সোমবার ● ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » বেনাপোল-চৌগাছা ট্রাজেডি : ৯ শিশুর করুণ মৃত্যুর দুই বছর
বেনাপোল-চৌগাছা ট্রাজেডি : ৯ শিশুর করুণ মৃত্যুর দুই বছর
বেনাপোল প্রতিনিধি :: (১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৬: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.০০মিঃ) আজ বেনাাপোল-চৌগাছা ট্রাজেডির দুই বছর৷ ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পিকনিকের বাসউল্টে চৌগাছায় ৯ জন কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু হয়৷ এ দিনে যশোরের চৌগাছার ঝাউতলায় ভয়াল বাস দুর্ঘটনা ঘটে৷ এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা স্মৃতির পটে আজো অমলিন হয়ে আছে৷
২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দিন ছিল শনিবার৷ শার্শার বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ দিন পিকনিক ছিল৷ অস্থায়ী সরকার গঠন ও শপথের স্মৃতি বিজড়িত মেহেরপুরের মুজিবনগর তাদের পিকনিক স্পট৷ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ দিন ভোরে ৩টি বাসযোগে শিক্ষা সফরে (পিকনিক) ঐতিহাসিক মুজিবনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়৷ এসএমসির নেতৃবৃন্দসহ শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী মিলে প্রায় সাড়ে ৩শ’ মানুষ এই পিকনিকে অংশ গ্রহণ করেন৷ আম্রকাননে সারাদিন হই হুল্লোড় আর বিরামহীন আনন্দে দিন কেটে যায় শিশু শিক্ষার্থীদের৷ সন্ধ্যায় বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওনা হয় বাস তিনটি৷ কিন্তু চৌগাছা এলাকায় সন্ধ্যার পরপরই ঝির ঝির বৃষ্টি শুরু হয়৷ বাসের মধ্যে শিশুদের নানা খুনসুটি আর আনন্দ চিত্কারের খেলা কিছুতেই যেন থামে না৷ বাস তিনটি মহেশপুর পার হয়ে চৌগাছা এলাকায় প্রবেশ করে৷ ঝাউতলা নামক স্থানে রাজ মেট্রো-জ- ১১-০০৮০ নাম্বারের বাসটি হঠাত্ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়৷ মুহুর্তের মধ্যে থেমে যায় আনন্দ ভরা খুসসুটি, হৈ-হুল্লড়৷ বাঁচাও বাঁচাও চিত্কার৷ শিক্ষার্থীরা যে যার মত করে বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে প্রাণ রক্ষা করে৷ উদ্ধারের জন্য কাঁদবিলা, চাঁনপাড়া গ্রামের লোকজন ছুটে যান৷
ততক্ষণে ঘটনাস্থলেই ৭ শিশুর করুণ মৃত্যু হয়৷ এছাড়া পরবর্তীতে আরো ২ শিশু চিকিত্সারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে৷ আহত হয় কমপক্ষে ৩০ জন৷ স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি করে৷ কান্নার আহাজারি, বেদনা আর যন্ত্রণার করুণ চিত্কারে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে৷ আশেপাশের মহিলারা ছুটে যান হাসপাতালে৷ পালন করেন মায়ের দায়িত্ব৷ শরিষার তেল মালিস, কাঁথা কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়া, হাত পা ম্যাসেজ করার মধ্য দিয়ে শিশুদের বাঁচানোর জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করেন তারা৷ এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মোট ৯ শিশু শিক্ষার্থী নিহত হয়৷ নিহতদের মধ্যে ৫ জন মেয়ে ও ৪ জন ছেলে শিক্ষার্থী৷
তারা হলো শার্শা উপজেলার বেনাপোলের ছোট আঁচড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর দুই মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মাসুরা আক্তার (৮) ও পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া আফরিন (১০), লোকমান হোসেনের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুজ্জামান সামসু (১০), মনির হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র একরামুল কবির (৯), ইমাম আলীর ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ইয়ানুর রহমান (৯), গাজিপুরর সেকেন্দার আলীর ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাবি্বর আহমেদ (৯), কানু মিয়ার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রুনা খাতুন (৯), ইউনুস আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মিথিলা খাতুন (১০), নামাজ গ্রাামের হাসান আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি খাতুন (১০)৷
আর গুরুতর আহতরা হলো নামাজ গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শিলা খাতুন (১০), আব্দুল মজিদের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হাজেরা খাতুন (১০), মোজাফ্ফর হোসনেরে ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র উপল (৯), ইসমাইল হোসেনের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ঐশি আক্তার (৯), ছোট আঁচড়া গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আরমান হোসেন (৮), হজরত আলী ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মতিয়ার রহমান (৮), গাজীপুর গ্রামের মনির হোসেনের চেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রিফাতুজ্জামান (৮), আনোয়ার হোসেনের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাবাচ্ছুম ইভা (৮) ও বাবু হোসেনে মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন (৮) ৷ উল্লেখিত নিহত ও আহতরা শার্শার বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী৷
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায় এ অঞ্চল৷ প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী শোকবার্তা দেন৷ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল, জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও ৫ মিনিট নীরবতা পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করে৷ নিহত সেই সব ছোট শিশুর রুহের মাগফিরাত কামনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের মত বেনাপোল, চৌগাছা, শার্শা ও ঝিকরগাছার সকল স্কুল কলেজগুলোতে সরকারিভাবে শোক আর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়৷ ভয়াবহ সেই সড়ক দুর্ঘটনা বেনাপোল, শার্শা ও চৌগাছার মানুষ আজো ভুলতে পারেননি৷ স্মৃতির পাতায় আজো অমলিন হয়ে আছে৷ এদিকে মর্মান্তিক এই ট্রাজেডির বিষয়ে বেনাপোলের মানুষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে বলে সূত্রে জানা গেছে৷