সোমবার ● ২৭ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটির ছোট হরিনা বাজারে গরীব মারা কল বসিয়েছে একটি সিন্ডিকেট
রাঙামাটির ছোট হরিনা বাজারে গরীব মারা কল বসিয়েছে একটি সিন্ডিকেট
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলার ছোট হরিনা বাজারে করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে গরীব মারা কল বসিয়েছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। প্রত্যান্ত অঞ্চলের নিরীহ কৃষকদের কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য রাঙামাটি জেলা সদর বা শুভলং বাজারে নিতে হলে বাঙ্গালীদের ইঞ্জিন চালিত বোটে করে কৃষি পণ্য নিতে হবে পাহাড়ীদের ইঞ্জিন বোটে নয়, না হলে কৃষকের কৃষিপণ্য নামমাত্র মূল্যে ছোটহরিনা বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় হরিণা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির দোহায় দিয়ে অঘোষিত এই নিয়ম চালু করেছে একটি সিন্ডিকেট।
করোনাকালিন বাংলাদেশে যেকোন স্থানে কৃষিপণ্য বিক্রি ও পরিবহন করা যাবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও স্থানীয় জোন বা বিজিবির নাম ভাঙ্গিয়ে নিরীহ পাহাড়ী কৃষকদের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপ কৌশল অব্যাহত রেখেছে এ সিন্ডিকেটটি।
জানাযায়, করোনা মহামারী শুরুতে এই সিন্ডিকেট হরিণা বাজার থেকে সরাসরি রাঙামাটি ইঞ্জিন চালিত বোট নিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহনে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। এ সিন্ডিকেটের প্রধান হলেন ছোট হরিনা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কতিপয় সদস্য বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভুক্তভোগী জানান।
ছোট হরিনা বাজারের পরে ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকায় যেসব লোক বাস করেন তারা অধিকাংশই গরীব পাহাড়ী কৃষক। আদা, হলুদ, কলা, আম, আনারস, কাঁঠাল, লিচু, শাক সবজি সহ কাঁচা তরকারী ইত্যাদি চাষ করা ঐ এলাকার জনগোষ্ঠির প্রধান পেশা। সারা বছর কৃষিকাজ করে ফসল ফলানোর পর কৃষিপণ্য বিক্রি করতে সম্মুখীন হতে হয় নানা সমস্যার। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলে ফসলের উৎপাদন খরচও তোলা যায়না, আর ন্যায্যমূল্যের আশায় জেলা সদরে বা শুভলং বাজারে নিতে চাইলেও পাহাড়ীরা নিজস্ব ইঞ্জিন চালিত বোটে পণ্য পরিবহন করতে পারছেনা বাঙ্গালীদের ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়ায় নিতে হবে। এর বাইরেও দিতে হয় হরিণা বাজারের লেবার ব্যবহার না করে ব্যবসায়িক সমিতির আদলে গড়ে তোলা লেবার সমিতি নামক সমিতির চাঁদা। গরীব কৃষক কোথায় যাবে কার কাছে যাবে নিজেরাই কিংবর্তব্য বিমূঢ় হয়ে উৎপাদিত পণ্য হয় নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে নয়তো বাগানে পঁচে যাচ্ছে রক্তঘাম করা ফসল। ভুক্তভোগীরা জানান এ দুর্ভোগ নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে চালু হয়েছে।
ছোট হরিনার পিত্তিছড়া গ্রামের একজন ভুক্তভোগী কৃষিক সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, গত ২৫ জুলাই ৯১ ছড়া কলা নিয়ে নিজস্ব ইঞ্জিন চালিত বোটে করে শুভলং বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছোট হরিনা বিজিবির জিপি গেইটে নাম ও বোট এন্ট্রি করেন প্রতি কলাছড়া ৩টাকা করে ইজারদার ও ছোট হরিনা বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মনিরকে দিয়ে শুভলং বাজার যাওয়ার মৌখিক অনুমতি নিয়ে জিপি গেইট থেকে ইঞ্জিন বোট ছাড়ার পর মাত্র ২০ গজ দূরে নীচের ঘাটে বোট আটকায় একদল লেবার। তখন তারা লেবার সমিতির পরিচয় দিয়ে বলে পাহাড়ীদের ইঞ্জিন চালিত বোট আনলোড করে বাঙ্গালীদের ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়ায় নিতে বলে এবং ভুক্তভোগীকে শাসিয়ে বলে নিয়ম কি ভুলে গেছিস নাকি ? পাহাড়ীদের বোটে পণ্য নেওয়া যাবেনা। যে কোন পণ্য নিতে চাইলে বাঙ্গালীদের ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়ায় নাও একথা বলার পর বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর দিকে তেরে আসে এবং পাহাড়ি কৃষকের সাথে থাকা সমস্ত টাকা কেড়ে নেয় লেবার সিন্ডিকেট এমনই অমানবিক ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ফলে তার বাঙ্গালীর বোট ভাড়া করার টাকা না থাকায় ৯১ ছড়া কলা নিয়ে বিপদের পড়তে হয়েছে পাহাড়ি কৃষকের। অপর এক ভুক্তভোগী জানান এমন দুর্ভোগ নতুন নয়, ছোট হরিনা বাজারে টাকা দিয়ে বাঙ্গালীর ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়া করেও শান্তি নেই ভুষণছড়া বাজারে দিতে হয় ভুতুরে চাঁদা। প্রতি ইঞ্জিন চালিত বোটে ২ শত টাকা করে নেয় ভুষণছড়া বাজার ঘাটে।
এবিষয়ে ছোট হরিনা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মনির সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, আমরা বাঙ্গালীরা কেউ ছোট হরিনা বাজারের উপরে দিকে যেতে পারিনা, উপর দিক থেকে পাহাড়ীরা ইঞ্জিন চালিত বোট এমনভাবে লোড করে নিয়ে আসেন, ইঞ্জিন বোটে বৈধ অবৈধ কি আছে দেখা যায় না। সেজন্য বিজিবির জিপি কমান্ডারসহ কয়েকজন গোয়েন্দা বলেছিলেন যেহেতু আমাদের বাজার ঘাটে সিসি ক্যামেরা আছে তাই ইঞ্জিন বোট এখানে আনলোড করলে কি আছে না আছে সব দেখা যায় বা মনিটরিং করতে পারেন। পাহাড়ীদের ইঞ্জিন চালিত বোট থেকে পণ্য নামিয়ে বাঙ্গালীদের ইঞ্জিন বোটে করে কৃষি পণ্য নেওয়ার জুলুম রেওয়াজের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন স্থানীয় প্রশাসনের কথামত শুধুমাত্র ইঞ্জিন বোট আনলোড করে দেখাতে হয়। কোন লেবার সমিতি টাকা নেয় আমার জানা নেই, আমি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক। কেউ আজ পর্যন্ত অভিযোগ করেনি, লেবার সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।
ছোট হরিনা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল মান্নান সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, কৃষি পণ্য পরিবহনে পাহাড়ীদের ইঞ্জিন চালিত বোট না নিয়ে বাঙ্গালীদের ইঞ্জিন চালিত বোট নিতে হবে এমন কোন নির্দেশনা প্রশাসনে নেই, এরকম ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ করলে ঘটনা যেই ঘটিয়েছে আমরা বাজার কমিটির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেবো। তিনি বলেন, ইজারাদার এবং ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মনিরকে আমি নিজেও বলেছি ইজারা অনুযায়ী টাকা নেওয়ার পর যেন ছেড়ে দেওয়া হয়, কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়। অবৈধভাবে একটি টাকাও যেন না নেওয়া হয় আমি ব্যক্তিগতভাবে বলেছি। আপনি ইজারাদার এবং ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মনিরকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে হয়তো আরো তথ্য পাবেন।
এসব বিষয়ে সাবেক বরকল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কমল জ্যোতি চাকমা সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, ইঞ্জিন চালিত বোট লোড আনলোড করলে লেবার খরচ দিতে হবে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু সরাসরি বোট নিয়ে গেলে খরচ দিতে হয় বা বোট আটকিয়ে রাখে এটা আমার জানা নেই। কেউ এরকম করলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে স্থানীয়ভাবে আমরা সমাধান করতাম, সরাসরি সংবাদ মাধ্যমে কাছে তথ্য দিতে যাওয়াটা যৌক্তিক মনে হলোনা।
কৃষি পণ্য পরিবহনে পাহাড়ীদের ইঞ্জিন চালিত বোট নিতে পারবেনা বা পণ্য পরিবহনের জন্য বাঙ্গালীদের চালিত ইঞ্জিন বোট ভাড়ায় নিতে হবে ভুষনছড়া বাজার ঘাটে প্রতি বোটে ২ শত টাকা চাঁদা ইত্যাদি বিষয়ে ছোট হরিনা জোন এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকার (১২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন) জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ ইমরুজ্জামান সাইফ, পিএসসি ইঞ্জিনিয়ার সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, পাহাড়ীদের ইঞ্জিন চালিত বোট আনলোড করে বাঙ্গালীদের ইঞ্জিন চালিত বোট নিতে হবে এমন নির্দেশনা আমাদের নেই। এখানে চেক পয়েন্ট আছে, চেক পয়েন্টে চেক করে অবৈধ কিছু না পেলে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। এরকম তো হয়ে আসছে। করোনা পরিস্থিতে কৃষি পণ্য পরিবহনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি রয়েছে। কৃষি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে পাহাড়ীদের ইঞ্জিন চালিত বোট আটকিয়ে দিয়ে বাঙ্গালীদের ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়ায় নিতে হয় বা চাঁদা দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন এবং কেউ এরকম করে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে হরিণা জোনের ১২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক জানান।