি ও রশিক নগর সিলেটি পাড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গ্রামবাসীর নিকট হতে পরিবার প্রতি বিদ্যুতের খুঁটি বাবদ ৬থেকে ৭হাজার টাকা লাগবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। কমিটির মাধ্যমে এলাকাবাসীর কাছ থেকে প্রায় ১০/১১ লক্ষ টাকা লাগবে বলে প্রায় ৮লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় অভিযুক্ত মিজানগং। আরোও প্রায় দাবীকৃত ৩ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় দুটি লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না এবং অপর দুটি এলাকায় বৈদ্যুতিক খুটি পাইলিং বন্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে এ চক্রের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী জানায়, রশিক নগর বটতলা বাজার এলাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার, উত্তর রশিক নগর এলাকা থেকে ২ লাখ, রশিক নগর গুলছড়ি হিন্দু পাড়া থেকে ৩ লাখ, রশিক নগর সিলেটি পাড়া থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। রশিক নগর গুলছড়ির বাসিন্দা মনিরুল বলেন, বিদ্যুতের টাকা উত্তোলনের জন্য গঠিত কমিটির সদস্য জালালের নিকট ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংঢ়োগ দেয়া হয়নি। আমার টাকা ফেরত চাই। রশিক নগর সিলেটি পাড়ার মনসুর আলম বলেন, ”আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে মিজান ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবী করেছে। আমরা আমাদের এলাকার আমিনুলের মাধ্যমে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকী টাকা না দিলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে না বলে জানায়। গুলছড়ি হিন্দু পাড়া এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। দীঘিনালা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম লাকী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল সিন্ডিকেট চক্র। আমার এলাকা থেকে নতুন বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ট্রান্সফরমার বসিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার কথা বলে শফিকের মাধ্যমে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে মিজান। কিন্তু সে এখন বিদ্যুতের লাইন দিচ্ছে না। তিনি দ্রুত বিদ্যুতের লাইন চালু করে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি মিজান সহ এই চক্রের সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এদিকে বৈদ্যুতিক লাইন নিয়ে টাকা উত্তোলনের করে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ায় এলাকাবাসীকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে দালাল চক্রটি। দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবী এলাকাবাসীর। এ ব্যাপারে মিজান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে মূলত উত্তর রশিক নগর এলাকার শফিকুল, সিলেটি পাড়ার আমিনুল, বাজার এলাকার সোবহান, এবং গুলছড়ি হিন্দু পাড়া এলাকার অমল কৃষ্ণ খলিফা টাকা উত্তোলন করেছে। আমি শুধু আমার খরচের টাকাটাই নিয়েছি। এর বাইরে আমি কোন টাকা নেইনি, এ ব্যাপারে আমি আর কিছুই জানিনা। কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ”মিজানের সাথে আমাদের ১০ লক্ষ একটি চুক্তি হয়েছিল। আমরা তাকে অনেকগুলো টাকা দিয়েছি। এখনো কিছু টাকা বাকি আছে। যার জন্য আমাদের বিদ্যুতের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত বটতলী গুলছড়ি হিন্দু পাড়া এলাকার ”অমল কৃষ্ণ (খলিফা) বলেন, আমাকে কেউ টাকা দেয়নি এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ সিরাজ বলেন, ”মিজানের বিরুদ্ধে আমরা অনেক অভিযোগ পেয়েছি। সে আমাদের বিদ্যুৎ অফিসের কেউ না। তিনি রাঙ্গামাটি এবং চট্রগ্রামের বিভিন্ন প্রজেক্টের ঠিকাদারদের হয়ে মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করে বলে জেনেছি। তাদের এ চক্রটির জন্য আমাদের বিদ্যুৎ অফিসের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ”এ বিষয়ে মিজান নামে একজনের বিরুদ্ধে মৌখিক একটি অভিযোগ পেয়েছি। তার এসব দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। . দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ কাশেম বলেন, ”বিদ্যুতের জন্য টাকা নেয়ার একটি অভিযোগ শুনেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছেন সেখানে বিদ্যুতের জন্য টাকা উত্তোলন করা খুবই অন্যায় এবং একটি জঘন্য কাজ।