বুধবার ● ৭ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » “ভাই”বলে সম্বোধন করায় সাংবাদিকের উপর ক্ষেপে যান দিরাইয় উপজেলার ইউএনও শফি উল্লাহ
“ভাই”বলে সম্বোধন করায় সাংবাদিকের উপর ক্ষেপে যান দিরাইয় উপজেলার ইউএনও শফি উল্লাহ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগনজে একটি সংবাদের প্রয়োজনীয় তথ্য নেয়া শেষে কল কেটে দেয়ার সময় ‘স্যার’ না ডেকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করায় ওই সাংবাদিকের উপর বেজায় ক্ষেপেছেন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের দায়িত্বরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফি উল্লাহ।
আজ বুধবার ৭ অক্টোবর বিকেল ৩.৪৬ মিনিটে দিরাই উপজেলায় পরিবেশ ও হাওর ধ্বংসকারী প্লাস্টিকের ছাই দীর্ঘদিন ধরে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে; এ বিষয়ে ইউএনও শফি উল্লাকে ফোন দেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। পরিচয় দিয়ে বক্তব্য নিয়ে আসার পর ‘আচ্ছা ঠিক আছে, ধন্যবাদ ভাই’ বলে সাংবাদিক ফোন রাখেন।
পরে দু’মিনিটের মধ্যেই ৩.৪৭ মিনিটে (01730-331113) এই নাম্বারে ফোন ব্রেক করে ইউএনও শফি উল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন- ‘আপনি কোন পত্রিকায় কাজ করেন? (অথচ পূর্বেই এই প্রতিবেদক তার পরিচয় উপস্থাপন করেছিলেন)। উত্তরে প্রতিবেদক নিজে কর্মরত পত্রিকার নাম বলেন। পরে তিনি বলেন, ‘একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ইউএনও-কে ভাই ডাকতেছেন কেন?’ পরবর্তীতে ক্ষেপে গিয়ে শফি উল্লা আবারও বলেন, ‘ইউএনও-কে ভাই ডাকা যাবে না।’
তখন ওই প্রতিবেদক বলেন, ‘আমরা তো ডিসি সাহেবকেও শ্রদ্ধা রেখেই ভাই বলে সম্বোধন করি।’ তখন ইউএনও শফি উল্লা বলেন, ‘ডিসি সাহেবকে ডাকছেন- ডাকেন। কিন্তু আমাকে ভাই ডাকা যাবে না।’
এ ব্যাপারে ইউএনও শফি উল্লা’র সাথে রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার বলেন- ‘হয়তো এভাবে স্যার ডাকতে বলাটা ঠিক হয়নি। তবে তিনি (সাংবাদিক) তো আমার আত্মীয়ও না, পরিচিতও না। তাহলে ভাই ডাকবে কেন?’ এছাড়া এটা নিয়ে নিউজ করাটা কি ঠিক হচ্ছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন।
একজন সাংবাদিক তো আপনার অধিনস্থ কর্মচারি না; একজন মানুষ কিংবা দেশের নাগরিক হিসেবেই তো ভাই ডাকতে পারে, এখানে ভুল কোন জায়গায়; এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- ‘আপনারা অনেকেই আমার কথা রেকর্ড করেন। আমি এ ব্যপারে আর কথা বলতে চাই না।’
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন- এটা সম্পর্কের ব্যাপার। আমি তো সাংবাদিকদের সহকর্মীই মনে করি। আমরা তো কাউকে বলতে পারি না যে- আমাকে স্যার ডাকেন। এটা নিয়মের মধ্যেও পড়ে না। যাই হোক আমি বিষয়টা দেখছি’।
সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিকে জনগণ স্যার-ম্যাডাম সম্বোধন করবে নাকি প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণকে (যারা সকল ক্ষমতার উৎস) প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ স্যার সম্বোধন করবে? নাকি সংবিধানের কোথাও স্যার ডাকায় বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে? অবশ্যই নেই। যদি স্যার ডাকতে হয় তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিরাই ডাকবেন। এ বিষয়ে গত বছর একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীও কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুদক কার্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা চাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিরা সেবাগ্রহীতা নাগরিকদের ‘স্যার’ সম্বোধন করবেন, নাগরিকরা না।’