বুধবার ● ৫ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » নদী ভাঙনে বিপন্ন গাইবান্ধার সাড়ে ৭ হাজার পরিবার
নদী ভাঙনে বিপন্ন গাইবান্ধার সাড়ে ৭ হাজার পরিবার
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: বন্যার পানি কমার সাথে সাথেই গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও বাঙ্গালী নদীর স্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পরিবার ভাঙন কবলিত হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
যমুনা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন এবং ফুলছড়ি উপজেলার চর কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝানঝাইড় কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কালাসোনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও হুমকির মুখে পড়েছে জিগাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বন্যার পূর্বে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গো-গাট এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় কামারজানীর গোঘাট গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি ভাঙনের কবলে পড়ে ঐতিহ্যবাহি পুরাতন দূর্গামন্দিরসহ ৫০টি বসতবাড়ি ও সংলগ্ন জমি এবং গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া স্লুইসগেট, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, কামারজানি বন্দর, মার্চেন্ট হাইস্কুলসহ ৫শ’ পরিবারের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি এখন ভাঙন কবলিত হওয়ায় চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দীঘলকান্দি, গোবিন্দপুর, পাতিলাবাড়ি, নলছিয়া, কালুরপাড়া ও বেড়া গ্রামের দু’শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আশেপাশের দু’শতাধিক বসতবাড়ী। ফলে ভাঙন কবলিত মানুষ দ্রুত তাদের বাড়িঘর সরিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নে বাঙ্গালী নদীর ভাঙনে রামনগর গ্রামের বসতবাড়ি ও প্রচুর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৫টি পরিবার মারাত্মকভাবে ভাঙন কবলিত হয়েছে। তদুপরি সাঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাতালিয়া, উত্তর সাথালিয়ার ফ্লাড সেন্টার, গোবিন্দী, হাটবাড়ি, বাঁশহাটা, হাসিলকান্দি মৌজার প্রায় ২শ’ পরিবারের ঘরবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের শিকার এসব পরিবার অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
এছাড়া ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে চরম হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি বাজার, নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, ঈদগা মাঠ, একটি বিএস কোয়াটার, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, দুটি জামে মসজিদ, ৩টি মোবাইল টাওয়ার ও একটি বাজার এখন মারাত্মকভাবে ভাঙন কবলিত।
অপরদিকে সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নে গত দু’সপ্তাহে বাজে চিথুলিয়া ও চিথুলিয়া গ্রাম দুটির ৩১৮টি পরিবার নদী ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর, হরিপুর ও কাপাসিয়ার পোড়ার চর এবং সাঘাটা উপজেলার হলদিয়ায় ব্যাপক নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
গাইবান্ধায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচী
গাইবান্ধা :: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৫ আগস্ট ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকীতে জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ৫ আগষ্ট বুধবার গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিনের সভাপতিত্বে এক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেড কোয়াটার্স মো. আবু খায়ের, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর কবির, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরহাদ আব্দুল হারুন বাবলু, সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবীর, এনএসআই’এর উপ-পরিচালক, গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. এনায়েত হোসেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. হোসেন আলী, জেলা তথ্য অফিসার মো. হায়দার আলী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. আজমল হক, গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সাবু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সূর্য বকসী, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক প্রমতোষ সাহা, রেডিও সারাবেলার কৃষ্ণ কমল প্রমুখ।
সভায় ১৫ আগস্ট শোক দিবস যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি ভবনে সূর্যদ্বয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত করণ, সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পন, ৯টা ৩০ মিনেটে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা, বাদ জোহর সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল। সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ বইটি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ, ১১টায় রচনা, সংগীত, চিত্রাংকন ও বই পড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী, ১১টা ৩০ মিনিটে সার্কিট হাউস চত্বরে বৃক্ষ রোপন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে কালিমন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা ও আলোচনা। এছাড়া শহীদ মিনার চত্বরে তথ্য বিভাগ কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর জীবন ও ৭ই মার্চের ভাষণের উপর চলচিত্র প্রদর্শনী প্রচারিত হবে।
সভায় বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সৃজনশীল বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘বঙ্গবন্ধুর কারাগারে রোজনামা’র বইটি অনলাইনে পাঠ ও প্রশ্ন উত্তর প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি বঙ্গবন্ধুর উপর সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, ৭ই মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, জেলা শিক্ষা অফিস এ উপলক্ষে ১০০ শব্দের আমার মুজিব শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কেরাত প্রতিযোগিতা এবং শিশু একাডেমি নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। জেলা তথ্য অফিস জেলায় মাসব্যাপী প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শণী, জেলা শহরের পৌর পার্ক ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মুখে বিশেষ বিলবোর্ড স্থাপন ও পোস্টার লাগানোর কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
এদিকে ব্যতিক্রমধর্মী এক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচীর আওতায় প্রতিদিন রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, সাংস্কৃতিক কর্মী, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবন্দৃসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার একজন মানুষ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে।