সোমবার ● ২৪ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » দলই চা বাগান চালুসহ শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সড়ক অবরোধ
দলই চা বাগান চালুসহ শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সড়ক অবরোধ
এম এ কাদির চৌধুরী ফারহান, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তিমালিকানাধীন দলই চা বাগান দীর্ঘ ২৮দিন ধরে বন্ধ থাকা বাগান চালু এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা নিঃশর্ত প্রত্যাহার করার দাবিতে দলই বাগান থেকে প্রায় ১৮ কি:মি: পথ লংমার্চ করে কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা চত্বরে দেড়ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে চত্বরে চা শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
দলই চা বাগান বন্ধ থাকার পর গত ১৯ আগষ্ট বাগান চালু নিয়ে ম্যানেজমেন্টের সাথে শ্রমিকদের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ২২ আগস্ট স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, চা শ্রমিক নেতাসহ ১৩ জন চা শ্রমিকের নামে মারপিট, গাড়ি ভাঙ্গচুর ও টাকা ছিনাইয়ের অভিযোগে থানায় মামলা করেন দলই চা বাগান কোম্পানীর এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান। মামলার প্রতিবাদে ও বাগান বন্ধের প্রতিবাদে দলই চা বাগান শ্রমিকরা সোমবার বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ১৮ কি.মি. দূরে দলই চা বাগান শ্রমিকরা সোমবার সকাল ১০টায় পায়ে হেঁটে মিছিল সহযোগে দুপুরের পর কমলগঞ্জ উপজেলায় চৌমুহনায় পৌঁছায়। উপজেলা চৌমুহনায় নারী শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী কানুর নেতৃত্বে তিন শতাধিক শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। দেড়ঘন্টা সড়ক অবরোধের পর তারা উপজেলা প্রশাসনের সম্মুখে অবস্থান নেয়।
নারী চা শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী কানুসহ দলই চা বাগান শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে দলই চা বাগান মালিক পক্ষ শ্রমিকদের হয়রানি করতে চায়। চা বাগান কর্তৃপক্ষ বেআইনীভাবে গত ২৭ জুলাই বাগান বন্ধ করেছে। এটি কোনমতেই কাম্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে চা বাগান শ্রমিকরা অনাহার, অর্ধাহারে দিনযাপনের অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দলই চা বাগান চালুর দাবি জানান।
এদিকে গত ২৮ দিন যাবৎ কমলগঞ্জের দলই চা-বাগান বন্ধ। এরই ভেতর দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ নিয়ে থানায় যান চা-শ্রমিকরা। কিন্তু কমলগঞ্জ থানা কর্তৃপক্ষ মামলাটি নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে দলই চা-বাগান কর্তৃপক্ষের মামলা নিয়েছে পুলিশ। দলই চা বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক সেতু রায় বলেন, ‘এজিএম কর্তৃক দুই নারী চা-শ্রমিক লাঞ্চিত হয় গত ১৯ আগস্ট। আমরা মামলা দিতে যাই। কিন্তু, মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো পুলিশ বলেছে আমরা কারো মামলা নেবো না। এই বলে আমাদের ফেরত পাঠিয়েছে। অথচ শনিবার রাতে শুনলাম চা-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’
মামলার আরজি স‚ত্রে জানা যায়, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মধ্যস্থতায় দলই চা-বাগানে স্বাভাবিক কার্যক্রম ১৯ আগস্ট থেকে চালুর সিদ্ধান্ত হয়। দীর্ঘদিন পর দলই চা-বাগানের উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় সচল হওয়ায় তিনি (এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান) কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ১৯ আগস্ট সকাল ১১টায় তদারকি কাজে চা-বাগানে গিয়েছিলেন। সে সময় চা-বাগানের ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপকসহ বাগানের সব কর্মচারীর জুলাই মাসের বেতন ও মজুরি পরিশোধের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা নিয়ে যান তিনি। তখন মামলার সব আসামিরা লাঠি, লোহার রড নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে কোম্পানির জিপ গাড়ির গতিরোধ করে। সে সময় এক নম্বর আসামির নির্দেশে বাকি আসামিরা গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেন। আসামিরা তাকে জোরপ‚র্বক টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে জখম করে। আসামিরা গাড়িতে রাখা ব্যাগের ভেতর রাখা ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আসামিরা একটি নোহা মাইক্রোবাসে করে পালিয়ে যায়। পরে তিনিসহ আহতরা মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ফলে ঘটনার দুই দিন পর শনিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামি চা-শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে দলই চা-বাগানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এ মামলার বাদী খালেদ মঞ্জুর খান বাগানের দুই নারী চা-শ্রমিককে লাঞ্চিত করায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইট-পাটকেল মেরে জিপ গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে। এর চেয়ে বেশি কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখন যাতে অনাহারে থাকা চা-শ্রমিকদের অর্থ ও খাদ্য সহায়তা না দিতে হয়, সেজন্য ঘটনার দুই দিন পর পরিকল্পিতভাবে মামলা সাজিয়েছেন। অথচ ঘটনার পর লাঞ্চিত নারী চা-শ্রমিকরা কমলগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলেও থানা সে অভিযোগ গ্রহণ করেনি।’
তবে কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে কমলগঞ্জ থানার এসআই সিরাজুল ইসলামকে।’ শ্রমিকদের মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করে ওসি বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা। তারা অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’
কমলগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১৬টি দোকান ও ১টি বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
কমলগঞ্জ :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর এলাকার ঠাকুর বাজারে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ১৬টি দোকানঘর ও ১টি বসতবাড়ি ভস্মিভুত হয়েছে। সোমবার ২৪ আগস্ট ভোর ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির কারনে আগুনে পুড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অগ্নিকান্ডে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার ভোর ৫টায় ঠাকুরবাজারে একটি মুদি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন দেখে বাজার প্রহরী বাসুদেবপুর মসজিদের মোয়াজ্জিন আরজু মিয়া মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে বিষয়টি এলাকাবাসীকে অবহিত করেন। এলাকাবাসী এসে কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে কয়েকদফা ফোন করলে কেউ ফোন রিসিভ করেনি। মুঠোফোনে ফায়ার সার্ভিসের সাথে যোগযোগ করতে না পেরে স্থানীয় শুকুর মোল্লা নামে এক ব্যাক্তি প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ সাইকেলে অতিক্রম করে এসে অফিস থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের নিয়ে যান ঘটনাস্থলে। তবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় আধাঘন্টা অতিবাহিত করেও পানির পাম্প চালু করতে না পারায় আগুনের লেলিহান শিখা দ্রæত গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। পরে শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। অগ্নিকান্ডে নান্নু স্টোর, দেওয়ান চালের দোকান, সাহবাগ ধানের দোকান, মামনি কনফেকশনারি, শাহজালাল ভেরাটিজ স্টোর, কে এম মেডিকেল হল, জননী মেডিকেল সেন্টার, মহিউদ্দিন কম্পিউটার, হাসিম টি স্টল, নকুল সেলুন, মকসন স্টোর, বাছির ফার্নিচার, মহসিন ভেরাইটিজ স্টোর, চন্দন সেলুন, হাফিজ ভেরাইটিজ স্টোর, নজরুল মিয়ার গুদাম ঘর ও জুয়েল মিয়া’র বসত বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের এমন গাফিলতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে প্রায় ৩ শতাধিক এলাকাবাসী। আগুন নিয়ন্ত্রনের পর দীর্ঘসময় কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আটকে রাখে বিক্ষুদ্ধ জনতা। পরে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক এর আশ্বাসে উপজেলা মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সুব্রত দেবরায় সঞ্জয় এর মধ্যস্থতায় কমলগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটিকে ছেড়ে দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক, কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান, উপজেলা বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: জুয়েল আহমেদ, মুন্সিবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালিব তরফদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঠাকুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো: জইনউদ্দিন, ব্যবসায়ী মো: সালাউদ্দিন, রফিক মিয়া, আব্দুল্লা মিয়া, সাবেক মেম্বার মোবারক মিয়াসহ শতাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির কারণে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগুন লাগার পর থেকে কয়েকদফা ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিলেও তারা কেউ ফোন না ধরায় স্থানীয় শুকুর মোল্লা তাদেরকে অফিস থেকে গিয়ে নিয়ে আসেন। কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস যখন ঘটনাস্থলে পৌছায় তখন তিনটি দোকানে আগুন ছিলো। তাদের পানির পাম্প নষ্ট বলে দীর্ঘ আধাঘন্টা অতিবাহিত করে। পরে শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের গড়িমসির কারণে এত টাকার ক্ষতি হয়েছে। আগুনে পড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। তারা আসার পর যদি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করত তাহলে এত দোকান জ্বলত না। পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোই ছিলো তাদের শেষ সম্ভল। এই দোকানের আয় দিয়েই তাদের সংসার চলত। এখন তাদের পথে বসার উপক্রম। তারা এর সুষ্ট বিচার দাবি করেছেন। তাদের ক্ষয়ক্ষতি পুসিয়ে দেবার আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আজিজুল হক রাজন জানান, আমরা ঘটনার খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে এসে প্রায় একঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে পেরেছি। আমাদের আরো কিছুক্ষণ আগে জানালে আগুনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরো কমানো যেত।
কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের লিডার আব্দুল কাদির জানান, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের পানির পাম্পটি নষ্ট হওয়ায় কাজ করতে পারিনি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশেকুল হক জানান, ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির কারণে এই অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি তদন্তক্রমে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক এর সাথে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায় সে ব্যবস্থা করা হবে। আগুনের সূত্রপাত ও ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির কারন অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।