রবিবার ● ৪ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ইবি শিক্ষার্থী তিন্নির মৃত্যুতে অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন
ইবি শিক্ষার্থী তিন্নির মৃত্যুতে অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী উলফাত আরা তিন্নি হত্যার ঘটনায় শৈলকুপা পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে। ৩ অক্টোবর শনিবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন ঝিনাইদহের শেখপাড়া এলাকার বসন্তপুর গ্রামের মো. আমিরুল ইসলাম, মো নজরুল, মো লাবিব ও মো তন্ময়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মহসিন হোসেন। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিন্নির মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার রাতে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন তার মা হালিমা বেগম। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চার জনকে আটক করে। তবে মূল অভিযুক্ত তিন্নির সাবেদ দুলাভাই জামিরুল ইসলাম এখনও পলাতক। নির্যাতন করা হলে বৃহস্পতিবার নিজ কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী উলফাত আরা তিন্নির। নিহত তিন্নি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শৈলকুপা থানাধীন যোগীপাড়া গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফের মেয়ে। সেখানে স্থায়ী নিবাস হলেও বোন ও মাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে শেখপাড়া বাজার এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন তারা। এদিকে তিন্নির মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ইবি ক্যাম্পাস। শনিবার আসামীদের শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে ক্যাম্পাসের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
আমার তো সব শেষ! আমার আর বেঁচে থেকে কী লাভ?
ঝিনাইদহ :: বোনের সাবেক স্বামীর হাতে লাঞ্চিত হওয়ার পর মায়ের সঙ্গে শেষ কথা ছিল, ‘বাইরের লোক কেন আসবে আমার রুমে? আমারতো সব শেষ, বেঁচে থেকে কী লাভ?’ এরপর রাত ১২টার দিকে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতোকোত্তর উলফাত আরা তিন্নীর। ওই রাতে তিন্নীর সঙ্গে যা ঘটে, তা উঠে এসেছে তার মা ও বোনের কথায়। গণমাধ্যমকে শনিবার সেসব কথা জানান তারা। ঝিনাইদহের শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামে তিন্নীর বাড়ি। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিজের ঘর থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার হয়। মা হালিমা বেগম বলেন, ‘বৃহম্পতিবার তিন্নী এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া গিয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরে রাত ৮টার দিকে। এর কিছু সময় পর মেজো মেয়ে মিন্নীর তালাকপ্রাপ্ত স্বামী জামিরুল গোপনে তিন্নীর রুমে ঢোকে এবং খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। তিন্নী বাইরে থেকে এসে পোশাক বদল করে বাসার নিচ তলায় তার সঙ্গে দেখা করে, একটু বসে। এরপর ঘুমাতে তার রুমে যায়।’ তিন্নীর মা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরও বলেন, ‘এরপর তিন্নী বুঝতে পারে তার খাটের নিচে কেউ লুকিয়ে আছে। লোকটি খাটের নিচ থেকে বের হয়ে এক পর্যায়ে তিন্নীকে জাপটে ধরে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি, এসময় চিৎকার দেয় তিন্নী। লোকটি ছিল জামিরুল।’ হালিমা বেগম বলেন, ‘আমরা তখন বুঝতে পারি বাসার চারপাশে জামিরুলের অনেক সহযোগী এবং তারা আমাদের বলতে থাকে- কোনও হৈ চৈ করবি না। আজ সবাইকে মেরে ফেলবো।’ এর পরের ঘটনার বর্ণনা দেন তিন্নীর মেজো বোন মিন্নী। তিনি জানান, বোনের চিৎকারে তিনি ছুটে যান তিন্নীর রুমের সামনে। কিন্তু রুম ছিল ভেতর থেকে আটকানো। মিন্নী বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করে দরজার লক ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি সেখানে জামিরুল। তখনো তারা ধস্তাধাস্তি করছে। বাধা দিতে গেলে সে আমাকে মারতে আসে। আমি অন্য রুমে গিয়ে আত্মরক্ষা করি। এরপর অনেক সময় চলে তিন্নীর রুমে তা-ব। পরে রুম থেকে বের হয়ে আমাকে ও আমার মাকে খুঁজতে থাকে সে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীদের উপস্থিতি টের পেয়ে রাত ১১টার দিকে জামিরুল পালিয়ে যায়।’ মা হালিমা বেগম জানান, জামিরুল বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর তিন্নী নিচে তার রুমে আসে। ‘আমাকে সে প্রশ্ন করে- বাইরের লোক কেন আমার রুমে প্রবেশ করল মা? আমার তো সব শেষ! আমার আর বেঁচে থেকে কী লাভ? এই বলে সে নিজের রুমে চলে যায়। এরপর পর রাত ১২টার দিকে টের পাই তিন্নী রুমে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে’- বলেন মা হালিমা বেগম। এক প্রশ্নের জবাবে মিন্নী জানান, জামিরুল যখন তার স্বামী ছিলেন তখন এই বাড়িতে এলে ওই রুমেই থাকতেন এবং জামিরুল হয়তো ভেবেছিলেন এখনও তিনি (মিন্নী) ওই রুমেই থাকেন। মিন্নী বলেন, ‘আমাকে তুলে নিতে বা মেরে ফেলতে সে এ রুমে লুকিয়ে ছিল। তালাকের পর সে বিশ্বাস করেনি- আমার আবার বিয়ে হয়েছে। সে আমাকে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা চালাতে থাকে। আমার কাছ থেকে মেয়েকে সে জোর করে তার কাছে নিয়ে যায়। এ নিয়ে কয়েকবার তিন্নীর সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়।’ পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন তিন্নী। তিন্নীদের ভাই না থাকায় চাকরি পেয়ে পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন তিন্নী। কাঁদতে কাঁদতে তিন্নীর মা বলেন, ‘আমি আর কী নিয়ে থাকব। অনেক চেষ্টা করেছি তাকে বিয়ে দিতে। কিন্তু সে কোনো সময় রাজি হয়নি। শুধু বলতো, মা দোয়া করো আমি চাকরি পেয়ে সংসারের যেন হাল ধরতে পারি।’ ঝিনাইদহের শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইউসুফ আলীর মেয়ে তিন্নী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিন্নীর স্বজনদের অভিযোগ, তার বোনের সাবেক স্বামী শেখপাড়া গ্রামের কুনুরুদ্দীনের ছেলে জামিরুল ও তার তিন সহযোগী জোর করে তিন্নীদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এসময় তিন্নীর শোবার ঘরে ঢুকে তার শ্লীলতাহানি করায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক জামিরুল।
কালীগঞ্জে মা হলো মানসিক প্রতিবন্ধি, বাবা হয়নি কেউ
ঝিনাইদহ:: ২ অক্টোর শুক্রবার বিকেলে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন অজ্ঞাত মানসিক প্রতিবন্ধী এক নারী। শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে হাসপাতালে ছুটে যান ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। তিনি হাসপাতালেই অজ্ঞাত ওই নারীর নবজাতককে বুকে তুলে নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে অবগত হয়েছেন। বিষয়টির দেখভাল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খবর শুনে শুক্রবার রাতে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে নবজাতক ও নবজাতকটির মায়ের সকল চিকিৎসার খরচ জেলা প্রশাসন বহন করবে। এসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো অথ প্রদান করা হয়। মা ও সদ্যজাত নবজাতকের চিকিৎসার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এর আগে শুক্রবার সকালে প্রসব যন্ত্রনা শুরু হলে নিজ বাড়িতে আশ্রয় ও সেবাদানকারী উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামের দিনমজুর আমজাদ-ছাকিরন দম্পতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মিডিয়াকর্মিদের সহযোগীতায় কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকেল ৪ টার দিকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। কালীগঞ্জ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আফসানা পারভিন জানান, ভুমিষ্ঠ হওয়ার আগে স্বভাবিক না থাকায় একটি অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান বের করা হয়েছে। তবে মা ও নবজাতক এখন সুস্থ আছে। আনুমানিক ২২/২৩ বছরের পরিচয়হীন এক মানষিক প্রতিবন্ধি মহিলা উপজেলার কোলাবাজারে ঘোরাফেরা করতেন। নিজের নাম-পরিচয় কিছুই বলতে পারেন না। গত কয়েকদিন আগে পরিচয়হীন এই প্রতিবন্ধি অসুস্থ অবস্থায় ময়ধরপুর গ্রামের রাস্তার পাশে পড়ে ছিল। ওই রাতেই গ্রামের কয়েক জন অসুস্থ মেয়েটিকে নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। কিন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী দেখেই বললেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। এখন তার পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়া আর বিশ্রাম দরকার। দেয়া হয় প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা। এরপর বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এই অজ্ঞাত মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামের মৃত সালামত আলীর ছেলে দিনমজুর আমজাদ আলী।