বৃহস্পতিবার ● ২০ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » নওগাঁ » কে হচ্ছেন নওগাঁ-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকার কান্ডারি
কে হচ্ছেন নওগাঁ-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকার কান্ডারি
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নওগাঁ জেলার আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। প্রায় এক যুগ শাসন করার পর গত ২৭ জুলাই এমপি ইসরাফিল আলম এর মৃত্যুর পর আসনটি শুন্য হয়। ইতোমধ্যে এ আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
এ আসনটিতে উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রায় দুই ডর্জন প্রার্থীর নাম শুনা যাচ্ছে। অপর দিকে কেন্দ্রের নির্দেশনার সাড়া পাবার অপেক্ষায় রয়েছেনে বিএনপি। তবে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও দুই উপজেলার জনগণের মাঝে। ইতি মধ্যেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এলাকার মানুষের মাঝে আলোচনার বিষয় নির্বাচন ও প্রার্থী। নওগাঁ-৬ এ আসনটিতে বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুই উপজেলার ১৬ টি ইউনিয় নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসনটিতে মোট ভোটার প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮ শ ৮৬ জন।
বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত এ আসন ২০০৮ সালে ভোট যুদ্ধে দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকার আমলের উন্নয়ন দাবি করে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় তারা। এক সময়ের আলোচিত বাংলা ভাইয়ের দুর্গ রক্তাত্ত জনপদ বলে পরিচিত এই দুই উপজেলা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে ও কর্মীসভার মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় ছাড়াও নির্বাচনী মাঠ দখলের চেষ্টা করছেন তারা।
জানা গেছে, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান ও ইসরাফিল আলম। গত ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দিয়ে কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে আবারো বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। বিএনপির অধীনে থাকা আসনটি ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে।
এক সময় এ দুই উপজেলা সর্বহারা ও জেএমবি এলাকা হিসেবে পরিচিত থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকটায় নিয়ন্ত্রনে ছিল। তবে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনের সময় কোন ধরনের প্রাণহানী চাননা এলাকাবাসী। কেহ যেন বিশৃংখলা করতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি রয়েছে বলে পুলিশ প্রশাসম সূত্রে জানাযায়।
উপ-নির্বাচনকে ঘিরে নওগাঁ-৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে প্রয়াত এমপি ইসরাফিল আলমের সহধর্মীনি সুলতানা পারভিন বিউটি, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আনোয়ার হোসেন হেলাল, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নওশের আলী, সাবেক সাংসদ ওহিদুর রহমান এর ছেলে নওগাঁ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ নির্বাহী সদস্য, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সিনিয়র উপদেষ্টা, রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আব্দুর রহমান, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরুল, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট পীযূষ কুমার সরকার, আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমান রাজার ছোট ভাই সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ ইসলাম বিপ্লব, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক শেখ মো: রফিকুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা যুবলীগ সভাপতি খোদাদাদ খাঁন পিটু, সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়, সাবেক ভিপি ও নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নাছিম আহমেদ, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আইন উপ-কমিটির সদস্য ড. মো: জাহেদুল হক জাহিদ, মেজর এসএম আব্দুল জলিল (অব:) সহ আরো অনেকের নাম শুনা যাচ্ছে। এদিকে কেন্দ্র থেকে সাড়া না পাওয়ায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম পাওয়া যায়নি।
আসন্ন উপ-নির্বাচন নিয়ে এলাকার সাধারণ তরুণ ও নতুন ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবা পেতে তারা বিশ্বাসী। যারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও সকল বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবেন এলাকার উন্নয়ন করবেন তাদেরকেই তারা ভোট দিবেন।
উল্লেখ্য, লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অবশেষে গত ২৭ জুলাই ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের এমপি ইসরাফিল আলম। তিন বারের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম।
১৯৬৬ সালে রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ইসরাফিল আলম নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্রম মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।