বুধবার ● ২৬ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাউজানে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় : ওসিসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা
রাউজানে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় : ওসিসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা
রাউজান প্রতিনিধি :: রাউজান থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেপায়েত উল্লাহ ও সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) সাইমুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আড়াই লাখ অর্থ আদায়ের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন কাঞ্চন চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি।
গত ২৪ আগষ্ট সোমবার চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে মামলাটি দায়ের হলে বাদী কাঞ্চন চৌধুরীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। বাদী কাঞ্চন রাউজান পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব গহিরা গ্রামের কুশ্বেরী এলাকার হরিদাশ চৌধুরীর ছেলে।
আসামিরা হলেন-রাউজান থানার সাবেক ওসি কেপায়েত উল্লাহ, রাউজান থানার সাবেক এসআই, বর্তমান ধানমন্ডি থানার এসআই সাইমুল ইসলাম, রাউজান পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মিলন চৌধুরীর ছেলে উত্তম চৌধুরী ও হরিমোহন ঘোষের ছেলে দিলিপ ঘোষ।
কাঞ্চন চৌধুরী বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর রাত ১১টায় চট্টগ্রাম নগরী হতে রাউজান পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত গ্রামের বাড়িতে যাই। ওই রাতের ১টায় পুলিশ হঠাৎ আমার বাড়ি ঘিরে ফেলে। ঘর থেকে পরিচয় জানতে চাইলে জানানো হয়, “আমি ওসি কেফায়েত উল্লাহ ও পুলিশ।” আমি বাইরে আসলে এসআই সাইমুল আমার মাথায় পিস্তল ধরেন। আমার বাসায় অস্ত্র আছে দাবি করে ওসি বাড়ি তল্লাশি করতে বলেন।’’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ তল্লাশির নামে আমার আলমারিতে থাকা মেয়ের বিয়ের জন্য জমি বিক্রির দুই লাখ টাকা, একটি চেইনসহ এক ভরী ১২ আনা স্বর্ণ নিয়ে যায়। সঙ্গে আমাকেও থানায় নিয়ে যায়।’
‘আমাকে নেওয়ার সময় আমার মেয়ে জানতে চায়, বাবাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? তখন পুলিশ বলে তোমার বাবার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নাও। তিনি আর ফিরে আসবেন না। পরদিন আমার স্ত্রী ও মেয়ে থানায় যায়। তখন এসআই সাইমুল রাতে ক্রসফায়ার দেবে বলে দুই লাখ টাকা চায়। তারা ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেবে বলে আর ছাড়েনি। অন্য একটি মামলায় আমাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়’, বলেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি।
কাঞ্চন চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি এসআই সাইমুলসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি।’
এ বিষয়ে রাউজান থানার সাবেক ওসি কেপায়েত উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে তিনি “বিহঙ্গ টিভিকে বলেন, ‘২০১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের ঊনসত্তর পাড়া গ্রামের গৌরি শংকর হাটের পশ্চিমে সিরাজ কলোনিতে গণপিটুনিতে রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের খান পাড়া এলাকার আমজু মিয়ার ছেলে মোকতার (২৮) এবং একই এলাকার কালু মিয়ার ছেলে সাইফুল (২৮) নামে দুই ডাকাত নিহত হন। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি দেশি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই ঘটনার মামলায় জড়িত আছে সন্দেহে কাঞ্চন চৌধুরীকে আটক করা হয়। কারণ কাঞ্চন চৌধুরী খারাপ প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধে রাউজান থানায় একাধিক মামলা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এসব মামলার কারণে তিনি এলাকা ছাড়া হলেও গণপিটুনিতে ডাকাত নিহতের ঘটনার দিন তিনি রাউজান ছিল। এ কারণে সন্দেহ ছিল। পরে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অস্ত্র মামলার দায় অব্যাহতি দেওয়া হয়।’
কেপায়েত উল্লাহ আরও বলেন, ‘তিনি পূর্বের মামলার কারণে এলাকায় থাকেন না। তার দুই মেয়ে টিউশনি করে সংসার চালান। আড়াই লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এই ধরনের কোনো লেনদেনের সাথে জড়িত নয়। আমার সংশ্লিষ্টতা পেলে আমি শাস্তি মেনে নিব।’