বুধবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » রামু ট্রাজেডির ৮ বছর আজ : এখনও হদিস নেই উত্তম বড়ুয়ার
রামু ট্রাজেডির ৮ বছর আজ : এখনও হদিস নেই উত্তম বড়ুয়ার
নয়ন বড়ুয়া, রাউজান (উত্তর) প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের রামু-উখিয়া-টেকনাফে বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে দুর্বৃত্তের সাম্প্রদায়িক হামলার ৮ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে কোরআন অবমাননাকর ছবি দেখাকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তরা কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে ধ্বংস,লুটপাট করে বৌদ্ধ বিহার ও বসতঘরে। রামু থেকে এর ধ্বংসযজ্ঞ ছড়িয়ে পড়ে উখিয়া, টেকনাফসহ চট্টগ্রামের পটিয়া পর্যন্ত। আর আতংকে ছিল বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে থাকা সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এক শ্রেণির ধর্মান্ধরা বৌদ্ধপল্লী ও বিহারে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই হামলা চালায়। সেই সময় পুড়ে যায় প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো সীমা বিহার সহ রামুর বহু বছরের পুরনো এসব বৌদ্ধ বিহার। হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয় আরও বৌদ্ধ বিহার এবং বসতঘরে। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে উখিয়া ও টেকনাফের আরও চারটি বৌদ্ধবিহারে হামলা হয়। পুড়ে যায় বিহারে থাকা হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ঘটনার পরপর সরকারের সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এক বছরের ব্যবধানে ক্ষতিগ্রস্ত বিহার এবং বসতবাড়ি সমূহ পুণঃনির্মাণ করা হয়। প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘুদের ধর্মালয় আক্রান্ত হচ্ছে, হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা সম্পত্তি জবর দখল। সব সরকারের আমলে, এমনকি সামরিক শাসকের সময়ও এই নীতিতে কোন পরিবর্তন হয় না। তবে সব সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় এক নয়। যদি একই হতো তাহলে যে ১০ ভাগের মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক আছে তাদেরও এদেশে থাকা অসম্ভব হতো। কিন্তু এই সব ঘটনা যারা ঘটায় সেইসব উগ্রবাদী সংখ্যাগুরু লোকদের সাজা খুব কমই হয়। যার জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিপীড়ন নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলেছ। ওরা যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিপীড়ন-নির্যাতনে পারদর্শী তা শুধু নয়, ওরা সমান পারদর্শী মিথ্যা বানোয়াট গুজব ছড়াতে।
সেই রকম এক মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্ম, পরিবারও প্যাগোডা উপাসনালয়ের ওপর যে আঘাত আনা হয়েছিল, তা ছিল অতি করুণ, বর্বর ও হৃদয়বিদারক। সেই হামলায় যারা অংশ নিয়েছে তাতে যা দেখা গেছে, দেশের স্বার্থে সরকারিদল আর বিরোধীদল একজোট হতে না পারলেও সেই হামলায় রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত সব এক জোট হয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্যাগোডাও বাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। সেইদিনও কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক বাঁধা দিয়েছিল, কিছু হয়েছিল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ব্যথায় সমব্যাথী। যেই উত্তম বড়ুয়ার ফেইসবুক আইডি নিয়ে গুজব ছড়িয়েছিল, সেই অভাগা ব্যাক্তি উত্তম বড়ুয়া সেইদিন থেকে এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ। তাঁর ভাগ্যে কি ঘটেছে এখন পর্যন্ত কেউ জানে না। তাঁর স্ত্রী, একমাত্র সন্তান ও আপনজনেরা আছে প্রতীক্ষায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তাদেরকে কতটা মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে, ভাবতেও বুকের ভিতর হাহাকার করে। বৌদ্ধপল্লী ট্রাজেডির কারণে রামুর হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে যে আস্থার সংকট হয়েছে তা সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত কাটবে না। এমন ঘটনা যাতে আর কোথাও না ঘটে সেজন্য দোষীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন ছিল, যা এখনও হয়ে ওঠেনি।