শুক্রবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি নারী গণধর্ষণের প্রতিবাদে বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি নারী গণধর্ষণের প্রতিবাদে বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি :: হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, খাগড়াছড়ি সদরের বলপিয়ে আদামে পাহাড়ি নারীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি ও পানছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)।
আজ শুক্রবার ২৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নীতি শোভা চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা।
অপরদিকে জেলার পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত মিছিল পরবর্তী সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য মিতালি চাকমার সভাপতিত্বে ও কবিতা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন লোগাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নিরঙ্গলতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সুর-মঙ্গল চাকমা ,পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক নিকেল চাকমা এবং ইউপিডিএফ সংগঠক সাইক্লোন চাকমা প্রমুখ।
পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত এসব সমাবেশে বক্তারা বলপিয়ে আদামে পাহাড়ি নারীকে গণধর্ষণ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেভাবে নারী-শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এদেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়নের অংশ হিসেবে দশকের পর দশক ধরে এ ধরনের ঘটনা জারি রেখেছে। বলপিয়ে আদামের গণধর্ষণের ঘটনাও তার কোন ব্যতিক্রম নয়।
বক্তারা বলেন, ঘটনার দুই দিন অতিক্রান্ত হলেও পুলিশ এখনো কোন অপরাধীকে গ্রেফতার করেনি। উপরন্তু জনগণ যাতে এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্ট করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যখনই পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হয় তখনই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও অপরাধীদের রক্ষা করতে মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট গোপন করা থেকে শুরু করে নানা টালবাহানা করা হয়। এর ফলে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা তো দূরের কথা তারা সহজেই রেহায় পেয়ে যায়। এসব কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে।
বক্তারা অবিলম্বে বলপিয়ে আদামে পাহাড়ি নারীকে গণধর্ষণ ও লুটপাটের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নারী ধর্ষণে রাষ্ট্রীয় মদদদান বন্ধ করা এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত গভীর রাতে (রাত ২:৩০টা) ৯ জনের একদল সেটেলার বাঙালি দা-ছুরিসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের পাশে ভিকটিম ওই নারীর বাড়িতে হানা দেয়। দুর্বৃত্তরা দরজা ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় তার মা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা ভুক্তভোগী নারী ও তার মা’সহ বুড়ো বাবাকে দড়ি দিয়ে বাঁধে। এরপর মা-বাবাকে আলাদা একটি রুমে দরজা বন্ধ করে রাখে। পরে ওই নারীকে আরেকটি রুমে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
দুর্বৃত্তরা বাড়ি থেকে ভিকটিমের মায়ের চোখের অপারেশনের জন্য গচ্ছিত রাখা নগদ ৮ হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন ও চার ভরি স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ভিকটিম নারীর মা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এখনো ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করেনি।
এদিকে, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ( পিসিপি ) দপ্তর সম্পাদক রজেন্টু চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারী ধর্ষণে রাষ্ট্রীয় মদদ বন্ধ কর, এই শ্লোগানে ও খাগড়াছড়ি সদরে বলপিয়ে আদামে ডাকাতি, লুটপাট ও গণধর্ষণের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবীতে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও শ্রমজীবী ফ্রন্ট।
আজ ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪ টায় মিছিলটি টিএসটি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে শেষ হয়।
মিছিল পূর্ববর্তী সমাবেশে পিসিপির দপ্তর সম্পাদক রজেন্টু চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন শ্রমজীবী ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা, কেন্দ্রীয় সদস্য রতন স্মৃতি চাকমা ও পিসিপি সভাপতি বিপুল চাকমা।
বক্তরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিগত কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে যেভাবে নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তার অংশ হিসেবে পরশু দিবাগত রাতে খাগড়াছড়িতে আবার গণধর্ষণের ঘটনা ঘটল। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া এই ধরনের সিরিজ অপরাধ ঘটানো সম্ভব নয়।
শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে বক্তরা বলেন, খোদ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ধর্ষণের পর অপরাধীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠে। তাই অপরাধীদের না ধরে, যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরকে নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের ঘটনার পর অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি ফলে নারী নিপীড়ন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ক্রমাগত বাড়ছে অভিহিত করে বক্তরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত যত ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে তাতে কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। এই বিচার না হওয়ার কারণে অপরাধীরা বারবার একই অপরাধ সংঘটিত করার সাহস পাচ্ছে । এর নেতিবাচক প্রভাব সমতলেও সমানভাবে পড়ছে।
১৯৯৬ সালে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা লে: ফেরদৌস কর্তৃক অপহরণের বিচার হলে অপরাধের তালিকা এত লম্বা হতো না। পরশু খাগড়াছড়ির ঘটনার বাদেও সম্প্রতি বান্দবানের লামা উপজেলায় এক পাহাড়ি ত্রুনী, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে এক স্কুল পড়ুয়া পাহাড়ি ছাত্রী , রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভুষনছড়া এলাকায় এক পাহাড়ী নারী, সাজেক ও পানছড়ির মরাটিলায় নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনটিই সেভাবে পত্র পত্রিকায় আসে নি। বরং প্রশাসন বরাবরই এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রচেষ্টা করে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
বক্তরা অভিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।