মঙ্গলবার ● ১১ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার ৯ জেলে আটক
সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার ৯ জেলে আটক
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করায় ৯ জেলেকে আটক করেছে বনবিভাগ। গতকাল সোমবার বিকালে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যের বেতমোড় খাড়ির খাল এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটক জেলেদের কাছ থেকে ২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ১০টি জাল উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আটক জেলেরা হলেন : মো. শহিদুল তালুকদার, হাসান মিয়া, সাদ্দাম হাওলাদার, রাসেল মাতুব্বর, রাজু আকন, আসিব হাওলাদার, রাজু মীর, আসলাম মীর ও মিলন খান। এদের সবার বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, বর্তমানে সুন্দরবনের সবধরণের মৎস্য আহরণে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। কিন্তু এসব অসাধু জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বনরক্ষীরা তাদেরকে আটক করে।
এসিএফ জানান, আটক জেলেদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও বন আইনে মামলা দিয়ে বিভাগীয় বন অফিসের মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শ্রমিক থেকে দুলাল ফরাজী ফ্যাক্টরীর মালিক
বাগেরহাট :: বাগেরহাটে বাসের হেলপার শ্রমিক থেকে ফ্যাক্টরীর মালিক দুলাল ফরাজী। স্বচ্ছল হওয়ার পিছনে ইচ্ছা শক্তিই দুলাল ফরাজীর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৯৫ সাল, মোরেলগঞ্জ শরণখোলা সড়কে বাসের হেলপার হিসেবে ডিউটি করি। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ টাকা পেতাম। কোন মতে সংসার চলত। আশা ছিল ড্রাইভার হব। তখন একটু ভাল চলবে। ২০০০ সালের দিকে হঠাৎ করে মালিক বাসের ব্যবসা বন্ধ করে দেন। বেকার হয়ে অন্য বাসে কাজ খুজতে থাকি। এরই মধ্যে বিয়ে করি। অভাবের তারণায় নব বধুকে বাড়িতে রেখে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাই ঢাকায়।
লালবাগের ইসলামবাগ এলাকায় প্লাস্টিক পট তৈরির কারখানায় কাজ নেই। ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকুরীর শুরু হলেও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়েছি। চাকুরী কালীন সময়ে সংসারে স্বচ্ছলতা আসে। প্লাস্টিকের ফ্যাক্টরীতে চাকুরীর সুবাদে সংশ্লিষ্ট ব্যবসার সাথে জড়িত অনেকের সাথে পরিচয় হয়।
২০১৪ সালে হঠাৎ মা মারা যান। মা মারা যাওয়ার সংবাদে বাড়িতে আসি। সব কাজ শেষে কর্মস্থলে ফিরে যাই। কিন্তু মালিক আর যোগদান করতে দেয়নি। বলল অনেক দেরি হয়ে গেছে এখন আর তোমাকে লাগবে না। আবারও বেকার হয়ে, চিন্তায় পড়ে গেলাম। তারপরে সামান্য পুজি দিয়ে একটি হ্যান্ড মেশিন ক্রয় করি। পরে ওই মেশিন দিয়ে মলম, জর্দাসহ বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিকের কৌটা তৈরি করে বিক্রি করতে থাকি। এক পর্যায়ে এসবিআরএম নামের একটি রড ফ্যাক্টরির এক কর্মকর্তা আমার নিজের তৈরি প্লাস্টিকের বিভিন্ন ডিব্বা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে ওই কর্মকর্তাই রডের মাথায় লাগানোর জন্য ছোট প্লাস্টিকের ক্যাপের অর্ডার দেন। নিজের পুজি না থাকায় তার কাছ থেকে অগ্রীম ৫০ হাজার টাকা নিয়ে অর্ডার নেই এবং কাজ শুরু করি। এক মাসেই দেড় লক্ষ টাকা আয় করি। মায়ের দোয়া আব্দুল্লাহ প্লাস্টিক নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স নেই। নিজে ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠা করি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এখন লাগবাগে নিজের ফ্যাক্টরী হয়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর বাধালের নিজ গ্রামে বাড়ি হয়েছে। ধানের জমি ক্রয় করেছি। সব মিলিয়ে এখন ভালই আছি। এভাবেই নিজের সফলতার কথা বলছিলেন মায়ের দোয়া আব্দুল্লাহ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরীর মালিক সাবেক বাসের হেলপার শ্রমিক মোঃ দুলাল ফরাজী।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ১০টি রড কোম্পানিতে রডের মাথায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সাইজের প্লাস্টিকের ক্যাপ সরবরাহ করছি। ফ্যাক্টরীতে দুটি আধুনিক মেশিন রয়েছে। সেখানে ১৪ জন কর্মচারী কাজ করছেন। প্রতিমাসে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বেতন দেই তাদের। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে মালের সরবরাহ কম। আশাকরি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও ভাল অর্ডার পাব। ভাল ব্যবসা করতে পারব।
মায়ের দোয়া আব্দুল্লাহ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরীর মেশিন অপারেটর জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই কোম্পানিতে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করছি। স্ত্রী সন্তান মা ভাই বোনদের নিয়ে ভাল আছি। আমার সাথে আরও ১৩ জন এখানে চাকুরী করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল আছেন।
দুলাল ফরাজীর স্ত্রী শাহিদা বেগম বলেন, বিয়ের পরের দশ বছর অনেক কষ্ট করেছি। বর্তমানে দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে খুব সুখে আছি। আমার স্বামী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন শুধু আমাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তার পরিশ্রমের ফলে আজ আমাদের এই ফ্যাক্টরী, বাড়ি ও জমি হয়েছে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে পারছি। সব মিলিয়ে ভালই আছি।
একই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আনোয়র হোসাইন বলেন, দুলাল ফরাজী একজন পরিশ্রমী মানুষ। তার পরিশ্রমের কারনে আজ সে স্বাবলম্বী হয়েছে। আমি তার জন্য দোয়া করি, যাতে অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আছাদুজ্জামান স্বপন বলেন, দুলাল ফরাজীকে আমরা ছোট বেলা থেকেই চিনি। ৮ ভাই বোনের ছোট দুলাল মাত্র ৫ বছর বয়সেই তার বাবাকে হারান। তারপরে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছে। স্থানীয়দের বাড়িতে কিষান দেওয়া, বাসের হেলপারি থেকে শুরু করে অনেক কিছু করেছে সে। শেষ পর্যন্ত ঢাকায় গিয়ে প্লাস্টিকের কারখানা করার মাধ্যমে তার ভাগ্যের পরিবর্তন আসে। আমরা মনে করি স্বচ্ছল হওয়ার ইচ্ছা শক্তিই দুলাল ফরাজীকে আজকের অবস্থানে এনেছেন। আমরা দুলালের আরও সফলতা কামনা করি।
করোনা মুক্তির প্রার্থনায় বাগেরহাটে জন্মাষ্টমী পালিত
বাগেরহাট :: বাগেরহাটে করোনা মুক্তির প্রার্থনার মধ্যদিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব ঘরোয়া আয়োজনে পালিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বাগেরহাট শালতলাস্থ কেন্দ্রীয় শ্রীশ্রী হরিসভা মন্দির প্রাঙ্গনে মঙ্গলদ্বীপ প্রজ্জলন, সমবেত প্রার্থনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়।
হিন্দু কল্যান ট্রাস্ট ও পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে পৃথক এ অনুষ্টানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ। সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোছাব্বেরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত আলোচনা সভায় সন্মানিত অতিথি ছিলেন, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, ডিডিএলজি দেব প্রসাদ পাল, আওয়ামীলীগ নেতা ফিরোজুল ইসলাম, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায়, সম্পাদক অবনিশ চক্রবর্ত্তী সোনা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিবপ্রসাদ ঘোষ, সম্পাদক এ্যাড:মিলন ব্যানার্জী, সদর থানার ওসি মাহাতাব উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর তানিয়া খাতুন, প্রধান শিক্ষিকা ঝিমি মন্ডল, মধু দাম, স্বপন কুমার।
অনুষ্টান সঞ্চালনা করেন, ক্যাব সভাপতি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি বাবুল সরদার। এদিন বিকেলে গীতা পাঠ প্রতিযোগীতা ও সন্ধ্যায় মন্দিরে মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।