সোমবার ● ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » ‘বৃক্ষমানব’ আবুলের প্রথম অপারেশন শনিবার
‘বৃক্ষমানব’ আবুলের প্রথম অপারেশন শনিবার
অনলাইন ডেস্ক :: (১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৬: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪৬ মিঃ) ‘বৃক্ষমানব’ আবুলের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডাক্তার সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ‘ট্রি-ম্যান’ বা ‘বৃক্ষমানব’ খ্যাত আবুল বাজানদারের শরীরের বাড়তি অংশ অপসারণে আগামী শনিবার প্রথম পর্যায়ের অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা।
১৫ ফেব্রুয়ারী সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ওই বোর্ডের বৈঠক হয়। বৈঠকে আরো তিন জন চিকিৎসককে অর্ন্তভুক্ত করা সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরা হলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডাক্তার খুরশিদ আলম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার শহীদুল ইসলাম এবং চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার কবীর চৌধুরী।
৯ সদস্যের এ মেডিকেল বোর্ড আগামী শনিবার আবুল বাজানদানের শরীরের বাড়তি অংশ অপসারণে ‘প্রথম পর্যায়েরর অপারেশনে’ সহায়তা করবেন। আবুল ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা’ ভাইরাস-‘টেন’জনিত বিরল ধরনের চর্ম রোগে আক্রান্ত বিশ্বের তৃতীয় ব্যক্তি।
খুলনার পাইকগাছার ‘মুক্ত কমিশনারের’ ঘেরে বসবাসকারী আবুলকে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পরদিন বিরল এই রোগের চিকিৎসায় গঠন করা হয় ৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালামের নেতৃত্বে ওই মেডিকেল বোর্ড আবুলের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা-পর্যালোচনা করেন।
২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়া এবং ২০০৯ সালে রোমানিয়াতে আবুল বাজানদারের মতো ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস’-‘টেন’জনিত বিরল চর্ম রোগে দুই জনকে সনাক্ত করা হয়। ওই দুইজনেরও রোগ বৃত্তান্ত এবং চিকিৎসার ধরণ পর্যালোচনা করেই আবুলের চিকিৎসায় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা করছেন চিকিৎসকরা।
ইতোমধ্যে দেশেই বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে আবুল বাজানদারের রক্ত, টিস্যু ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। ওই সব পরীক্ষার রিপোর্টও সোমবার পর্যালোচনা করেন চিকিৎসকরা।
এছাড়াও বিশ্বখ্যাত গবেষকদের কাছে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে আবুল বাজানদারের রক্ত-টিস্যু ও শরীরের অন্যান্য নমুনা। গত বৃহস্পতিবার বিশ্বখ্যাত ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস এজেন্সলেস’র ‘নরিস কমপ্রিহ্যান্ডসিভ ক্যান্সার হাসপাতালে’ এসব পাঠানো হয়।
সেখানে দীর্ঘ বিশ বছর ধরে ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস’-‘টেন’ নিয়ে কাজ করছেন গবেষক উইলিয়াম মার্টিন কেস্ট। যিনি আবুল বাজানদারের শরীরের রক্ত ও অন্যান্য নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষন করবেন।
এর আগে তিনিই ইন্দোনেশীয় ও রোমানিয়াতে সনাক্ত দুই ‘বৃক্ষ মানবের’ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। যার ভিক্তিতে ঐ দুই ‘বৃক্ষ মানবের’ চিকিৎসা কার্যক্রমও চলেছে।
বার্ন ইউনিটের পরিচালক ও আবুল বাজানদারের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম বলেছেন, দেশের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার ফলাফল তারা আজ পর্যালোচনা করেছেন। এর ভিত্তিতেই আগামী শনিবার প্রাথমিক পর্যায়ে আবুলের শরীরের বাড়তি বিভিন্ন অংশ তারা অপসারণ করবেন। পর্যায়ক্রমে তার অন্যান্য চিকিৎসাও শুরু করবেন তারা।
বাবার সুস্থতায় অধীর অপেক্ষায় আবুলেল ৩ বছরের সন্তান:
আবুলের মা আদরি বেগম জানান, পনের বছর বয়সে আবুল বাজানদারের শরীরের ছোট্ট ছোট্ট আছিঁল দেখা দেয়। ক্রমেই তা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে আবুলের শরীরের হাত ও পায়ের নখ-বাড়তে বাড়তে প্রায় এক-দেড় ফুট ছাড়িয়ে বৃক্ষ মানবের আকার নেয়।
তিনি আরো জানান, গত পনের বছরে অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন তারা। তবে প্রথম দিকে হোমিও চিকিৎসার আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। গত বছরের শেষের দিকে খুলনার একটি বেসরকারী (গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে) হাসপাতালে তারা চিকিৎসার জন্য যান। তখন সেখানে সার্জারির এক চিকিৎসক আবুল বাজানদারের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তারপর থেকেই বৃক্ষ মানব দেশে-বিদেশে আলোচনায় আসে।
পেশায় ভ্যান চালক আাবুল গত কয়েক বছর ধরেই কার্যত অক্ষম হয়ে ঘরবন্দী। শরীরের যন্ত্রণা তীব্র ব্যথা ছাঁপিয়ে বৃক্ষ মানবের আকার তার জন্য চরম অসস্তিকর হয়ে উঠে। শরীরের বাড়তি অংশের ভারে হাঁটা-চলা- পোশাক পরতেও অক্ষম হয়ে পড়েন। নিজের ব্যক্তিগত কাজগুলোও অন্যের সহায়তা ছাড়া করতে পারেন না।
এক্ষেত্রে মা ছাড়াও স্ত্রী হালিমা হয়ে উঠেন তার একান্ত সহচর। এরই মধ্যে জন্ম নেয় একমাত্র সন্তান মেয়ে তাহেরা। ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণে বাবাকে উদ্বুদ্ধ করে তিন বছরের তাহেরা। তার বাবা আবারো সুস্থ্ হয়ে উঠবে এমন আশার কথা জানায়। সুত্র:বিডিলাইভ