বৃহস্পতিবার ● ৮ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » কবি জীবনানন্দ দাশের ধানসিঁড়ি নদীর পাড়ের গাছ কেটে আত্মসাতের অভিযোগ
কবি জীবনানন্দ দাশের ধানসিঁড়ি নদীর পাড়ের গাছ কেটে আত্মসাতের অভিযোগ
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিবিজড়িত ধানসিঁড়ি নদীর যৌবন এখন শুধুই অতীত। যেমন অতীত কবি জীবনানন্দ দাশের রূপ-লাবণ্যের ধানসিঁড়ি। কবি বেঁচে থাকলে হয়তো আরও ব্যথিত হতেন তাঁর স্বপ্নের ধানসিঁড়ির এই হতশ্রী দেখে।
ঝালকাঠির চর ভাটারাকান্দায় কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিবিজড়িত ধানসিঁড়ি নদীর পাড়ের গাছ কেটে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগ ও স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানের উপর। তবে বন বিভাগ ও চেয়ারম্যান বলছেন কোন দূর্নীতি ছারাই আইন অনুযায়ী গাছ কাটা হয়েছে।
সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ধানসিঁড়ি নদীর ভেরিবাঁধের দুইপাশের সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের প্রায় ৬ হাজার গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কবি জীবনান্দদাশের ধানসিঁড়ি নদী খননের নামে নদীর দুই পাশের ৫ লক্ষাধিক টাকার সরকারি গাছ কেটে নেয়া হয়েছে । এমনকি মাটি খুঁড়ে গাছের গোড়া তুলে নিয়ে শেকড় মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।
ঝালকাঠি উপজেলা বন বিভাগ অফিস সূত্রে জানা গেছে,১-৮- ২০১২ অর্থ বছরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দক্ষিন চরভাটারাকান্দা ধানসিঁড়ি নদীর বাঁধে সাড়ে ৩ কিলোমিটার ধানসিঁড়ি নদীর ভেড়িবাঁধের দু’পাশে সামাজিক বনায়ন করেন দক্ষিন চরভাটারাকান্দা বনায়ন সুবিধাভোগী সমিতি। উপজেলা বন বিভাগ সমিতির পরিচালনা কমিটির সাথে দক্ষিন চরভাটারাকান্দা বনায়নের চুক্তি সম্পাদন করেন। চুক্তি সম্পাদনের পর এর আওতায় উপজেলা বন বিভাগের অর্থায়নে সমিতির উদ্যোগে ওই ভেরিবাঁধের দুই পাশে রেইনট্রি, মেহগনি, কড়ই, সহ ১০ হাজার চারা রোপণ করেন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ওই ভেরিবাঁেধর গাছ বিক্রির টাকা সুবিধাভোগী দ্বিতীয় পক্ষ শতকরা ৫৫ ভাগ, পাউবো (ভেড়িবাঁধের মালিক) শতকরা ২০ ভাগ, বন বিভাগ শতকরা ১০ ভাগ, পুনরায় সামাজিক বনায়নের জন্য শতকরা ১০ ভাগ, ইউপি পরিষদ শতকরা ৫ ভাগ পাবেন।
দক্ষিন চরভাটারাকান্দা বনায়ন সুবিধাভোগী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.লুৎফর হোসেনসহ সদস্যরা জানায়, এ সমিতির আওতায় স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ ৬১ জন সদস্য রয়েছে। যারা এই সামাজিক বনায়নের বড় অংশের মালিক। আমাদের না জানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান একে এম জাকির হোসাই ও সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলা ধানসিঁিড় নদী খননের সময় ভেড়িবাঁধ সড়কের ছোট-বড় কয়েক হাজার মেহগনি,রেন্ট্রি,কড়ই,শিশু,শালকাঠসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে গেছেন। খাল খননের বেকু মেশিন দিয়ে দুই পাড়ের বনায়ন উজার করে দিয়েছে। আমাদের কাছে জানায়নি ও কোন হিসেবও দেয়নি তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, কবি জীবনানন্দ দাসের ধানসিঁড়ি নদীর দুই পাশের ভেরিবাঁেধর কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে বনায়ন উজার করে দিয়েছে। উপজেলা বন কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব গাছ কেটে নিয়ে গেছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
এ ব্যাপারে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একে এম জাকির হোসেন বলেন, ধানসিঁড়ি নদীর দুই পাশের ভেরিবাঁেধর কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তন করা হয়েছে। কারন নদী খননের জন্য উক্ত গাছ গুলো কেটে ফেলা হয়েছে। আমরা স্থানিয়দের ও বনবিভাগের লোক নিয়ে কর্তনকৃত গাছ গুলো অপসারন করি। ধানসিঁড়ি নদীর দুই পাশের ভেরিবাঁেধর ৫থেকে ৬ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির মুঠো গাছ ছিলো। গাছ বিক্রি করে আত্মসাত করা অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন,গাছ বিক্রি করার মত ছিলোনা প্রায় গাছ গুলো ছিলো মুঠো গাছ।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা ভার প্রাপ্ত বন কর্মকর্তা, মোঃ জিয়াউর রহমান বাকলাই বলেন,আমরা ধানসিঁড়ি নদীর দুই পাশের ভেরিবাঁেধর ৭ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করি। ওখানে ঝালকাঠি ও রাজাপুরে তিনটি কমিটি করে দিয়ে ছিলাম সুবিধাভুগিদের। কিন্তু ধানসিঁড়ি নদীর খননের জন্য জেলা প্রশাসক থেকে আমাদের চিঠিদেওয়া হয়। নদী খননের জন্য বেকু মেশিন ব্যবহার কারা হবে। বেড়িবাঁধের কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তন করা হবে। আমরা করোনার মহামারির মধ্যে কোন লোকজন না পেয়ে এলাকার চেয়ারম্যানের সহায়তায় লোকজন দিয়ে গাছ গুলো অপসারন করি ও সে গুলো বিভিন্ন আকারে লট করে এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের জিম্মায় দিয়ে আসি।