বুধবার ● ২৯ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » জাতীয় » নির্বাচন কমিশন সাপ না মেরে দড়ি ধরে টানাটানি করছেন : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
নির্বাচন কমিশন সাপ না মেরে দড়ি ধরে টানাটানি করছেন : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
ঢাকা :: বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন ২০২০’ এর খসড়া সম্পর্কে বলা হয়েছে- করোনা মহামারী ও বন্যা দুর্যোগের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (নিবন্ধন আইন ২০২০) প্রণয়নের নতুন উদ্যোগ স্থগিত রাখা প্রয়োজন। এই ব্যাপারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- মহামারী দুর্যোগে স্বাভাবিক রাজনৈতিক তৎপরতা যখন বন্ধ ও সংকুচিত তখন নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এই ধরনের নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা তৈরী করেছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেছেন ‘সাপ না মেরে নির্বাচন কমিশন দড়ি ধরে টানাটানি’ করছেন। তিনি বলেন, দেশে ভেঙ্গে পড়া নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর আস্থা ফিরিয়ে আনা যেখানে প্রধান চ্যালেঞ্জ এই ব্যাপারে মনযোগ না দিয়ে নির্বাচন কমিশন যা করছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন সংক্রান্ত কর্মকান্ড অগণতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারী ও সংবিধান পরিপন্থী।
সাইফুল হক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দরের কমিটিতে নারীদের ৩৩% প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় কমিটির জন্য পাঁচ বছর আর নিম্নস্তরের কমিটির জন্য দশ বছরের নতুন সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন।
নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত নতুন আইনের খসড়া সম্পর্কে আজ নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবর ৯ (নয়) দফা প্রস্তাবনা ও মতামত পাঠানো হয়েছে। মতামত ও প্রস্তাবনাসমূহ নিম্নরূপ:-
১। করোনা মহামারীর এক ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে এখন আবার যোগ হয়েছে মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতি। দেশে রাজনৈতিক দলসমূহের স্বাভাবিক রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তৎপরতা যখন প্রায় বন্ধ ও সংকুচিত তখন গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) সংশোধনের মত এত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ চরম দায়িত্বহীনতা ও অবিবেচনাপ্রসূত। কারণ এসব বিষয়ে মতামত গঠনের জন্য যে ধরনের স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন তা এখন অনুপস্থিত।
২। জাতীয় জীবনে একটি অস্বাভাবিক দুর্যোগের মধ্যে যেরকম দ্রুততার সাথে এই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছাকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকার ও সরকারি দলকে আরো খুশী রাখতে ও বাড়তি রাজনৈতিক সুবিধা দিতে আইন সংশোধনের এত তড়িঘড়ি কিনা রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মধ্যে এই উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও তৈরী হয়েছে।
৩। ২০১৭ সালে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আইন-আরপিওসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার এবং দেশে অবাধ-নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ‘নির্বাচনী সংলাপ’ এর আয়োজন করেছিল। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সেই বহুল আলোচিত সংলাপে দেশে একটি ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠায় ৩৬টি প্রস্তাবনা পেশ করেছিল। নিবন্ধিত অপরাপর রাজনৈতিক দলও অনেকগুলো সুপারিশ পেশ করেছিল। এইসব প্রস্তাবনা সংকলিত করে নির্বাচন কমিশন ‘নির্বাচন সংলাপ- ২০১৭’ শীর্ষক একটি বড় বইও প্রকাশ করেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের এসব প্রস্তাবনা কোন আমলেই নেয়নি। তারা এর কোন ব্যাখ্যা দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি। ফলে পুরো সংলাপটি একটি প্রচারসর্বস্ব একেবার আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হয়েছে। সরকারের ছক অনুযায়ী ২০১৮ এর ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে এক নজিরবিহীন জালিয়াতি সংঘটিত করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট কোন আত্মসমালোচনা নেই; ব্যর্থতার দায় নিয়ে তারা পদত্যাগও করেননি।
৪। এটা সত্য যে ২০২০ এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল স্তরের কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী সদস্যদের অন্তর্ভূক্ত করার যে বিধান ছিল কোন রাজনৈতিক দলই তা কার্যকরি করতে পারেনি। এটা একটা বড় ব্যর্থতা সন্দেহ নেই। নির্বাচন কমিশনের নৈতিক জোর না থাকায় তারাও রাজনৈতিক দলসমূহকে এটা বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। ব্যর্থতার কারণে নির্বাচন কমিশন এখন এই বাধ্যবাধকতা থেকে সরে আসতে চাইছে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে রাজনৈতিক দলের কমিটিতে নারীদের ৩৩% নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় কমিটির জর্ন্য ৫ (পাঁচ) বছর আর নিম্নস্তরের কমিটির জন্য ১০ (দশ) বছর সময়সীমা বেঁধে দিয়ে এ সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা প্রয়োজন।
৫। নির্বাচন কমিশনের নতুন প্রস্তাবনায় সবকিছুতে বাংলা শব্দের প্রবর্তন করতে যেয়ে এমন সব শব্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা গ্রহণযোগ্য নয়, অনেক শব্দ সহজে উচ্চারণও করা যাবে না। যেমন ‘মেয়র’ এর পরিবর্তে ‘পুরাধ্যক্ষ’ ‘মহানগর আধিকারিক’ ‘পৌরসভার’ পরিবর্তে ‘নগর ও নগরসভা’ প্রভৃতি পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা এর অধিকাংশকেই জটিল বিধায় অপ্রয়োজনীয় মনে করছি।
৬। রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০ সংক্রান্ত অনেক প্রস্তাবনা পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারী ও সংবিধান স্বীকৃত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন বাতিল ও নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধিত হবার প্রক্রিয়াও অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের মৌল গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। যেমন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী দুইটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের শর্ত অপ্রয়োজনীয় ও অসংগতিপূর্ণ। নতুন কোন দলের পক্ষে ‘দলীয় প্রতীকে’ নির্বাচনে অংশ নেবার কোন অবকাশ নেই।
৭। সমগ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়া আজ যেখানে কালো টাকা, পেশীশক্তি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনিক ‘ম্যানিপুলেশনে পর্যবসিত হয়েছে এ থেকে বেরিয়ে এসে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবনায় কার্যকরি কিছু নেই। সাপ না মেরে নির্বাচন কমিশন দড়ি ধরে টানাটানি করছেন।
৮। গত ক’বছর ধরে দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা যেখানে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে, নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন তথা গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি যেখানে গণঅনাস্থা ও গণহতাশা রয়েছে এ থেকে উত্তরণে আপনাদের প্রস্তাবনায় বস্তুত: কিছুই নেই। অথচ বর্তমানে এটাই হওয়া উচিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান মনোযোগের বিষয়।
৯। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে করোনা মহামারীজনীত দুর্যোগের কারণে অনতিবিলম্বে (আরপিও) আইন সংশোধনের বিদ্যমান তৎপরতা বন্ধ রাখা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরাসরি ও খোলামেলা আলোচনা না করে আইন সংশোধনের কোন সুযোগ নেই। জরুরী মনে করলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বা অনলাইনে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে পর্যায়ক্রমে নির্বাচন কমিশন সংলাপ বা পরামর্শ সভার আয়োজন করতে পারে।