শুক্রবার ● ২১ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাঙ্গুনিয়ায় কালভার্টের নিচ থেকে চা বিক্রেতার লাশ উদ্ধার
রাঙ্গুনিয়ায় কালভার্টের নিচ থেকে চা বিক্রেতার লাশ উদ্ধার
মাইকেল দাশ, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক প্রতিবন্ধী চা দোকানদারকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) রাতের অন্ধকারে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়।তার লাশ পুলিশ এসে কালভার্টের নিচ থেকে উদ্ধার করেন শুক্রবার সকালে।
তার নাম আবু জাফর (৩২)।সে ১৪ নং দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ খন্ডলিয়া পাড়ার নুরুচ্ছাফার একমাত্র ছেলে।তার পরিবারে স্ত্রী,এক ছেলে এক মেয়ে সহ তার মা বাবা রয়েছে।নিহত জাফরের ছেলে সাহেদ ৪র্থ শ্রেণীতে ও মেয়ে সাদিয়া ৩য় শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। এখন তার পরিবার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?তার দুই সন্তানের লেখাপড়ার ভবিষ্যত কি হবে এটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার পরিবারে।
জাফর বাঁশ,কাঠ দিয়ে এক মাস দশদিন আগে এই চায়ের দোকান দিয়ে ছিল।সে অল্প সময়ে সবার প্রিয় হয়ে পড়েন সিএনজি স্টেশনে। বাড়িতে কিংবা দোকানে কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ ও টাকা পয়সার লেনদেন ছিলনা বলে জানান তার পরিবার।তার বাবা নুরুচ্ছাফা বলেন, আমার ছেলে জাফর প্রতিবন্ধী হলেও পরিবারের উপার্জন ক্রম ব্যক্তি ছিল সে একজন।তবে কিছুদিন আগে পারুয়া সাহাব্দীনগর এলাকার অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সাথে রাজারহাট সিএনজি স্টেশনে কথা কাটাকাটি হয়েছিল।সেই ব্যক্তি চলে যাওয়ার সময় আমার ছেলেকে একটা কথা বলেছিল তুকে আমি দেখে নিব।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত জাফর শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। সে রাজার হাটের পশ্চিম মোড়ে ভাসমান একটি চায়ের দোকান করত। রাতে তার দোকানের দ্রব্য সামগ্রী পাশের একটি দোকানে রাখত। কিন্তু চার দিন যাবত ওই দোকানদার না থাকায় জাফর নিজেই তার ভাসমান দোকানে থাকতেন। আজ সকালে খবর আসে একটি কালভার্টের নিচে জাফরের লাশ পড়ে আছে। পরে আমরা গিয়ে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসি।
নিহত জাফরের স্ত্রী দিলুআরা বেগম জানান, এক মাস আগে তার স্বামীর সাথে মোবাইল সংক্রান্ত বিষয়ে এক অটোরিকশা (সিএনজি) চালক এবং সেখানে থাকা এক যাত্রীর সাথে কথা কাটিকাটি হয়। এ নিয়ে পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদে বিচারও হয়েছিল। তখন অটোরিকশায় থাকা ওই ব্যক্তি তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তার জের ধরেই এই হত্যাকান্ড হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আমার দুই সন্তান তারা এখনো ছোট। কিভাবে আমি সংসার চালাবো আমার জানা নেই। এসব বলতে বলতে বারবার মুর্চা যান তিনি।
নিহত আবু জাফরের সন্তানরা বলেন,তাদের পিতা ৪দিন ধরে বাড়িতে ঘুমাতে আসতো না দোকানে ঘুমাতো ৪দিনের মধ্যে বাবাকে কে বা কাহারা হত্যা করে পালিয়েছে।তাদের পিতার হত্যাকারীর মুল আসামিকে দ্রুত তদন্তপূর্বক আইনের আওতায় এনে বিচার চেয়েছেন।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ আহমদ তালুকদার বলেন,জাফর খুবই ভালো ছেলে ছিল কারো সাথে কোন দ্বন্দ ছিলনা। সে কারো সাথে ঝগড়া করার মত ছেলেও না।সে প্রতিবন্ধী হলেও কিন্তু পরিবারের উপার্জন ক্রম ব্যক্তি।
রাজারহাট সিএনজি স্টেশনের মোহাম্মদ বদরুস নামে এক চালক বলেন,জাফর একজন সাদা সিধে মানুষ। তবে সে প্রতিবন্ধী।তার চা দোকানে সবাই বসে চা খেত।সে খুব অল্প সময়ে সবার প্রিয় হয়ে পড়ে এই স্টেশনে।কারো সাথে ছিলনা তার ঝগড়া বিবাদ।তবে পারুয়ার সাহাব্দীনগর এলাকার একজন ব্যক্তির সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল।তখন ওই ব্যক্তি রাজারহাট সিএনজি স্টেশন থেকে চলে যাওয়ার সময় বলে তুকে আমি দেখে নিব।
আজ শুক্রবার (২১ আগস্ট) প্রতিবন্ধী জাফর হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম ও রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।তবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।