বুধবার ● ৭ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » মানব পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেনা পুলিশ
মানব পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেনা পুলিশ
চট্টগ্রাম :: মানব পাচারের নামে ভারতে জিম্মি করে টাকা আদায় করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও অভিযুক্তের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচিতির কথা বলে পরে বৈঠকের সময় দিয়ে অপরাধীকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম হালিশহর থানার এসআই আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় হালিশহর থানার বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন (৫০) মোবাইল নাম্বার ০১৮১৮৩৭৫৭৪৪ , মো. শরীফ (৩০) মোবাইল নাম্বার ০১৮৮৬৯৯১৮৮১ , মো. খোকন (৩১) মোবাইল নাম্বার ০১৮১১১৮৩৮৮৩ গংরা সাধারণ মানুষকে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে হত্যার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে আসছে। এমনই এক চট্টগ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী ব্যক্তির সাথে লিখিত চুক্তি হয় যে, ভারত থেকে কানাডার ভিসা করিয়ে কানাডা পৌঁছার পর ১৫ লক্ষ টাকা মোঃ শরীফকে দিতে হবে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি ওদের কথায় সরল বিশ্বাসে ভারতে যায় এবং সেখানে শরীফের ভারতীয় এজেন্টের তত্ত্বাবধানে একটা হোটেলে থাকে । ভারতে যাওয়ার তিনদিন পর মোঃ আলাউদ্দীন গংদের ভারতীয় এজেন্টের এক সদস্য এসে বলে- কানাডার দূতাবাসে সাবমিট করার জন্য ফাইল রেডি হয়েছে, ফাইল আনার জন্য তাদের ভারতীয় ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটা বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথে ভুক্তভোগী ব্যক্তির মাথায় পিস্তল ধরে হাত-পা বেঁধে ৬/৭ জন ব্যক্তি মারধর শুরু করে এবং বলে যে ওদের কথা মতো না চললে ওরা হত্যা করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেবে। জিম্মি করার ৪/৫ দিন পর তারা ভুক্তভোগীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাড়িতে অভিভাবকের কাছে ফোন করে বলতে বাধ্য করে যে, সে কানাডায় পৌঁছে গেছে চুক্তি মোতাবেক টাকা গুলো যেন মোঃ শরীফকে দিয়ে আসে। ফোন পেয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন হালিশহর গিয়ে শরীফ,আলাউদ্দীন,খোকন গংদের ১৫ লাখ টাকা দিয়ে আসে যার প্রমাণ হিসেবে প্রতারকদের ভিডিও এবং লিখিত স্বীকারোক্তি আছে। টাকা পাওয়ার কয়দিন পর এক রাতে ভুক্তভোগীর চোখ বন্ধ করে গাড়িতে তুলে এবং রেলস্টেশনের সামনে ফেলে ওরা দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর ভুক্তভোগী ব্যক্তি বাংলাদেশে এসে দেখে মোঃ শরীফ সহ গংদের সবার ফোন বন্ধ। অনেক দিন পর মোঃ আলাউদ্দীন এবং মোঃ শরীফের খোঁজ ফেলে এরা লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, ওরা এক সপ্তাহের মধ্যে এখানে নেওয়া ১৫ লাখ এবং ভারতে ছিনিয়ে নেওয়া ইউএস ডলার এবং জিনিসপত্রের মূল্য বাবদ ৩ লাখ টাকা সহ মোট ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। একসপ্তাহ পর যোগাযোগ করলে দেখা যায় ওরা পূর্বের বাসা ছেড়ে সটকে পড়ে অন্যত্র চলে যায় । এরপর ভুক্তভোগী ব্যক্তি হালিশহর থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোন কিছুই করতে পারেনি। প্রায় দুই বছর পর প্রতারক মো. আলাউদ্দীনকে গতকাল মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) খোঁজ পাওয়া গেলে তাকে হালিশহর থানার এসআই আশরাফুল আলমের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে, এসআই আশরাফুল আলম প্রতারক মো. আলাউদ্দীনকে তাঁর পূর্ব পরিচিত দাবি করেন এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও তাকে আইনের আওতায় না এনে মিমাংসা করে দেবার কথা বলে সে নিজের জিম্মায় ছেড়ে দেয় এবং গতকাল মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭ টায় থানার বাহিরে একটা রেষ্টুরেন্টে বৈঠকের জন্য এসআই আশরাফুল আলম নিজেই স্থান ও সময় নির্ধারণ করেন এবং দুইপক্ষকে আসতে বলেন। নির্ধারিত সময়ে বাদি হাজির হলেও এসআই আশরাফুর আলমের জিম্মিতে থাকা বিবাদী প্রতারক মো. আলাউদ্দীন হাজির হননি। মো. আলাউদ্দীনকে হাজির না হওয়ার কারণ এসআই আশরাফুলের কাছে জানতে চাইলে ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেন। প্রতারক মোঃ আলাউদ্দীন নাকি উনাকে বলেছেন যে, আলাউদ্দিনের ভাগিনা আরেক প্রতারক মো. শরীফ যেহেতু চট্টগ্রামের বাহিরে আছে তাই তাকে ছাড়া বৈঠকে বসবেন না। আবার বলেন যে বৈঠকে আসলে প্রতারক মো. আলাউদ্দীন অপমানিত হওয়ার আশংকা করছেন, সেইজন্য আসছেন না বলে এসআই আশরাফুল আলমকে জানিয়েছেন । সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ থাকার পর এসআই আশরাফুল প্রতারক মো. আলাউদ্দীনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করেন । (মুক্তমত এ লেখাটির জন্য সম্পাদক দায়ী নয়)।