সোমবার ● ১২ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ » সিলেটে পুলিশী নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু, প্রতিবাদে উত্তাল সিলেট
সিলেটে পুলিশী নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু, প্রতিবাদে উত্তাল সিলেট
সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদ (৩৪) নামের এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এ ঘটনায় রবিবার ১১ অক্টোবর দিবাগত রাত ২টার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করছেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
তবে এই ঘটনার শুরুতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করলেও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন তারা। তবে পুলিশ যেখানে গণপিটুনির কথা বলছে, সিটি করপোরেশনের সিসি টিভি ফুটেজে ওই এলাকায় এমন কোনও ঘটনার সত্যতা মেলেনি। স্থানীয় কাউন্সিলর জানান, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ৭টা পর্যন্ত কাষ্টঘর এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এসব ফুটেজে কোনো গণপিটুনির ঘটনা দেখা যায়নি। এমনকি এই সময়ে কাষ্টঘর এলাকায় পুলিশের কোনো টহলও দেখা যয়নি।
তিনি জানান, কাষ্টঘর এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। প্রাথমিকভাবে সিসি ক্যামেরা যাচাই করে ছিনতাইয়ের ঘটনা কিংবা গণপিটুনির কোনও ঘটনা ফুটেজে ধরা পড়েনি। এমনকি ওই এলাকায় এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েও এমন ঘটনার কোনও সত্যতা মেলেনি।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, পুলিশ হেফাজতেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে এটা ইতোমধ্যে প্রতীয়মান। তার পরিবারের দাবী, ভোর ৪টা ২০ মিনিটে রায়হান তার পিতাকে ফোন করেছিল। সে সময় সে ফাঁড়ি থেকে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের দাবী করা টাকা চেয়ে ফোন করেছিল। তাহলে নিশ্চয় এর আগে তার ওপর নির্যাতন হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে থেকে রায়হান ফোন দিয়েছে বিষয়টি পুলিশেরও জানা ছিল। এমনকি তার অবস্থান সম্পর্কেও সে পিতাকে জানায়। মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কাছে খোঁজ নিলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে।
এমনকি কাষ্টঘর এলাকাবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কেউই কথিত গনপিটুনী সম্পর্কে জানেন না। বরং অনেকেই উল্টো জিজ্ঞেস করতে থাকেন- কখন, কোথায় হয়েছে ছিনতাই, গণপিটুনি। গণপিটুনিতে কে মারা গেছে, কেনইবা মারা গেছে বা কোথায় ঘটেছে এই ঘটনা। ছিনতাইকারীকে ধরে গনপিটুনিতে দিলেতো স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানতেন। কিন্তু কোন ব্যবসায়ীই কাষ্টঘর এলাকায় এরকম ঘটনা ঘটতে দেখেননি।
পুলিশের দাবী , ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছিল নিহত রায়হান। গনপিটুনির সময় তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কিন্তু পরিবারের লোকজন শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছেন রায়হানকে নগরের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। এই নির্যাতনের ফলে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন স্বজনরা।
নিহত রায়হানের মামাতো ভাই আব্দুর রহমান জানান, রায়হানের পায়ে লাঠির একাধিক আঘাত ছিল। হাতের কয়েকটি নখ উল্টানো ছিল। তাকে পুলিশই নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার দাবি করছি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার জানান, নানা বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ইতোমধ্যে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তদন্ত করা হচ্ছে। সেই সাথে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়েও কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের একটি দল।
র্সশেষ অভিযুক্ত পুলিশের এস আই বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর ভুঁইয়াসহ ৪পুলিশ ক্লোজ করার খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশী নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু : সিলেট বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ সাময়িক বরখাস্ত চার, প্রত্যাহার তিন
সিলেট :: সিলেটে পুলিশী নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন।
উল্লেখ্য, গতকাল রবিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটের সময় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রায়হান উদ্দিন (৩৪) নামের এক যুবককে গুরুতর আহতাবস্থায় ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হান হাসপাতালে মারা যান। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাতের নখও উপড়ানো ছিল।
রায়হান উদ্দিন সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তার তিন মাসের এক মেয়ে রয়েছে। নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতো সে।
রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সে ছিনতাইকারী ছিল। নগরীর কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার পরিবার পুলিশের অভিযোগ অস্বীকার করে ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ তুলেন। এরপর পুলিশও আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। এর প্রেক্ষিতে সোমবার বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে, রবিবার দিবাগত রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার স্বামীকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে ১০ হাজার টাকা দাবি ও দাবিকৃত টাকা না পেয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ করেছেন।