মঙ্গলবার ● ১১ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » দফায় দফায় ভাঙনে বদলে যাচ্ছে গাইবান্ধার মানচিত্র
দফায় দফায় ভাঙনে বদলে যাচ্ছে গাইবান্ধার মানচিত্র
সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা :: বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন সদর সংলগ্ন গো-ঘাট গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে এ গ্রামের ১শ’ ৫৫টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আরও শতাধিক ঘরবাড়ি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে।
গাইবান্ধার গো-ঘাট গ্রামটিতে গত সাত বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পার্শ্ববর্তী কামারজানি বন্দর রক্ষায় সিসি ব্লক দ্বারা তীর সংরক্ষণের কাজ করা হলেও এ গ্রামটি রক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে প্রতিবছরই এ গ্রামটি নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে।
একসময় অর্থনৈতিকভাবে সম্বলিত গোঘাট গ্রামটিতে প্রায় ৮ হাজার পরিবারের বসবাস ছিল। গ্রামটি চার ভাগের একভাগ এলাকা ভাঙনের মুখে টিকে রয়েছে। বর্তমানে এ গ্রামটিতে মাত্র এক হাজার পরিবার ভয়ভীতি নিয়ে বসবাস করছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে আগামী দু’ থেকে তিন বছরের মধ্যে কামারজানির এ ঐতিহ্যবাহি গো-ঘাট গ্রামটির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এ গ্রামের বাসিন্দা পুরোহিত প্রতাপ চক্রবর্ত্তী জানান, গত এক সপ্তাহে তার ৩টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্য ঘরগুলো ভাঙনের মুখে। কামারজানি বন্দরের ব্যবসায়ি গোঘাট গ্রামের বাসিন্দা তাপস কুমার সাহা জানান, তার চারটি ঘর ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রবীণ শিক্ষক অমুল্য চন্দ্র সাহার ৫টি ঘর নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। তিনি এখন ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন প্রায় নিঃস্ব। চরম দুর্দশার মধ্যে তার দিন কাটছে। এরকম আরও অনেকের ঘরবাড়ি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের শিকার হয়েছে। ফলে গ্রামটির অস্তিত্ব এখন বিপন্ন।
ওই গ্রামের লোকজন জানান, বিভিন্ন সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে নদী ভাঙন ঠেকানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকানোর জন্য কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, গোঘাট এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রহ্মপুত্রের তীরে বালির বস্তা স্থাপন করে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কামারজানি থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর, লালচামার, কাপাসিয়া ও ছয়ঘড়িয়া পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার জুড়ে তিস্তা নদীর ভাঙন ঠেকাতে সিসি ব্লক দ্বারা তীর সংরক্ষণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একনেকে এ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এজন্য নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪০২ কোটি টাকা। কাজ শুরু হলে গো-ঘাটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জমি দখল বন্ধের দাবিতে গাইবান্ধায় মানববন্ধন
গাইবান্ধা :: প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জমি দখলের চেষ্টা বন্ধের দাবিতে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ভুমিহীনরা ঘন্টাব্যাপী এক মানববন্ধনের কর্মসূচী পালন করে। পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের শতাধিক ভুমিহীন মানুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেয়।
একই ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামের কতিপয় চিহ্নিত ভূমিদস্যূ একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভূমিহীনদের উপর হামলা, মামলা, নির্যাতন চালিয়ে ওই জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে মানববন্ধনে জানানো হয়। মানববন্ধন চলাকালে ভূমিহীনদের বক্তব্য রাখেন সিরাজুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, বুদা মিয়া, জেসমিন বেগম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বরিশাল ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি সংস্কার বোর্ড থেকে ভূমিহীনদেরকে ৩৬ শতক জমি বন্দোবস্ত করা হয়। এরপর ৪ শতক করে প্লট আকারে প্রত্যেক ভূমিহীন এই জমি পায়। সরকারের দেয়া প্রায় ১ কোটি মূল্যের এই জমি বিভিন্নভাবে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যুরা। ওই জমি দখলের চেষ্টায় প্রায় প্রতিদিন ভূমিহীনদের বসতবাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি সময়ে তার ওই চক্রটি ভূমিহীন পরিবারদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তাদেরকে ওই জমি থেকে চলে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানালেও কোন পদেক্ষপ গ্রহন না করায় তারা মানববন্ধন পালন করছি।
তারা আরও বলেন, কিছুদিন আগে ভূমিদস্যুদের ওই সন্ত্রাসী চক্রটি ওই খাস জমি থেকে তাদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য অতর্কিত হামলা করে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জমি তারা কিছুতেই হারাতে দিবো না। এব্যাপারে তারা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।