মঙ্গলবার ● ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » গাজীপুরে নার্সকে ডিবি পুলিশের মারধর:প্রতিবাদে চিকিত্সাসেবা বন্ধ
গাজীপুরে নার্সকে ডিবি পুলিশের মারধর:প্রতিবাদে চিকিত্সাসেবা বন্ধ
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৪৩ মিঃ) গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ (শতামেক) হাসপাতালে সন্দেহভাজন এক আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক সিনিয়র নার্সকে (ব্রাদার) বেধড়ক পিটিয়েছে গাজীপুরের ডিবি পুলিশ৷ প্রতিবাদে চিকিত্সা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে ডাক্তার ও নার্সরা৷ এ ঘটনায় গাজীপুর ডিবি পুলিশের এএসআই মুশফিকুর রহমান, কনস্টেবল আনোয়ার ও ফজলুকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷
আহত ব্রাদারের নাম আবুল ফজল (৩০)৷ গুরুতর আহত অবস্থায় রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ তিনি গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ (শতামেক) হাসপাতালের ডিপ্লোমা নার্স অ্যসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক৷
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ (শতামেক) হাসপাতালের ২য়, ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারি সম্মিলিত সমিতির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান ও আহত ব্রাদার আবুল ফজল জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যায়৷ এ সময় তারা গাজীপুর শহরের হাজীবাগের রানা নামে এক সন্দেহভাজন আসামিকে খুঁজতে থাকেন৷ রানা কৌশলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়৷ এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ডিবি পুলিশের সদস্যরা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স (ব্রাদার) আবুল ফজলকে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করে৷ আবুল ফজল বাইরে না আসতে চাইলে ডিবি সদস্যরা তাকে শার্টের কলার ধরে কিল ঘুষিসহ বেধড়ক মারধর করতে থাকেন৷ এবং পুলিশের গাড়ীতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে৷ পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিত্সক ও তার সহকর্মীরা এসে আবুল ফজলকে উদ্ধার করেন এবং চিকিত্সার জন্য রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন৷
ডিবি পুলিশ কর্তৃক হাসপাতালের সিনিয়র নার্স আহত হওয়ার প্রতিবাদে রাতেই হাসপাতালের চিকিত্সক নার্স ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা দায়ী পুলিশের বিচার দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং সিভিল সার্জনের বাসার সামনে গিয়ে অবস্থান ও কর্মবিরতি শুরু করেন৷
সমিতির সভাপতি হাবিব বলেন, দোষী ডিবি সদস্যদের বিচারের বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে৷
সিভিল সার্জন ডাঃ আলী হায়দার জানান, বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে জানানো হয়েছে৷ পরে রাত ২টার দিকে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আমির হোসেন হাসপাতালে এসে দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার আশ্বাস দেন৷
গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আমির হোসেন জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ (শতামেক) হাসপাতালের নার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল ফজলকে মারধর ও নার্সদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এএসআই মোশরাফিকুর রহমানসহ কয়েকজন কনস্টেবল৷
ডিবি পুলিশের এস আই মুসফিক দাবী করে বলেন, নার্স আবু ফজল আসামী পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে৷
খবর পেয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ হাসপাতালের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷ তিনি এ ঘটনায় সঙ্গে জড়িত ডিবি পুলিশের তিন সদস্যকে তাত্ক্ষণিক প্রত্যাহারের নিদের্শ প্রদান করেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন৷ পরে হাসপাতালের কর্মচারী ও নার্সরা সাময়িকভাবে তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন৷
এ ব্যাপারে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ (শতামেক) হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবদুস সালাম সরকার জানান, হাসপাতালের সিনিয়র নার্স আবুল ফজলকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ সুপারের আশ্বাসে নার্স ও কর্মচারীরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন৷ বর্তমানে হাসপাতালে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে৷