শুক্রবার ● ২১ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » ভোলায় বাধ ভেঙ্গে পানিবন্দি ৩০ হাজার মানুষ
ভোলায় বাধ ভেঙ্গে পানিবন্দি ৩০ হাজার মানুষ
খলিল উদ্দিন ফরিদ, ভোলা প্রতিনিধি :: ভোলার মেঘনা নদীতে অতি জোয়ারের চাপে প্রায় চার কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে ৪ উপজেলার অন্তত ২৫টি গ্রাম।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
দু’দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন বানভাসি মানুষ। পানিতে ঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও গভাদি পশু র হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু স্থানে।কেউ কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে। চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শুক্রবার (২১ আগস্ট) মেঘনার পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) ছিল ১১৪ সেন্টিমিটার। এতে আরেক দফায় তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, গত কয়েকদিন থেকেই ঝুঁকির মুখে ছিল ভোলার ইলিশা ইউনিয়নের মুরাদসফিউল্লা গ্রামের সাজিকান্দি পয়েন্টের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। মেঘনার পানি বিপৎসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই পয়েন্ট দিয়ে ভেঙে যায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি। এতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় লোকালয়।
বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ইলিশা ইউনিয়নের তিনটি গ্রামসহ জেলার উপকূলবর্তী ২৫টি গ্রামের মানুষ। জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় গত দু’দিন ধরে অনাহরে দিন কাটাচ্ছে তারা। অনেকেই তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পাচ্ছেন না। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।
ইলিশার পানিবন্দি এলাকার মিলন মাঝি বলেন, পানির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি, আমাদের পাশে কেউ দাড়ায়নি।এরকম অভিযোগ বানভাসি মানুষের।
এদিকে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায়র চরাঞ্চলসহ নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বেড়ীবাঁধ, কাঁচা ঘরবাড়ি, ঘের ও পুকুরের মাছসহ বিভিন্ন প্রকল্প ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন হয়েছে।
গতকয়েকদিনে অতিমাত্রা জোয়ারের পানির চাপে উপজেলার স্লুুইস গেট, হাজিকান্দি, কেয়ামূল্যাহ, গুরিন্দা ও মহেশখালী এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়া উপজেলার জন বসতিপূর্ণ চর মোজাম্মেল, চর জহিরউদ্দিন , চর নাসরিনসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ডুবে যায়। এতে কাঁচা ঘরবাড়ি, ঘেরের মাছ, রাস্তাঘাট ও আশ্রয়ন ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাটিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অপরদিকে মনপুরা উপজেলার নিন্মাঞ্চল ও কলাতলীর চরে জোয়রের পানিতে মাছের ঘের গবাদিপশুসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় একটি সুত্র জানিয়েছে। কলাতলী চরের বাসিন্দা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর জোয়ারের পানি বেশি হওয়ায় মাছের ঘের, ঘর বাড়ি ও গবাদিপশুসহ চরের বসবাসরত সাধারণ মানুষের অনেক ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ ও উজানের পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন জোয়ার হচ্ছে বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান।
তিনি বলেন, জোয়ারের পানির চাপে তিন উপজেলার চার কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ার নেমে গেলে ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে। বাঁধ সংস্কার করা হলে তখন আর মানুষের দুর্ভোগ থাকবে না।
এদিকে টেকসই বাঁধ মেরামতের মধ্য দিয়ে বানভাসি মানুষদের দুর্ভোগ লাগবের দাবি স্থানীয়দের।