শুক্রবার ● ২৮ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » মহালছড়িতে বোনের বিরুদ্ধে বোনের জালিয়াতির অভিযোগ
মহালছড়িতে বোনের বিরুদ্ধে বোনের জালিয়াতির অভিযোগ
মিল্টন চাকমা, মহালছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়িতে শাহীনা আক্তার এর বিরুদ্ধে জমি ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন ছোট বোন চায়না আক্তার।
আজ ২৮ আগষ্ট শুক্রবার অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
চায়না আক্তার অভিযোগ করেন, তাঁর আপন বড় বোন শাহীনা আক্তার, ছোট ভাই আতাউর রহমান এবং ছোট বোন শামীমা আক্তার সুকৌশলে তাঁর কষ্টার্জিত জমানো টাকা ও ক্রয় কৃত জমির দলিল আত্মসাৎ সহ জমি দখল করে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, মহালছড়ি সদর ইউনিয়নের মহিলা সদস্য থাকা কালীন সময়ে তিনি মহালছড়ির কাটিংটিলা এলাকায় মিঠু মেম্বারের কাছ থেকে ০.৬৩ (তেষট্টি) শতক, লেমুছড়ির আবুল লিডারের কাছ থেকে ০.২৫ (পঁচিশ) শতক টিলা ভুমি ও খাগড়াছড়ির শালবন আদর্শ গ্রামে তাঁর নিজের আপন বড় বোন শাহীন আক্তার, পিতা - মৃত সরাফুল ইসলাম, মাতা নুরজাহান বেগমের কাছ থেকে ০.১৬ (ষোল) শতক ভুমি ক্রয় করেন।
২০০২ সালে চায়না আক্তারের বিবাহ জনিত কারণে তিনি শ্বশুর বাড়ি চলে যাওয়ার আগে তাঁর যাবতীয় ক্রয় কৃত জমির সমস্ত দলিলাদি বড় বোন শাহিনা আক্তার,( যিনি বর্তমানে মহালছড়ি উপজেলার আনসার ও ভিডিপি অফিসের প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন) এর নিকট আমানত হিসেবে জমা রাখেন।
বিয়ের পর তিনি তার খাগড়াছড়ি শালবন আদর্শ গ্রামে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য কিছু টাকা জমিয়ে বড় বোন শাহিনা আক্তারের সাথে পরামর্শ করেন এবং তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৩ মাসের জন্য ২ লক্ষ টাকা ধার নেন।
এরপর ৪ মাস পর বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করলে শাহিনা আক্তারের কাছে পাওনা টাকা দাবী করলে শাহিনা আক্তার টাকা ধার নেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে কোনো টাকা সে নেই নি বলে সাফ জানিয়ে দেই। এরপর থেকে শাহিন আক্তার, ছোট ভাই আতাউর রহমান, ছোট বোন শামীমা আক্তার সুকৌশলে চায়না আক্তারের টাকা ও ক্রয় কৃত জমির দলিল আত্মসাৎসহ জমি দখলের অভিযোগ করেন তিনি।
এসব প্রতারণা ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তার বৃদ্ধ মা ও ছোট ভাই আরিফুল ইসলামের বউকে ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শারিরীক নির্যাতন করে কোমর ভেংঙ্গে দেওয়ার ও অভিযোগ করেছেন তিনি।
এছাড়াও মহালছড়ির লেমুছড়ি এলাকায় আবুল লিডারের কাছ থেকে নেয়া ক্রয় কৃত জমি শাহিনা আক্তার মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে দখল করার জন্য আবুল লিডারের অসুস্থতার সুযোগে তাঁর কাছ থেকে খালি স্টাম্পের উপড় স্বাক্ষর নিয়ে জাল দলিল তৈরি করেন বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন। এবং উক্ত জাল দলিলের বলে উল্লেখিত জায়গা বিক্রি করে দেন বলেও তিনি সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেন। যার কারনে জমির দলিল উদ্ধার করার জন্য খাগড়াছড়ি সদর থানায় তিনি একটি জিডি ও মামলা করেন। যার জিডি নং ৭০০/২০১৯। মামলা এক বছর চলার পর বিজ্ঞ জজ চায়না আক্তারের পক্ষে রায় দিয়ে জমির মালিককে চায়না আক্তারকে পুনরায় দলিল লিখে দিতে পরামর্শ দেন। যার মূলে আবুল লিডার চায়না আক্তারকে পুনরায় দলিল লিখে দিয়ে শাহিনা আক্তারের প্রতারণা মূলক দলিল বাতিল বলে লিখিত আকারে ঘোষণা করেন বলে জানান।
এই জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে শাহিনা আক্তার তার দলবল নিয়ে চায়না আক্তার ও তার ছোট ভাই আরিফের উপর সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে প্রাণ নাশের হুমকি দেন বলে চায়না আক্তার অভিযোগ করেন। এই ব্যাপারে মহালছড়ি থানায় জিডি করা আছে বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, যার জিডি নং ৬৬১/১৯।
চায়না আক্তার আরো অভিযোগ করেন যে, তার বৃদ্ধ মা ও ছোট দুই ভাই শাহিনা আক্তারের অত্যাচারে জায়গা জমি বসত ভিটা সবকিছু হারানোর পথে। এছাড়াও শাহিনা আক্তার ও তার চক্র এই পর্যন্ত তার ৫ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি ও পঞ্চাশ লক্ষ টাকার জমির দলিল আত্মসাৎসহ জমি দখল করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এই ব্যাপারে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে তিনি উল্লেখিত প্রতারক ও জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন, ভুমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, দূর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন এর সাহায্যে জমি ও জমির দলিল উদ্ধার, জালিয়াতি ও প্রতারনার উপযুক্ত বিচার প্রাথর্না করেছেন।
চায়না আক্তার এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে শাহিনা আক্তারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপরোক্ত অভিযোগ গুলো মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, সে এনজিও চাকরি করে এত টাকা ও জমি কোথায় পেলো? আমার চাকরি জীবনে দীর্ঘ ১৭ বছর পর্যন্ত আমার কর্মস্থল বরকল ও নানিয়ারচর উপজেলাতে ছিলাম। তখন আমি চায়না আক্তারের টাকা ও জমি আত্মসাত করবোই বা কিভাবে? এ ব্যাপারে আগেও আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে কিন্তু কোন প্রমাণ সে দিতে পারেনি বলে জানান শাহিনা আক্তার।
জমির প্রকৃত মালিক বয়োবৃদ্ধ আবুল লিডারের সাথে সরাসরি কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিতর্কিত জায়গাটি তিনি চায়না আক্তারের কাছেই বিক্রি করেছিলেন।