মঙ্গলবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝুঁকিপুর্ন ভাবে চলছে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যাবসা : নিরব রয়েছে প্রসাশন
ঝুঁকিপুর্ন ভাবে চলছে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যাবসা : নিরব রয়েছে প্রসাশন
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের শরনখোলায় লাইসেন্স ও অগ্নি-নির্বাপক ব্যাবস্থা ছাড়াই অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ন ভাবে চলছে (এল পিজিসি) গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যাবসা। উপজেলা সদর ছাড়াও সুন্দরবন সংলগ্ন হাট বাজার গুলোতেও অনিরাপদ ভাবে প্রসাশনের চোখের সামনে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এ জ্বালানী। নিয়ম নিতীর তোয়াক্কা না করে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যাবসায়ীরা কেবল মাত্র একটি ট্রেড-লাইসেন্স নিয়েই চালাচ্ছে এ অবৈধ গ্যাস ব্যাবসা।
ব্যাঙের ছাতার মতো উপজেলার সর্বত্র অবৈধ গ্যাস ব্যাবসা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন সচেতন মহল। তাছাড়া অত্যন্ত খোলামেলা ভাবে গ্যাস বিক্রির ফলে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হচ্ছে ক্রেতা ,পথচারী ও শিক্ষার্থী সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের। নিয়ম বর্হিভুত গ্যাস ব্যাবসার ফলে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংঙ্কা করছেন তারা। এছাড়া অসাধু ব্যাবসায়ী চক্র সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে গ্যাস বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, লাইসেন্স ছাড়া উপজেলা সদরের রায়েন্দা , রাজৈর ও পাঁচরাস্তা এলাকার ব্যাবসায়ী সবুজ খলিফা, হুমায়ুন কবির, আলী হোসেন, আঃ রহিম গাজী , আলতাফ হোসেন , আকাদুল , সবুজ , সাইয়েদ হাওলাদার , ফজলুল হক জোমাদ্দার , মিন্টু মোল্লা , নারায়ন কর্মকার , ওলি মিয়া , নুর হোসেন , লোকমান হোসেন ,দুলাল , স্বপন , ওমর ফারুক , কামাল হাওলাদার , সাইফুল , আফজাল হাওলাদার , মজিবর তালুকদার , লতিফ হাওলাদার , শহিদুল ইসলাম, রিয়াদুল ইসলাম, ইব্রাহীম তালুকদার, মুন্না ও ফেরদৌসি সহ অনেক ব্যাবসায়ী অবৈধ গ্যাস ব্যাবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ।
অপরদিকে ,আমড়াগাছিয়া রাজাপুর, ছুটুখার বাজার ,পল্লীমঙ্গল , পহলান বাড়ী, খোন্তাকাটা, বানিয়াখালী, তাফালবাড়ী , চালিতাবুনিয়া, শরনখোলা, সোনাতলা , রসুলপুর ও বাংলা বাজার সহ সুন্দরবন সংলগ্ন মফস্বলের বিভিন্ন হাট বাজারেও কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়া দেদারছে গ্যাস বিক্রি করছেন ব্যাবসায়ীরা । চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মুদি, মনোহারী, কসমেটিস , পেট্রোল .মবিল, ওষুধ সহ ইলেট্রনিস্ক দোকানেও বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার । এক শ্রেনীর মুনোফা লোভী ব্যাবসায়ীরা সরকারী নিয়ম নিতীর প্রতি বৃদ্ধা আঙ্গুলী প্রদর্শন করে বছরের পর বছর এ অবৈধ গ্যাস ব্যাবসা চালালেও নির্বিকার রয়েছে প্রসাশন ।
উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের কয়েক জন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন ,গ্যাস ব্যাবসায়ীদের একটি চক্র সিন্ডিকেট করে সাধারনের কাছ থেকে অতিরিক্ত মুল্য হাতিয়ে নিচ্ছে । ১৮৮৪ সালের বিস্ফোরক আইন অনুযায়ী এলপিজিসি গ্যাস (রুলস) ২০০৪ এর ৬৯ ধারার (২) এর বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোন ভাবে গ্যাস মজুদ করা বা বিক্রি নিষিদ্ধ। এছাড়া একই বিধির (৭১) ধারা অনুসারে গ্যাস বিক্রির দোকান গুলোতে যথেষ্ট পরিমান অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম থাকতে হবে।
তবে, সচেতন মহল মনে করেন , স্থানীয় প্রসাশন সহ বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কোন অভিযান না থাকায় খোলা মেলা ভাবে অবৈধ ভাবে গ্যাসের রমরমা ব্যাবসা চালাচ্ছেন অসাধু ব্যাবসায়ীরা। তবে, অসাধু ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য প্রসাশন সহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল। এ ব্যাপারে রায়েন্দা বাজারের ব্যাবসায়ী গ্যাস বিক্রেতা মাওঃ এনামুল হক বলেন, আমার লাইসেন্স আছে। তবে , বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া গ্যাস বিক্রির কোন নিয়ম নাই। অবৈধ গ্যাস ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে কয়েক মাস পুর্বে আমি বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম।
কিন্ত তাতে কিছুই হয়নি। আসলে ব্যাবসায় এখন আর কোন নিতী মালা নেই। এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীনের মুঠোফোন একাধিক বার কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাগেরহাটে টিআর-কাবিখা প্রকল্পে হরিলুট
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের শরণখোলায় কাজের বিনিময় খাদ্যসহ টাকা উন্নয়ন কর্মসূচি (টিআর-কাবিখা) প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হরিলুটের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দু’দফায় (টিআর-কাবিখার) একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন গুলোর চেয়ারম্যান মেম্বার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অর্থ হরিলুটের প্রতিযোগীতা চালিয়েছেন। গৃহীত ওই প্রকল্পগুলোর কাজ ৩০ জুন ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অনেক প্রকল্প এখনো চলমান। কোথাও আবার সামান্য কাজ করে প্রকল্প সমাপ্তের পাশাপাশি কিছু প্রকল্প কাগজে-কলমে সমাপ্ত দেখানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ২০১৯-২০অর্থ বছরে ১২০টি প্যাকেজে অনুকুলে (টিআর) প্রকল্পে ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৫২২ টাকা এবং ৩২টি প্যাকেজের আওতায় কাবিখা প্রকল্পের জন্য ৩ শতাধিক মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয় ত্রাণ দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। উপজেলার চারটি ইউনয়নের ওসব প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তির সাথে যোগসাজশ করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তার মাটি ভরাট, রাস্তা সংস্কার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নসহ নানা প্রকল্পের অর্থ লুট-পাট করেছন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের তৎকালীন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের দায়সারা তদারকির কারণে সরকারের লাখ লাখ টাকাসহ বরাদ্দকৃত চালের অধিকাংই লোপাট করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাবিখা প্রকল্পে উপজেলার রাজাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য ৯ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ হলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নান্না মিয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। তবে দেখেছি বিদ্যালয় সংলগ্ন খাল খননের কিছু মাটি স্থানীয় এক ব্যক্তি ছিটিয়ে দিয়েছেন। অপরদিকে, চাল রায়েন্দা সিনিয়র মাদ্রাসার মাঠ ভরাটের জন্য ৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ হয়। কিন্তু মাঠে নামমাত্র বালু দিয়ে এক প্রকার দায় সেরেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া উত্তর সোনাতলা আনছার হাওলাদারের দোকান হতে গুচ্ছ গ্রামের পুকুর পর্যন্ত একটি রাস্তা সংস্কারর জন্য ১১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয়রা জানান, অতিরিক্ত কাঁদা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য গ্রামবাসীর নিকট থেকে কিছু চাঁদা তুলে রাস্তাটিতে সামান্য বালু ফেলে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, টিআর প্রকল্পে ৪০ হাজার ৫৪৯ টাকায় রায়েন্দা ইউনিয়নের কদমতলা এলাকার জামাল গাজীর ঘর পর্যন্ত একটি রাস্তার দুই পাশে মাটি ভরাট এবং ৬০ হাজার টাকায় ঝিলবুনিয়া এলাকার তোমেছ খানের বাড়ির কালভার্ট হতে হারুন খানের বাড়ির পুকুর পর্যন্ত রাস্তা ইট সলিংয়ের কথা থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ জামাল গাজী ও হারুন খানসহ ওই এলাকার কয়েকজন বলেন, সড়ক দুটিতে চলতি বছরে এ ধরণের কোন কাজ হয়নি। তাছাড়া উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের ভাসানী কিন্ডার গার্ডেনের অনুকুলে ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ পর্যন্ত আদৌও কোন টাকা পাননি বলে জানান, ওই স্কুলের শিক্ষক মোঃ ইলিয়াস হোসেন।
অপরদিকে, ৬০ হাজার ৫৩২ টাকায় ধানসাগর ইউনিয়নের ছুটুখার বাজার মসজিদের পাশের একটি রাস্তা পাইলিংয়ের নামমাত্র কাজ করে বাকী অর্থ হজম করা হয়েছে। এমনকি একই ইউনিয়নের পহলান বাড়ি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি (পিএসএফ) ৩০ হাজারের অধিক টাকায় মেরামতের নির্দেশ থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের পর ইতিমধ্যে তিন মাস অতিবাহিত হলেও ওই (পিএসএফটি) অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে, ধানসাগরের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মইনুল হোসেন টিপু বলেন, কোন ইউনিয়নে কি কাজ হয়েছে তা জানি না। আমার ইউনিয়নে আমি ২/৩টি প্রকল্পের কাজ নিজেই নিয়ম অনুসারেই করেছি। এছাড়া ছুটুখার বাজারের ওই প্রকল্পের সম্পুর্ণ টাকা এখনো পাইনি। তাই কিছু কাজ বাকি থাকলেও তা করে দেয়া হবে।
নাম গোপন রাখার শর্তে, উপজেলা আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন, উপজেলা জুড়ে (টিআর-কাবিখার অধিকাংশ প্রকল্পেই হরিলুটের ঘটনা ঘটেছে। প্রকল্পগুলো তদারকি করা যাদের দায়িত্ব ওই সকল কর্তা ব্যক্তিরা উধাসীন থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হরিলুটের ঘটনা ঘটে । কর্ম ক্ষেত্রে তারা দায়িত্ববান হলে সরকারের উন্নয়নের সুফল জনগণ ভোগ করতে পারবেন। তাছাড়া দুর্নীতির লাগাম টানা সম্ভভ নয়।
প্রকল্পের নানা অনিয়মের বিষয়ে শরণখোলা উপজেলার তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রনজিত কুমার সরকার মুঠোফোনে বলেন, আমি এখন আর ওই উপজেলার দায়িত্বে নেই। তবে, গৃহীত প্রকল্পের অধিকাংশ পরিদশর্ন করেছি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা যতটুকু কাজ করেছেন আমি তাদের ততটুকুর বিল দিয়েছি। এছাড়া কোন ঠিকাদার প্রকল্পের কাজ না করে থাকলে কিংম্বা অনিয়মের আশ্রয় নিলে সর্বোপরি তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদ্বয় দেখবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, কোন প্রকল্পের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাগেরহাটে পল্লীতে গরুর খাদ্যে দুর্বৃত্তদের আগুন
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের পল্লীতে শত্রুতাবসত কৃষক নূরুল হক হাওলাদার(৬০) এর খড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগ করেছে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানাগেছে, উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের বড়পরি গ্রামে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে কৃষক নূরুল হক হাওলাদারের পরিত্যক্ত বাড়িতে খড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগ করে ৩০ হাজার টাকার ক্ষতিস্বাধন করেছে প্রতিপক্ষ।
এ ঘটনায় ওই কৃষকের স্ত্রী বিউটি বেগম বাদি হয়ে একই গ্রামের প্রতিবেশী মৃত. আব্দুল কাদের ঘরামির ছেলে মনির ঘরামির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নূরুল হক হাওলাদার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, রাতে জাল তুলতে এসে দেখতে পাই আগুন জ¦লছে তাৎক্ষনিক ডাকচিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন এসে আগুন নিভানোর চেষ্টা করেন। এ সময় টচ লাইটের আলোতে মনির ঘরামিসহ ২-৩ জন লোক দৌড়ে পালিয়ে যায়। পূর্ব শত্রæতার জের ধরে আমার খড়ের গাদায় এ অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বছরের ৮টি গরুর গো-খাদ্য মিটিয়ে খড় বিক্রি করি প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এ ঘটনায় তিনি ন্যায় বিচারের জন্য উর্দ্ধতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ বিষয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। #