রবিবার ● ১৮ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » নওগাঁ » ইউপি চেয়ারম্যান থেকে এমপি হেলাল : বিএনপির অর্ধদিবস হরতাল ঘোষনা
ইউপি চেয়ারম্যান থেকে এমপি হেলাল : বিএনপির অর্ধদিবস হরতাল ঘোষনা
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: ইউপি চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য হলেন আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন হেলাল। শনিবার নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আলহাজ্ব মো: আনোয়ার হোসেন হেলাল নৌকা প্রতিক নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১লাখ ৫হাজার ৫শত ২১টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির আলহাজ্ব শেখ মো: রেজাউল ইসলাম রেজু পেয়েছেন ৪হাজার ৬শত ৫টি ভোট। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী খন্দকার ইন্তেখাব আলম রুবেল আম প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ১হাজার ৮শত ১৬টি ভোট। এই প্রথম ইভিএমের মাধ্যমে সকাল ৯টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে টানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ৩৬.৪ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
অপরদিকে ফলাফল ঘোষনার পর জেলা বিএনপির উদ্যোগে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে প্রহসনের এই ভোট বাতিলের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তারা নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলায় অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেয়। এ সময় জেলা বিএনপির আহবায়ক মাস্টার হাফিজুর রহমান, সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, সাবেক সাধারন সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, সাবেক যুগ্ন-সম্পাদক শহিদুল ইসলাম টুকু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপনসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই ও রাণীনগর) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সকালে বেশি হলেও দুপুরের পর ছিল কম। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু। সকাল থেকে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি সকালে বেশি থাকলেও দুপুরের পর উপস্থিতি ছিলো কম। তবে ইভিএমে ভোট দেওয়ার আগ্রহ দেখা গেছে সাধারন ভোটারদের মাঝে। নতুন ও তরুন ভোটাররা তাদের জীবনের প্রথম ভোট ইভিএমের মাধ্যমে প্রদান করায় খুব খুশি।
দুপুর ১২টায় আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর জিএসউচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রটিতে ভোটারদের কোনো সারি নেই। কিছুক্ষণ পরপর একজন-দুইজন করে ভোটার ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২হাজার ৩৭৮জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৮০টি। যা মোট ভোটারের ১২ শতাংশের কিছু কম। ওই কেন্দ্রে ছয়টি বুথের কোনোটিতে বিএনপির এজেন্ট পাওয়া যায়নি। ওই কেন্দ্রের বাইরে আব্দুর কাদের নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন তিনি বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন।
প্রিজাইডিং অফিসার মোজাম্মেল হক জানান, সকালে বিএনপির এজেন্টরা তালিকা দিয়ে ভোট কক্ষে বসেছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তারা নিজেরাই চলে যান। তাদেরকে জোর বের করে দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। বিকেল ৩টায় আত্রাই উপজেলার আহসনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের ৮টি বুথে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৫৮টি। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩হাজার ৪৫৬জন। এই হিসেবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে ১৯শতাংশ।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টায় আত্রাই উপজেলার সদরের নাহার গার্ডেন মার্কেটে সংবাদ সম্মেলন করে নানা অনিয়মের অভিযোগে এই নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন উল্লেখ করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি প্রার্থী শেখ মো: রেজাউল ইসলাম রেজু। সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে দুই তিন দিন ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে আওয়ামী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটের দিন সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে বিএনপির সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেয় আওয়ামী প্রার্থীর লোকজন। তিনি আরও বলেন, ১০৪টি ভোটকেন্দ্রের প্রত্যেকটি বুথে ধানের শীষের এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল। ৯টার সময় ভোট শুরুর পর পরেই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা বিএনপির এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়। অনেক কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত এবং কোনো দল করে না এমন অনেক সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্র সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে বুথে প্রবেশ করলেও তার ভোটার পরিস্থিতি চিহ্নিত করার পর প্রতীকে নির্বাচনের আগেই তাদের বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগের এজেন্টরা পরে তারাই সুইচ টিপে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে দেন। এ ধরণের নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে এই নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন উল্লেখ করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী।
জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটার ৩লাখ ৬হাজার ৭২৫জন। ১০৪টি কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়াও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী খন্দকার ইন্তেখাব আলম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, ভোটের সুষ্ঠ পরিবেশের স্বার্থে ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীরা সার্বক্ষণিক মাঠে ছিলেন। এছাড়া প্রতিটি ভোট কেন্দ্র এবং ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আনছার বাহিনী মোতায়েন ছিলো। আর প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছেন। উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষনা করা হয়।