রবিবার ● ২৫ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সুন্দরবন উপকূলে টানা বর্ষণে পানিবন্দি অর্ধ-লক্ষাধিক মানুষ ভেসে গেছে প্রায় ১০ হাজার মৎস্য ঘের
সুন্দরবন উপকূলে টানা বর্ষণে পানিবন্দি অর্ধ-লক্ষাধিক মানুষ ভেসে গেছে প্রায় ১০ হাজার মৎস্য ঘের
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: সুন্দরবনের উপকূলে ভারি বর্ষণে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে হাজার হাজার মৎস্য ঘের ও পুকুর।এতে চাষীদের প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার প্রায় ৫০হাজার মানুষ পানি বন্দি রয়েছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারগুলো। পানি কমতে শুরু করলেও হাসি নেই মৎস্যচাষীদের মুখে, ঘেরের মাছ বের হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় ভারি বর্ষণে এই দূর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের মৎস্য চাষী রবিউল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার টানা বৃষ্টিতে আমার মাছের ঘের তলিয়ে আমার ঘেরের প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মাছ বের হয়ে গেছে। শুধু আমার নয় আমার এলাকার বিভিন্ন মানুষের ঘের ও পুকুর ডুবে গেছে।অনেক মাছ চাষী-ই নিঃস্ব হয়ে গেছে দাবি করেন তিনি।
শরণখোলা উপজেলার গোলবানু, মহিবুন্নাহার, ছাহেরা বেগম, হাওয়া বেগম, শাহিনুর বেগমসহ কয়েকজন বলেন, বৃষ্টিতে আমাদের থাকার ঘর, রান্না ঘর, গোয়াল ঘর সব ডুবে গেছে। দুই-দিন ধরে দোকান থেকে চিড়া, মুড়ি ও রুটি কিনে খেয়েছি। দ্রæত সময়েল মধ্যে পানি না নামলে আমাদের দুঃখের আর সীমা থাকবে না।
শরণখোলা উপজেলার রাজৈড় গ্রামের মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী সোহেল ফরাজী ও সোহবান শেখ বলেণ, এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছ ছেড়ে ছিলাম। কিছুদিন পরে মাছ বিক্রি করার ইচ্ছা ছিল। বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেল আমার।এখন কিভাবে চলবে জানি না।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমার উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আমরা পানিবন্দি মানুষদের সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিতে বাগেরহাটের ৯ হাজার ৭‘শ ৬১টি মৎস্য ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে চাষীদের প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তবে এই ক্ষতির পরিমান আরও বেশি বলে দাবি করেছেন বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, প্রত্যেকটি দূর্যোগেই বাগেরহাটের মৎস্য চাষীদের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু সরকারি হিসেবে এসব ক্ষতির পরিমান কম বলা হয়। এবারের বৃষ্টিতে বাগেরহাটের প্রায় ১৫ হাজার ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। চাষীদের ক্ষতি পোষাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ খালেদ কনক বলেন, অবিরাম বর্ষণে বাগেরহাটের ৯ হাজার ৭‘শ ৬১টি মৎস্য ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে চাষীদের প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাষীদের সাথে যোগাযোগ করছি। এই ক্ষতি পোষাতে চাষীদের প্রশিক্ষন ও সরকারি বিভিন্ন প্রনোদনার জন্য চেষ্টা করার কথা ব্যক্ত করেন তিনি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, অতিবর্ষণের কারণে বাগেরহাট জেলায় বরাবরের মত এবারও কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভাটির সময় আবার সেই পানি নেমেও গেছে। এতে কিছু মাছের ঘেরও ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে কি পরিমান মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমরা সেই তালিকা প্রস্তুতের কাজ করছি। দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার আমরা বিভিন্ন উপজেলায় পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলা গুলোতে খাদ্য শস্য প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।