মঙ্গলবার ● ১ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি আর নেই
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি আর নেই
অনলাইন ডেস্ক :: ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি আর নেই। ৩১ আগষ্ট সোমবার নয়াদিল্লির সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের পর তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রণব মুখার্জি। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮৪ বছর। তার মৃত্যুতে ৭ দিনের শোক ঘোষণা করেছে ভারত সরকার।
দিল্লির বাসভবনে গত ৯ আগস্ট পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান তিনি। এতে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধে। এরপর স্নায়ুঘটিত সমস্যা দেখা দেওয়ায় ১০ আগস্ট তাকে দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিনই অপারেশন হয় তার মাথায়। এর আগে থেকেই তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। তারপরও অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেন দিল্লির সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থা ছিল সঙ্কটজনক। ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাকে। কিন্তু ক্রমশই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন প্রণব মুখার্জি।
১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের বীরভূম জেলার মিরাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রণব মুখার্জি। ১৯৬৯ সালে মেদিনীপুর উপ-নির্বাচনে তার রাজনৈতিক উত্থান ঘটে। মেদিনীপুর উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন তিনি। এতেই ইন্দিরা গান্ধীর নজরে পড়েন তিনি। প্রণব মুখার্জিকে দলে যোগদান করান ইন্দিরা। সেই বছরই রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এর পরও ৪ বার রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন তিনি।
ইন্দিরাগান্ধীর হত্যার পর রাজীবের সঙ্গে মতানৈক্যের পর কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয় প্রণবকে। সেই সময় রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে একটি দল গঠন করেন তিনি। তবে তা তেমন সাফল্যের মুখ দেখেনি। ১৯৮৯ সালে ফের কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি।
১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধীর হত্যার পর কংগ্রেসে ফের সক্রিয় হন প্রণব। তাকে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও। পরে নরসিংহ রাওয়ের মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
১৯৮৫ সালে প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন প্রণব। ২০০০ সালে তাকে ফের এই পদ গ্রহণ করতে হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন তিনি। যদিও কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে রাজ্যের রাজনীতিতে উৎসাহ ছিল না প্রণব মুখার্জি। তার মন পড়ে থাকত দিল্লিতে।
২০০৪ সালে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আসন থেকে জয়লাভ করে প্রথমবার লোকসভায় যান প্রণব মুখার্জি। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৪ সালে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হবেন না বলে ঘোষণা করলে প্রণব মুখার্জি নাম নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়। যদিও শেষ মুহূর্তে মনমোহন সিংয়ের নাম ঘোষণা করেন সোনিয়া।
২০০৭ সাল একই ভাবে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রণব মুখার্জির নাম নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে জোর আলোচনা হয়। কিন্তু তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দিতে রাজি ছিলেন না মনমোহন সিং। ফলে সে যাত্রায় রাষ্ট্রপতি হওয়া হয়নি তার। মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অর্থ, প্রতিরক্ষা ও বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন প্রণব মুখার্জি। ২০১২ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর ঘোষণা করেন প্রণব। এর পর কংগ্রেসের তরফে রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার নাম প্রস্তাব করা হয়। ২০০১২ সালের ২৫ জুলাই প্রথম বাঙালি হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন প্রণব মুখার্জি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৯ সালে তাকে ভারতরত্নে ভূষিত করে কেন্দ্রীয় সরকার।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও কখনো দুর্নীতি স্পর্শ করেনি প্রণব মুখার্জিকে। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সময় দিল্লিতে বাঙালির অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা পাত্র ছিলেন।